এইচ বি রিতা: অসীম বিশ্বের অদৃশ্য আওয়াজ যখন নীরবতার মধ্যে ভাসছে, তখন বুঝতে হবে আমরা মহাজগতের রহস্যময় পথে প্রবেশ করছি। জ্ঞানের আলো এবং অজ্ঞানের অন্ধকার পরস্পরকে ভেঙে দিয়ে অন্তর্মুখী অবস্থায় বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের গভীর জগৎ-এ আমরা আমাদের নিজের অসীম অবস্থানের সন্ধান করছি। অস্তিত্বের কাব্যে স্বর্গের নৈসর্গিক এবং নির্বাসনের অনুভূতির মাঝে একটি বিষয়বস্তুতার নাট্যগীতি রচনা করছি।
‘Metaphysics’ বাংলায় যাকে বলে অধিবিদ্যা। যে বিদ্যা জগৎ ও জীবনের নিহিত তত্ত্ব বা সত্তার স্বরূপ নির্ধারণের চেষ্টা করে, তাকে অধিবিদ্যা বা মেটাফিজিক্স বলে। মেটাফিজিক্স যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তার মধ্যে জ্ঞান অন্যতম। মেটাফিজিক্স পূর্বে পশ্চিমা দর্শনের একটি অংশ হিসেবেই প্রচলিত যার প্রবক্তা হিসাবে এরিস্টটলকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। মূলত মেটাফিজিক্স এর উৎপত্তি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাচীন গ্রীসে এর বিকাশ লাভ করে। ‘মেটা’ মানে কোনো কিছুর বাইরে। ‘ফিজিক্স’ মানে আমাদের ভৌত জগতকে বোঝায়। তাই মেটাফিজিক্স মানে আমাদের জগতের বাইরে যা কিছু বা সাধারণের বাইরে এমন কিছু। মেটাফিজিক্স সাধারণত বাস্তবতার মৌলিক প্রকৃতি, পরিবর্তন, সত্ত্বা, উপস্থিতি, সময়, সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জ্ঞানবিদ্যার (Epistemology) মাধ্যমে আলোচনা করা হয়। মেটাফিজিক্স ব্যক্তিগত উপলব্ধি, চিন্তাশক্তি, মানসিক চৈতন্য বা জ্ঞানের স্তরের ওপর নির্ভরশীল নয়, মেটাফিজিক্স ইন্দ্রিয়ের বাইরে সৃষ্টি ও জগতের মূল রূপ জানার চেষ্টা করে; এর প্রশ্নগুলি মূলত বাস্তবতার প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করে। যেমন-ঈশ্বর কি বিদ্যমান? আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটছে তা কি পূর্বনির্ধারিত? যদি তাই হয়, তাহলে কি আমাদের স্বাধীন পছন্দের অস্তিত্ব নেই? চেতনা কি মস্তিষ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ? এখানেই মেটাফিজিক্স এবং এপিস্টেমোলোজির(অধিবিদ্যা আর জ্ঞানবিদ্যা) সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। মেটাফিজিক্সকে বিচার বিশ্লেষণ ও যুক্তির সাহায্যে তার আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হয়। এবং এই আলোচনায় আমরা যে সমস্ত তথ্য পাই বা প্রতিষ্ঠা করি এবং সিদ্ধান্তে উপনিত হই, সেগুলোর যথার্থতা বিচার ও সমর্থনের জন্য মেটাফিজিক্সকে যুক্তিবিদ্যার(Logic) উপর নির্ভর করতে হয়। তাই অধিবিদ্যা বা মেটাফিজিক্স, দর্শন এবং অন্বেষণ সম্পর্কিত। বিজ্ঞান এবং গণিত সম্পর্কিত নয়। কেননা বিজ্ঞানের লক্ষ্য ভৌত জগত সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী করা, যেখানে মেটাফিজিক্সকে বৃহত্তর তাৎপর্য এবং সাধারণতার প্রশ্নগুলি অধ্যয়নের জন্য নেওয়া হয়৷
১৭৭৯ সালে কবি ও সাহিত্যিক সমালোচক স্যামুয়েল জনসন প্রথম ‘মেটাফিজিক্যাল পোয়েট’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। সপ্তদশ শতকে ইংলন্ডের একদল কবির লক্ষ্যই ছিল তখন নতুন পরীক্ষামূলক কাব্যচর্চা। মেটাফিজিক্যাল বা আধিবিদ্যামূলক কবিতা হলো অত্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক কবিতা যা সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত অহঙ্কার, অসঙ্গতিপূর্ণ চিত্র, চিন্তার জটিলতা-সূক্ষ্মতা, প্যারাডক্সের