নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা

চলতি দশকেই দক্ষিণ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ‘দখল করবে’ ডেঙ্গু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ | ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
চলতি দশকেই দক্ষিণ ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ‘দখল করবে’ ডেঙ্গু

চলতি দশকের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বড় হুমকি হয়ে উঠবে ডেঙ্গু। শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জেরেমি ফারার।

২০২৩ সালের মে মাসে ডব্লিউএইচওতে যোগ দেওয়া এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র- ইউরোপের-আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে গ্রীষ্মকাল দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাত বাড়ছে। আবহাওয়ার এই বৈশিষ্ট এডিস মশার বিস্তারের জন্য খুবই উপযোগী।’

‘আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রে গত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং প্রতি বছর তার হার বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এডিস মশার বিস্তারের কারণে সামনের বছরগুলোতে রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। আমার আশঙ্কা, চলতি দশকের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চল এবং আফ্রিকার বিভিন্ন নতুন অঞ্চল রীতিমতো দখল করে নেবে ডেঙ্গু।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কজনক হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। এই রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসটির একমাত্র বাহক এডিস মশা। এই মশার মাধ্যমেই একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায় এই ভাইরাস। উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এডিস মশার বিস্তারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

এক সময় এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যেত। ২০০০ সালের পর থেকে প্রায় সারা বছরই ডেঙ্গুর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে। ডব্লিউএইচও’র হিসেব অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রতি বছর গড়ে ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

চলতি বছর একক দেশ হিসেবে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে এক হাজারেরও বেশি মৃত্যু দেখেছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের এ দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ৪২ লাখ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে জেরেমি ফারার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা এই পরিসংখ্যানের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

ভিয়েতনামে আঠারো বছর ধরে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন এশীয় মৌসুমি রোগ নিয়ে কাজ করেছেন জেরেমি ফারার। করোনা মহামারির সময় ব্রিটেনের সরকারের ‘কোভিড ১৯ রেসপন্স কমিটির’ সদস্য ছিলেন তিনি, সেই সঙ্গে দাতব্য চিকিৎসা বিষয়ক বৈশ্বিক এনজিও ‘ওয়েলকাম’র সঙ্গেও যুক্ত তিনি।

রয়টার্সকে এই গবেষক বলেন, ‘আমাদের এখন ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক আলাপ-আলোচনা ও বৈশ্বিক সচেতনতা বাড়ানো উচিত। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই এক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। মহামারি আকারে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালগুলো যেন সেই বাড়তি চাপ নিতে পারে, সেজন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকেও প্রস্তুত করা প্রয়োজন।’

‘তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিন্তিত আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চল নিয়ে। ওই অঞ্চলের দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবার যে অবস্থা, তাতে ডেঙ্গু মহামারি শুরু হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

শেয়ার করুন