৫০ বছর বয়সের আগে হার্ট অ্যাটাকের জেরে মৃত্যুর ঘটনা এখন ঘটছে আকছার। এই ধরনের আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা আপনার পরিচিত থেকে শুরু করে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ সেলেবদের মধ্যেও ঘটছে অহরহ। কম বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে ডায়াবেটিস থেকে উচ্চ রক্তচাপ নানাবিধ কারণ দায়ী। তার সঙ্গে রয়েছে কোলেস্টেরল, যা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। ৫০-এর একটু আগে থেকে শুরু করা যাক। ৩০-এ পৌঁছনোর আগেই হাই-ট্রাইগ্লিসারাইড ও হাই-কোলেস্টেরলের উদাহরণ এ দেশে ভুরি-ভুরি। পশ্চিমী দেশগুলোর (মূলত ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা) নির্দেশিকা অনুযায়ী, এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের (bad cholesterol) মাত্রা 115 mg/dl-কেই ‘নরম্যাল’ বা ‘স্বাভাবিক’ বলা হয়। কিন্তু হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে গেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা 100 mg/dl-এর নীচে রাখতে হয়। অন্যদিকে, ট্রাইগ্লিসারাইড 150mg/dl পার করলেই আপনি বিপদসীমার মধ্যে পড়ে গেলেন। কিন্তু আপনার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি 120mg/dl থাকে, অথবা ট্রাইগ্লিসারাইড যদি 140mg/dl থাকে, তাহলে কি আপনার মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি কম?
এলডিএল বা লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (low-density lipoprotein) কিংবা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে তা জমে রক্তনালিতে। এতে রক্ত সঞ্চালনে বাধা তৈরি হয় এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এলডিএল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বিপদসীমা অতিক্রম করলেই সাবধান হতে বলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু ‘বিপদসীমা’ কোনটি? যেটা পশ্চিমী দেশগুলো মেনে চলে নাকি ভারতীয়দের লাইফস্টাইলের উপর যেটা নির্ভর করে?
কার্ডিওলজি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতীয়দের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা 100 mg/dl-এর নীচে রাখা দরকার। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভারতীয়দের মধ্যে এক দশক আগে হার্ট অ্যাটাক হয়। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম হার্ট অ্যাটাকের গড় বয়স ৫২ বছর। যেখানে পশ্চিমী দেশগুলোয় হার্ট অ্যাটাকের গড় বয়স ৬২ বছর। অথচ, আমাদের দেশে কোলেস্টেরল মাপা হয় পশ্চিমী দেশগুলোর নির্দেশিকা অনুযায়ী। কয়েক দশক ধরে করা একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পশ্চিমী দেশগুলোর তুলনায় ভারতীয়রা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের মুখোমুখি হন। এই হার্ট অ্যাটাকের পিছনে যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তেমনই জিনগত কারণও দায়ী। হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া বা হাই-লাইপোপ্রোটিনের মাত্রার মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে জেনেটিক্যালি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি থাকে। তাই এলডিএল-এর মাত্রা 115 mg/dl কম থাকলেই যে আপনি নিরাপদ, তা নয়।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের একটি দেশব্যাপী সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যার ২৪ শতাংশেরও বেশি মানুষের উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে। একাধিক গবেষণায় উঠে আসা তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ভারতীয়দের মধ্যে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি 120 থেকে 140 mg/dl থাকে, তাহলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে, পশ্চিমী দেশগুলোয় এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা 140 বা 150 এর উপরে উঠলে তবেই বাড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
যাঁদের মধ্যে কোনও হৃদরোগের ঝুঁকি নেই, সেই সব রোগীদের ক্ষেত্রে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে নন-এইচডিএল কোলেস্টেরল 130mg/dl-এর নীচে রাখতে হবে। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকে, সেক্ষেত্রে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা 100mg/dl-এর নীচে থাকা জরুরি। আর যদি আপনি ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে ভোগেন, সেক্ষেত্রে কোলেস্টেরলের মাত্রা 85mg/dl-এর নীচে রাখতে হবে। অন্যদিকে, ট্রাইগ্লিসারাইড 150mg/dl-এর নীচে হওয়া উচিত।
কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে ওষুধ খাওয়া জরুরি। কী ধরনের ওষুধ খাবেন সেটাও উল্লেখ রয়েছে পশ্চিমী নির্দেশিকায়। ড্রাগ থেরাপি হিসেবে স্ট্যানিনের সঙ্গে নন-স্ট্যানিন ড্রাগ, যেমন ezetimibe-এর মতো ওষুধের কথা উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ মাত্রার স্ট্যানিনের থেকে কম ডোজ়ের স্ট্যানিন ও নন-স্ট্যানিনের সংমিশ্রণ বাড়তি কোলেস্টেরলের জন্য অনেক বেশি কার্যকর ও সুরক্ষিত। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা এ দিক-ও দিক হলে শুধু ডায়েটের উপর ভরসা না রেখে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়াও জরুরি।