ঘন ঘন ব্যবহার এবং প্রায়শই ইচ্ছাকৃত কঠোরতা দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি এমন এক ধরনের কবিতা যা বিষয়বস্তুকে ভক্তিমূলক বা রহস্যময় করে তোলে, যেখানে প্রেম এবং মৃত্যুর মতো ধারণাগুলি প্রদর্শনের জন্য বুদ্ধি এবং যুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ ধর্ম, নৈতিকতা, প্রেম-তিনটি বিষয় যা প্রায়শই মেটাফিজিক্যাল কবিতায় অন্বেষণ করা হয়। কবিতার মধ্যে মেটাফিজিক্যাল কেন্দ্রগুলি মূলত বিমূর্ত ধারণা এবং দার্শনিক ধারণাগুলির অন্বেষণকে ঘিরে তৈরি হয়। মেটাফিজিক্যাল কবিতায় জটিল রূপক, দার্শনিক বা বৌদ্ধিক ধারণা, প্যারাডক্সিক্যাল ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের অবস্থার অন্বেষণ করে। অর্থাৎ মেটাফিজিক্স এমন প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে যা বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এটি একটি দার্শনিক উপায়ে বাস্তবতার প্রকৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মেটাফিজিক্যাল কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে ধরা হয় বুদ্ধি(intellect), অহঙ্কারের ব্যবহার(conceit), কূটাভাস এর ব্যবহার(Paradox), আধ্যাত্মিকতা(spirituality) এবং বাস্তব জগতের বিপরীতে বিমূর্ত ধারণা(abstract ideas versus the physical world)।
মেটাফিজিক্যাল কবিতায় বুদ্ধি বা ইনটিলেক্ট এর বড় একটি মাত্রা বা ব্যবহার থাকে। বুদ্ধি হল একজনের জ্ঞানের ক্ষমতা, যৌক্তিক বা বুদ্ধিমান চিন্তার অত্যন্ত দক্ষ ক্ষমতা। বুদ্ধিকে চিন্তা করার ক্ষমতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। দার্শনিকরা এই মানসিক গুণটিকে ‘ইচ্ছাকৃততা(Intentionality)’বলে অভিহিত করেছেন। ধারণার বিষয়বস্তুর সাথে চিন্তার সম্পর্কটি ইচ্ছাকৃততা হিসাবে পরিচিত। মেটাফিজিক্যাল কবিতায় বুদ্ধি প্রায়শই জটিল দার্শনিক বা মেটাফিজিক্যাল ধারণাগুলির বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানকে বোঝায়, যেমন অস্তিত্বের প্রকৃতি, আত্মা, ঈশ্বর, বা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে সম্পর্ক। এই বিমূর্ত ধারনাগুলিকে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য, বুদ্ধি, যুক্তিবিদ্যা এবং জটিল চিত্র ব্যবহার করে পাঠকদের চ্যালেঞ্জ করা হয়।
অতীতের মেটাফিজিক্যাল কবিরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা বা মানুষ বিশ্বকে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে পারে কিনা, সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি অনুসন্ধান করে গেছেন, এমনকি কবিরা সেই প্রশ্নগুলিকে হাস্যরসের সাথে বিবেচনা করেছেন।
মেটাফিজিক্যাল কবিতা প্রায়শই প্যারাডক্স এবং শ্লেষের সাথে সাধারণ বক্তৃতা মিশ্রিত করে। মেটাফিজিক্যাল কবিতা অন্যজাগতিক প্রশ্ন-সন্ধান করে যা প্রায়শই নৈতিকতার একটি উপ-প্রকারের জন্য নির্ধারিত হয়, যেমন-বর্ণনা, অহঙ্করণ, অসঙ্গতি, সম্পর্ক, শেষ পরিণতি বা অপ্রত্যাশিত অভিব্যক্তি যা কবিতা পাঠকদের হতবাক করতে পারে এবং তাদেরকে স্বাভাবিক অস্তিত্ব থেকে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে অবিসংবাদিতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
ম্যাটাফিজিক্যাল পোয়েম বা আধিবিদ্যামূলক কবিতার কথা এলেই স্মরণ করতে হয় জন ডানকে, যার কবিতায় এই সকল উপাদান বা বৈশিষ্ট্যগুলো খুব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন কবি জন ডান। ইংরেজি সাহিত্যে ম্যাটাফিজিক্যাল কবিতার জনক বলা হয় তাকে। ১৭এর শতকে জন ডানের ম্যাটাফিজিক্যাল কবিতায় থাকতো বয়সের বৌদ্ধিকতা এবং আধ্যাত্মিক সংকট, রেনেসাঁ থেকে আধুনিক যুগে কঠিন উত্তরণের প্রতিফলন। জন ডান, কবিকে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে প্রত্যাশা করতেন যিনি কেবল তার সংবেদনশীলতাই নয়, তার বুদ্ধি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং চতুরতাকে প্রদর্শন করেন। তার মতে, বুদ্ধি ছিল চিন্তার অস্বাভাবিক রূপক এবং পাঠককে অবাক করার জন্য আশ্চর্যজনকভাবে চিত্রগুলিকে সাজানোর ক্ষমতা।
মেটাফিজিক্যাল কবিতায় ‘কনসিট’ একটি জটিল এবং বর্ধিত রূপক যা দুটি দুরের আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন জিনিসের মধ্যে একটি বিস্তৃত তুলনা আঁকে এবং এদের মধ্যে লজিক্যাল কানেকশন দেখায়, যাতে থাকে আকাশ পাতাল তফাৎ। অর্থাৎ কনসিট বলতে বোঝায় সুদূরবিস্তৃত কাল্পনিক তুলনা। কাজেই, ‘Metaphysical Conceit’ কথাটির অর্থ হল-অতিপ্রাকৃত তুলনা। মেটাফিজিক্যাল কনসিইট একটি জটিল উচ্চতর সাহিত্যিক ডিভাইস যা ১৭-শতকের মেটাফিজিক্যাল কবিদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল, যেমন জন ডান, অ্যান্ড্রু মার্ভেল এবং জর্জ হারবার্ট। এটি একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিক দিক এবং বিশ্বের শারীরিক জিনিসগুলির মধ্যে সুদূর প্রসারি তুলনা করে এবং এটি সেই বর্ধিত রূপক, যা কখনও কখনও সমগ্র কবিতার মাধ্যমে স্থায়ী হতে পারে। অন্যদিকে, সাহিত্যিক ডিভাইসগুলি ছিল অতীতের কবিদের নির্দিষ্ট একটি কৌশল যা তাদেরকে নির্দিষ্ট পৃষ্ঠার বাইরে গিয়ে একটি গভীর অর্থ প্রকাশ করতে দিত। সাহিত্যিক ডিভাইসগুলি প্লট এবং চরিত্রগুলির পাশাপাশি কাজ করে একটি গল্পকে উন্নত করে এবং জীবন, সমাজ ও মানুষ হওয়ার অর্থ কী তা নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিফলন ঘটায়।
মেটাফিজিক্যাল কবিতায় কনসিট এর ব্যবহার আসলে কি-তা জানতে হলে জন ডানের ‘A Valediction: Forbiden Mourning’-কবিতাটি পড়া যায় যেখানে তিনি একটি কম্পাসের দুটি বিন্দুর সাথে দুই প্রেমিক-প্রেমিকাকে তুলনা করেছেন। এখানে তিনি দুটো বা একাধিক জিনিস বা মানুষকে একই রকম বলে দাবী করেছেন। একেই কনসিট বলা হয়। “A Valediction: Forbiden Mourning” (১৬৩৩), জন ডান দুই প্রেমিক-প্রেমিকাকে একটি কম্পাসের সাথে তুলনা করে, নিজেকে পেন্সিলের ডগা হিসাবে এবং তার প্রিয়তমকে কম্পাসের বিন্দু হিসাবে দেখেছেন। তিনি বোঝাচ্ছেন যে, তার প্রেমিকা স্থিতিশীল এবং সে যতই দূরে ঘুরে বেড়াক না কেন, সে সবসময় কাছেই থাকবে এবং তাকে(ডানকে) তার আসল জায়গায় ফিরিয়ে আনবে।
সমস্ত মেটাফিজিক্যাল কবিতায় সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত কনসিট এই ‘কম্পাস’ যা প্রেমীদের মধ্যে সম্পর্কের প্রতীক হিসাবেও উপস্থিত হয়েছে; দুটি পৃথক কিন্তু সংযুক্ত দেহ নিয়ে। ‘কম্পাস’র প্রতীক ডানের আরেকটি দৃষ্টান্ত যা ভালোবাসার মানুষদের মধ্যে সম্পর্ক এবং অনুভূতি বর্ণনা করতে সমুদ্রযাত্রা এবং বিজয়ের ভাষা ব্যবহার করে। কম্পাস নাবিকদের সমুদ্রে চলাচলে সহায়তা করে এবং রূপকভাবে, তারা প্রেমিকদের শারীরিক দূরত্ব বা অনুপস্থিতির দ্বারা পৃথক হলেও একটি সংযোগ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ কবিতায় বক্তা তার এবং তার প্রিয়জনের আত্মাকে একটি তথাকথিত টুইন কম্পাসের সাথে তুলনা করেছেন। টুইন কম্পাস, যাকে ড্রাফ্টসম্যানের কম্পাসও বলা হয়, এতে দুটি পা থাকে: একটি স্থির পা এবং একটি চলমান পা। কবিতায় তার প্রিয়তমা স্থির পা আর তিনি হলেন চলমান পা। কবিতা অনুসারে, তাদের মধ্যে সংযোগ, এবং প্রিয়জনের স্থিরতা, বক্তাকে তার থেকে আলাদা থাকাকালীন একটি নিখুঁত বৃত্তের সন্ধান করতে দেয়। যদিও কম্পাসের দুটি পা আলাদা হয়ে গেলে বক্তা কেবলমাত্র এই বৃত্তটিকে ট্রেস করতে পারেন এবং কম্পাসটি শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বৃত্তটি চিহ্নিত করার পরে দুটি পা আবারও একসাথে চাপানো যেতে পারে।
অনেক মেটাফিজিক্যাল কবিতার মতো এই কবিতাটিতেও একটি অদ্ভুত এবং চমৎকার ধারণা রয়েছে যার অর্থ বোঝার জন্য ব্যাপক ব্যাখ্যার প্রয়োজন। কনসিট-যদিও তার কবিতায় অত্যধিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা পাঠককে অস্বস্তিকর করে তোলতে পারে এবং সমালোচিত, তবে কবিতাটি কঠিন দার্শনিক সমস্যাগুলি উত্থাপন করার মাধ্যমে পাঠককে সে সম্পর্কে চিন্তা করতে বাধ্য করে।
মেটাফিজিক্যাল কবিতায় প্যারাডক্স এমন একটি বিবৃতি যাতে সাধারণ জ্ঞানের অভাব আছে বলে মনে হয় এবং এটি নিজেই বিরোধিতা করে। কিন্তু আপনি যখন বিবৃতিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করবেন, তখন এটি বাস্তবে সঠিক হতে পারে। অর্থাৎ, প্যারাডক্স হলো এমন এক বা একাধিক বাক্য বা ঘটনা যা পরস্পরের কন্ট্রাডিকশনারি।
একটি উদাহরণ দিই: Holy Sonnet 11’ (1633)-তে ডান বলেছেন, ‘Death, thou shalt die’-অর্থাৎ ‘মৃত্যু, তুমি মৃত্যুবরণ করবে।’ এটা যুক্তিসঙ্গত নয়। মৃত্যু কিভাবে মরবে? কিন্তু এটি মূলত জন ডানের দ্বারা মরণশীলতার মেটাফিজিক্যাল ধারণার একটি গভীর অন্বেষণ। ডান তার কবিতায় মৃত্যুকে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং ‘মৃত্যু তুমি মৃত্যুবরণ করবে’-এই ঘোষণা দিয়ে নশ্বর প্রাণীদের উপর তার ক্ষমতা জাহির করেছেন। এই বিবৃতিটি পরস্পরবিরোধী কারণ মৃত্যুকে সাধারণত চূড়ান্ত বিজয়ী এবং জীবন যাত্রার সমাপ্তি হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু ‘মৃত্যু’কে মরার আদেশ দিয়ে, ডান এর বৈধতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং এর দখল থেকে পালানোর সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। কবিতাটি ডানের খ্রিস্টান বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে, শারীরিক সীমার বাইরে অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতিকে ইঙ্গিত করে। কবিতাটি জানান দেয় যে মৃত্যু নিজেই তার সমাপ্তি ঘটাবে এবং ডান বলেন যে, মৃত্যুর বাইরেও একটি জগত রয়েছে যেখানে মৃত্যুর কোন ক্ষমতা নেই। এই ধারণা পুনরুত্থান এবং মৃত্যুর পরের জীবনের খ্রিস্টীয় শিক্ষার সাথে সারিবদ্ধ।
আরেকটি উদাহরণ হল-ধরুন কেউ আপনাকে বলল, “আমি মিথ্যা বলছি।” এখন আপনাকে সে যা বলছে তা যদি সত্য হয়, তাহলে সে মিথ্যা বলছে। সেক্ষেত্রে সে আপনাকে যা বলে তা মিথ্যা। অন্যদিকে, সে আপনাকে যা বলছে তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে সে মিথ্যা বলছে না, সেক্ষেত্রে সে আপনাকে যা বলে তা সত্য। অর্থাৎ, “আমি মিথ্যা বলছি” যদি সত্য হয় তবে এটি মিথ্যা এবং যদি এটি মিথ্যা হয় তবে এটি সত্য। এটি ক্রিটে বাস করা প্রাচীন গ্রীক দ্রষ্টা এপিমেনিডিস (খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী) দ্বারা প্রসিদ্ধ বিবৃতিতে কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যিনি বলেছিলেন, ‘সমস্ত ক্রিটানরা মিথ্যাবাদী।’
আরো সহজ করে দিই প্যারাডক্স এর বিষয়টা। ধরুন আপনি বললেন, ‘আমি জানি যে আমি কিছুই জানি না।’ এখানে আপনি ‘জানেন’ যে আপনি ‘কিছুই জানেন না।’ তাহলে আপনি ‘কিছুই জানেন না’-একথাটা ঠিক নয়। কারণ আপনি কিছু ‘জানেন।’ আবার যদি আপনি ‘কিছুই জানেন না’-কে সত্য ধরে নেই, তবে আপনি যে বললেন ‘আমি জানি’-এ কথাটা ঠিক নয়, এটি মিথ্যা। এখানেই যুক্তিগুলো পরস্পর বিরোধী।
ডানের ‘দ্য সান রাইজিং’ (১৬৩৩) এর আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক। প্রথম চার লাইনে তিনি লিখেছেন,
‘Busy old fool, unruly sun/ Why dost thou thus/
Through windows, and through curtains call on us?/ Must to thy motions lovers’ seasons run?’
কোনো একটি সীমানা বা গোপনীয়তা উপেক্ষা করে নিরলসভাবে জানালা এবং পর্দা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করা সূর্য ডান আর তার প্রেমিকাকে বাধা দেওয়ায়, তিনি সূর্যের প্রতি হতাশ হয়েছেন।
আবার একই কবিতায় তিনি ২৭- ৩০ লাইনে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতির পুনর্বিন্যাস করে দ্রুত তার হতাশাকে ঘুরিয়ে দিয়ে দিয়ে লিখেছেন,
‘Thine age asks ease, and since thy duties be/ To warm the world, that’s done in warming us/ Shine here to us, and thou art everywhere;/ This bed thy centre is, these walls, thy sphere.’
অর্থাৎ, তিনি বিষয়টিকে বুদ্ধিমত্তার সাথে পুনরায় ব্যাখ্যা করে বোঝান যে, ‘যেহেতু তোমার(সূর্যের) কাজ বিশ্বব্যাপী ঊষ্ণতা বজায় রাখা, তাই আমাদের ঊষ্ণতা দেয়াতেই তোমার সে কাজ পূর্ণ হয়ে গেছে কারণ পুরো পৃথিবীটাই আমাদের ঘিরেই সংকুচিত হয়ে রয়েছে। আমাদের আলো দিলেই তোমার সর্বত্র আলো দেয়া হবে। তুমি আমাদের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠো, এবং জেনে রাখো যে তুমি সর্বত্র আছো; এই বিছানা তোমার কেন্দ্র, এবং এই দেয়াল তোমার অক্ষরেখা।’
জন ডান, ‘দ্য সান রাইজিং, এর ২৭-৩০ লাইনে অনায়াসে তার যুক্তি পরিবর্তন করার জন্য বুদ্ধি ব্যবহার করেছেন। জটিল বুদ্ধি এবং দ্বন্দ্বের মাঝে বিমূর্ত ধারণাকে সুনিপুণ কৌশলে জীবন্ত করে পাঠকের সামনে আনতে পেরেছেন বলেই তিনি মেটাফিজিক্যাল কবি হিসাবে বিখ্যাত।
জীবনের সমস্ত কিছুর আন্তঃসম্পর্ক বোঝার জন্য স্পিরিচুয়্যাল বা আধ্যাত্মিক, নন-ফিজিক্যাল(যা দেখা যায় না স্পর্শ করা যায় না) দৃষ্টিকোণ থেকে মানব প্রকৃতি এবং অভিজ্ঞতার অধ্যয়নকে স্পিরিচুয়্যাল মেটাফিজিক্স বা আধ্যাত্মিক অধিবিদ্যা হিসাবে উল্লেখ করা হয়। আধ্যাত্মিক অধিবিদ্যাবিদরা বিশ্বাস করেন যে মানুষের অস্তিত্বের প্রকৃত প্রকৃতি হল একটি আন্তঃসম্পর্কিত বাস্তবতায় মন, শরীর এবং আত্মার একতা এবং এইভাবে বস্তুজগতকে ‘ফিজিক্যাল’ না হয়ে ‘নন-ফিজিক্যাল’ বা ‘আধ্যাত্মিক’ হিসাবে দেখা। স্পিরিচুয়্যাল মেটাফিজিক্স সাধারণত মানসিক বা শারীরিক সুস্থতার পথের অংশ হিসাবে বা ব্যক্তিগত পরিপূর্ণতা এবং বৃদ্ধি অর্জনের উপায় হিসাবে অনুসরণ করা হয়।
জন ডানের কবিতায় স্পিরিচুয়্যালিটি বা আধ্যাত্মিক ধারণা স্পষ্ট, তার একই কবিতা ‘A Valediction: Forbiden Mourning(লাইন ২১-২৪) তে তিনি লিখেছেন, ‘Our two souls therefore, which are one/ Though I must go, endure not yet/ A breach, but an expansion/
Like gold to airy thinness beat.’
জন ডান তার এ কবিতায় লাইনগুলিতে একটি স্পিরিচুয়্যাল ধারণা প্রকাশ করছেন যে, দুটি আত্মার মধ্যে একটি বন্ধন এত গভীর এবং শক্তিশালী যে শারীরিক বিচ্ছেদ এটিকে দুর্বল করতে পারে না; পরিবর্তে, এটি প্রসারিত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠে। যেভাবে সোনাকে পাতলা চাদরে পিটানো হলে প্রক্রিয়াকরণে সোনা আরও পরিশোধিত এবং মূল্যবান হয়ে ওঠে, ঠিক তেমন করেই তিনি তাদের আত্মার এই সম্প্রসারণকে তুলনা করেছেন। মূলত, ডান জোর দিয়ে বলছেন যে, তাদের ভালবাসা শারীরিক দূরত্ব অতিক্রম করেও দুর্বল বা ভেঙে যাওয়ার পরিবর্তে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে।
দুটি আত্মার মধ্যে প্রেমকে তিনি শারীরিক বিচ্ছেদ অতিক্রম করিয়ে একটি আধ্যাত্মিক মিলনে পরিণত করেছেন, যেখানে এই আধ্যাত্মিক সংযোগটি প্রেমের গভীর এবং শাশ্বত প্রকৃতির প্রতি ডানের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে এবং যা বস্তুজগতের বাইরে একটি উচ্চতর, অতীন্দ্রিয় বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে।
যদিও মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যা দর্শনের একটি শাখা যা বিমূর্ত ধারণা এবং বাস্তবতার মৌলিক নীতিগুলির সাথে কাজ করে, অন্যদিকে স্পিরিচুয়্যালিটি বা আধ্যাত্মিকতা আরও অভিজ্ঞতামূলক এবং ব্যক্তিগত কিছু। এটি প্রায়শই নিজের সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি, মহাবিশ্ব বা উচ্চতর শক্তির সাথে একজনের সম্পর্ক অন্বেষণ করা এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি, সম্প্রীতি এবং আলোকিততা খোঁজায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদিও মেটাফিজিক্স এবং স্পিরিচুয়্যালিটির মধ্যে ওভারল্যাপ থাকতে পারে, তবে উভয়ই বাস্তবতা এবং অস্তিত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে মৌলিক প্রশ্নগুলি অন্বেষণ করে। তারা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্নগুলির সাথে যোগাযোগ করে। মেটাফিজিক্স যখন তাত্ত্বিক এবং বিমূর্ত নীতিগুলির সাথে আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়, তখন স্পিরিচুয়্যালিটি প্রায়শই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মূল্য এবং শারীরিক জগতের বাইরের কিছুর সাথে সংযোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যা আমরা জন ডানের কবিতায় দেখতে পাই।
ভৌত জগত এবং বিমূর্ত ধারণার মধ্যে দ্বন্দ্বের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেয় জন ডানের ‘The Flea’ কবিতাটি। তিনি লিখেছেন,
‘This flea is you and I, and this
Our marriage bed, and marriage temple is…’
নিজের এবং তার প্রেমিকার মধ্যে শারীরিক মিলনের রূপক হিসাবে তিনি ‘ফ্লি’ অর্থাৎ ‘মাছি’কে ব্যবহার করছেন।
‘This flea is you and I’-লাইনে ডান বলতে চেয়েছেন যে, মাছিটি তাদের উভয়ের রক্ত পান করেছে এবং তাদের রক্ত ধারণ করেছে যা তাদের ভাগ করা শারীরিক সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করছে। ‘and this-Our marriage bed, and marriage temple is…’-এখানে ডান মাছির দেহকে একটি পবিত্র মন্দিরের মতো মনে করছেন যেখানে তাদের উভয়ের রক্তের মিলন হয়েছে এবং যা প্রতীকীভাবে পবিত্র। সামাজিক প্রথা এবং বিবাহপূর্ব ঘনিষ্ঠতার বিরুদ্ধে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, ডান যুক্তি দেন যে মাছির মধ্যে তাদের মিলন বিবাহে যোগদানের সমতুল্য। মোটকথা, নৈতিকতার প্রথাগত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য এবং সামাজিক বা ধর্মীয় সীমাবদ্ধতা নির্বিশেষে তাদের শারীরিক বন্ধনের তাৎপর্য জাহির করার জন্য ডান একটি প্রতীক হিসাবে ‘ফ্লি বা মাছি’কে ব্যবহার করছেন।
মেটাফিজিক্যাল কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল এই ধারণা যে শারীরিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক জগত পরস্পর সংযুক্ত। মেটাফিজিক্যাল কবিরা প্রায়ই শারীরিক ধারণা এবং বিমূর্ত ধারণার মধ্যে অস্বাভাবিক তুলনা চিত্রায়িত করেন।
অ্যান্ড্রু মার্ভেল, তার ‘দ্য ডেফিনিশন অফ লাভ(লাইন ২৫-২৮) কবিতায় লিখেছেন,
‘As lines, so loves oblique may wel/ lThemselves in every angle greet;/ But ours so trulyparallel/ Though infinite, can never meet.’
অর্থাৎ, প্রেমিকরা কখনই সত্যিকার ভাবে মিলিত হতে পারে না কারণ তারা সমান্তরাল রেখার অনুরূপ। পাশাপাশি, একে অপরের জন্য উপযুক্ত হলেএ একত্রিত হতে অক্ষম।
মার্ভেল একটি বিমূর্ত ধারণা (ভালোবাসা) চিত্রিত করেছেন এবং এটিকে একটি সুনির্দিষ্ট ধারণার (সমান্তরাল রেখা) সাথে সংযুক্ত করেছেন। অনেকটা জন ডানের ‘এ্য ভ্যালিডিকশন: ফরবিডেন মোর্নিং’এর ‘কম্পাস’ রূপক এর অনুরূপ। এটি একটি কঠিন দার্শনিক ধারণাকে বাস্তব কিছুর সাথে সংযুক্ত করে আলোচনার বিষয় করে তোলে।
মেটাফিজিক্স কবিতা বিশ্লেষণ করার একটি দুর্দান্ত উপায় হল চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি উভয় বিষয়ে কবিতাগুলি কীভাবে রচনা করা হয়েছে, তা বিবেচনা করা। জীবন পরিবর্তনকারী কিছু আবেগপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার কাছে না থাকে, তবে আপনি সম্ভবত ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বা মেটাফিজিক্যাল একটি কবিতা লিখতে পারবেন না কিংবা বুঝতেও পারবেন না। মেটাফিজিক্যাল কবিতা বুঝতে হলে পাঠককে উচ্চ জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে। কেউ যদি মেটাফিজিক্যাল কবিতা পড়ে একে ব্যাখ্যা করতে না পারেন, তাহলে বুঝতে হবে এই পাঠকেরও জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে।
‘প্রকৃত’ কবির সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর অভিমত রয়েছে। কেউ যদি মনে করেন যে, প্রকৃত কবি হতে হলে একজনকে মেটাফিজিক্স জানতে হবে এবং এ ধারায় লেখার দক্ষতা থাকতে হবে- তবে বলব, না। একজন প্রকৃত কবি হওয়ার জন্য মেটাফিজিক্স বা অধিবিদ্যার প্রয়োজন বাধ্যতামূলক নয়। একজন প্রকৃত কবি হতে হলে মেটাফিজিক্যাল কবিতা লিখতেই হবে-এমনটাও নয়। কবিতা একটি বৈচিত্র্যময় শিল্প ফর্ম যা ভিন্ন শৈলী, থিম এবং কৌশলগুলির বিস্তৃত পরিসরকে অন্তর্ভুক্ত করে। কিছু কবি হয়তো তাদের রচনায় মেটাফিজিক্স ধারণাগুলি অন্বেষণ করতে বেছে নিতে পারেন, আবার অন্যরা প্রকৃতি, প্রেম, সমাজ বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের থিমগুলির উপরও ফোকাস করতে পারেন। মেটাফিজিক্যাল কবিতা যা বিমূর্ত ধারণা এবং জটিল ধারণার বুদ্ধিবৃত্তিক অন্বেষণ দ্বারা চিহ্নিত, তা কবিতার বিস্তৃত বর্ণালীর মধ্যে কেবল একটি ধারা। ইতিহাসের বহু কবি এবং সমসাময়িক সময়ে অনেক কবিই মেটাফিজিক্স থিমগুলিতে না গিয়েই সাহিত্য জগতে প্রভাবশালী অবদান রেখেছেন। মূলত, একজন প্রকৃত কবিকে যা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হতে পারে, তা হল-লেখার বিষয়গত এবং বহুমুখীতা। এটি প্রায়শই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে এবং কবিতার মূল্যায়ন করার জন্য যে মানদণ্ড ব্যবহার করে তার উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হল-কবির কাজের সত্যতা, সৃজনশীলতা এবং আবেগের অনুরণন, তা মেটাফিজিক্যাল উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতেও পারে, নাও করতে পারে।
আমার লেখা একটি মেটাফিজিক্যাল অর্থাৎ অধিবিদ্যার কবিতা নিয়ে সমাপ্তি টানছি- “অনন্তকাল”
ওহ আমার চাঁদ সূর্য বায়ু পৃথিবী
তোমাদের ভালোবাসতে চুক্তি করেছি মহাশূন্যের
অন্তহীন বিস্তারের মতো
অবিরাম সময়ের সঙ্গে, আমি অপ্রতিহত
নির্জন আকাশে, শান্ত নদীর তীরে, আমি সততা
ও বিশ্বাসের অমৃত স্রোতে প্রবাহিত
এ যাত্রা আমার অনন্তকাল
ওহ আমার নদী, পাহাড়, তরু বৃক্ষ
সন্নিকটে মৃত্যুর অভিজ্ঞতায় পরখ করেছি সত্য
ঈশ্বর শ্বাশত, সময় বর্তমান, আত্মা অমর
মৃত্যুর পরের জীবন হয়ে উঠেছে রহস্যময়-আনন্দের
যেখানে আমার প্রেম হবে আগুন জ্বালা বেদনার সঙ্গে
কিংবা অদৃশ্য আলোয় আমি হয়ে উঠবো সৃষ্টির-
অদ্বিতীয় সৌন্দর্য
পাহাড়ের চূড়া পার করে অসীম অধ্যাত্মে
অনুভব করবো-অক্ষয় অমৃততা
ওহ ‘মৃত্যু’ তুমি বড্ড দুর্বল, ভাগ্য আর সুযোগের
নিম্নতর এক সঙ্গী-অসহায় দরিদ্র ক্রীতদাস
তুমি চালিত হও সময়ের চাকায়-নিজস্ব বলে কিছু নেই
এ দেহ দখলে কৃতিত্ব রাখো অথচ, আমাকে তুমি
কখনোই চিরতরে হত্যা করতে পারো না
ওহ আকাশ, বাতাস, তপ্ত-শীতল বায়ু
আমি-ই সেই অন্ধকারের কণ্ঠ
অসীম প্রজ্ঞার অমিথ্যা সীমানায়, অদৃশ্য এক
আত্মার আওয়াজ
এক কম্পমান স্রোত; যে নশ্বর দেহে স্থান নেবার আগেই
ছিল বিদ্যমান
‘মৃত্যু’ তুমি দেহের নৃশংস পরিণতি ঘটালেও;
আমি বেঁচে থাকব
হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে, হয়তো প্রতিধ্বনি হবে একটি গল্প
আমাার জিহ্বা তখন আর কথা বলতে পারবে না
হয়তো সেদিন হিংস্র বন্যপ্রাণী কিংবা কীটপতঙ্গ হয়ে
মহাজাগতিক উড়ানের বিশাল বিস্তৃতিতে,
প্রতিধ্বনিত হবো শান্ত রাতে
কিংবা ইথারিয়াল নৃত্যে ফেরেশতাদের পদচারণায়
স্বর্গের কোরাসে স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে নিবো-আপন লয়ে
ওহ ‘মৃত্যু’ ওহ বোকা ‘মৃত্যু’
জেনে রেখো, এই নশ্বর জীবনের সমাপ্তি হতে পারে
এই নশ্বর জীবনই আরেকটি অনন্ত জীবন;
অনুসরণ করে
তাই-আমাকে তুমি হত্যা করতে পারবে না।