নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এইচ বি রিতা

গিরগিটি আমায় খামচে ধরে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৪৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
গিরগিটি আমায় খামচে ধরে

(১)

প্রকৃতি-বন্য এবং মুক্ত

সময়ের হাত ধরে বোনা রঙের সিম্ফনিতে-

সৌন্দর্যের একটি টেপেস্ট্রি

এই প্রকৃতি আমাকে ভাবায়, কখনো কাঁদায়।

 

তাই ফ্লাশিং-এর পথে হাঁটি নগ্ন পা’য়ে

হেঁটে হেঁটে শুনতে পাই ঝড়া পাতাদের শুকিয়ে আসা ক্রন্দন

মুক্ত পথচলায় রঙ পাল্টানো গিরগিটিকে দেখি,

আমাকে খামচে ধরতে তৎপর হয়ে উঠে

আহত করার লিপ্সায় গুজব ছড়ায় গুনগুন করে

টের পাই-প্রকৃতির দেয়া উপহার, তার রঙটুকু;

ধীরে ধীরে ধূসর হয়।

 

(২)

অবলোকন করি তার চতুরতা

কেমন করে চিরহরিৎ এর শক্তিশালী, পুষ্ট প্রাণিদের

পরাস্ত করে নিজে বিজয়ী হতে, প্রকাশ্যে মারপিট ছাড়া;

কৌশলে রংবাজি করে যায়।

 

গিরগিটি-রংবাজিতে বেশ উস্তাদ

সে জানে অন্যকে আহত বা আকৃষ্ট করতে কেমন করে

ভিন্ন ভিন্ন রঙে রঙিন হতে হয়

লক্ষ্য করি, মেনটিস চিংড়ির মতো আকারে ছোট অথচ

কি ভীষণ হিংস্র ভয়ংকর ধারালো নখর তার-

যা দিয়ে কাচের অ্যাকুরিয়ামগুলো ভেঙে ফেলে অকপটে।

 

তার রঙিন খোলসের ভয়ে ‌‌বন্যপ্রাণীরা লুকিয়ে যায়

অথচ, আমি ভীত হতে হতে জেগে উঠি

প্রতিটি খামচির বদান্যতায় আরো শক্তিশালী করি মনোবল।

 

(৩)

তার নখের আঁচর ভীষণ তীব্র

মর্গের ধারালো মাথার খুলি কাটা যন্ত্রের মতো।

 

বিড়বিড় করে বলি, কি আছে তোর মাঝে?

কে-ই বা দিয়েছে অস্তিত্ব হরণের অধিকার?

মাংসাশী হায়েনার মতো দাঁত কেলিয়ে শিকারে তোর বর্বরতা

নাৎসি বাহিনীর অভিযান ছাড়িয়ে দূষিত করে আজ

শহুরে বাতাস।

তোকে কে বলেছে শুঁকে নিতে কারো গায়ের গন্ধ ?

হিংস্র-ভীতু ব্ল্যাক মাম্বা, বলা যায়,

ফোঁটা বিষে বেআইনি ঘোষণায় শব্দ, দাঁড়ি, কমায়

অনুভূতির ধর্ষণ শেষে বিকৃত মগজ তোর, হুক্কা হুয়ায়

শেয়াল ডাকে-আইকন ছুঁড়ে যায় নিজ কর্মের।

 

ওহে গিরগিটি ! কে দিয়েছে সাহস তোকে

অনাধিকারে লাঙল চাষে উর্বর জমির বুক ফুঁড়ে তুলে নিতে সতেজ বীজ, মোহর লাগানো ব্যক্তিসত্তা

কট্টর যুক্তিবিহীন প্রলাপে স্যানিটারি প্যাডে;

তুই-ই তো লিখে যাস রঙ পাল্টানোর ইতিহাস !

 

পরক্ষণেই শুনতে পাই, পাশের ফ্ল্যাটের বালবিন্দর

তার শ্রবণশক্তিহীন মেয়েকে আকার-ঈঙ্গিতে খেতে ডাকে। সম্বিৎ ফিরে পাই

নিজেকে হাঁদারাম মনে হয় !

যার পঁচিশ ডেসিবেলের অধিক তীব্রতাযুক্ত শব্দের প্রযোজন;

তাকে বিড়বিড় করে কুপুকাত করার ধারনা-অমূলক।

 

(৪)

তবু বিনাশব্দে ছলাৎছলাৎ করে শহর কাঁপায় গিরগিটি-

দলপোষা কুকুরের মতো

 

বুঝতে পারি,

র‍্যাবিস গিলে খেয়েছে মগজ তার বহুদিন আগে

রিংওয়ার্ম নখ তবু ‌মানব দেহে আঁচড় রেখে যায়

ক্রূর ‌অনাধিকারে।

 

ভীষণ বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই দিনশেষে যখন দেখি

তার মাথা গুঁজার ঠাই হয় কেঁচো গোত্রের কোলে।

 

ঈশ্বরকে তখন ডেকে বলি,

হে ঈশ্বর !

তার প্রতি করুণা করুন, হে প্রিয় প্রভু,

যেহেতু তার পথটি কঠিন, সে হারিয়ে যাচ্ছে একাকী,

অনিরাপদে ভরা তার জীবন, তাই আপনার অনুগ্রহ তার ভীষণ প্রয়োজন

যেহেতু বাস্তবতা সহ্য করা কঠিন

তাই, সে তার নিজের উপায় খুঁজে বের করছে,

কিন্তু আপনি জানেন, তার রাস্তাটি সন্দেহে ভরে গেছে।

তাকে পথ দেখানোর জন্য আপনার হাতের প্রয়োজন

তাকে নতুন করে শুরু করতে সাহায্য করুন।

হে প্রিয় প্রভু,

তার বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করুন

আপনার ভালবাসা দিয়ে তার হৃদয় পূর্ণ করুন

তাকে প্রতিদিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার শক্তি দিন

তাকে সেই শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করুন-

যার জন্য সে আকাঙ্ক্ষিত।

 

(৫)

ঈশ্বরের কি দয়া হয়?

নাকি গিরগিটির রঙ বদলে ঈশ্বরও বিভ্রান্ত হয় ?

হ য ব র ল-ভাবনায় আসে

আমাদের রূপ-ঔদ্ধত্যে কেন মুগ্ধ হতে হবে রোজ-কাউকে

যা সবাই হয়ে আসছে যুগের পর যুগ

পাখি-প্রজাপতিও জানে আমরা উন্মীলিত টুকটুকা লাল

জানে, আমাদের অত্যুত্তম সম্ভাব্যতা শহরে কেমন করে

মৌমাছিদের পূর্বপূরুষদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

 

আমাদের ঘ্রাণে মালী পাগল হয়

পাগল হয় সকালের কুয়াশা, দুপুরের রোদ-

ক্লান্তিতে জৃম্ভমান বিকাল।

পাগল হয় পথের কুকুরও।

অথচ, আমাদের নিজস্ব কোন ঘ্রাণ নেই-সত্তা নেই।

কী আশ্চর্য্য!

তবু আমরা থেমে নেই।

 

(৬)

কখনো কখনো হতাশায় ডুবে যাই

অশ্রু ঝরে পড়ে বৃষ্টির ফোঁটার মতো,

বিষাদ আমার হৃদয় আঁকড়ে ধরে

দুঃখের ভারে ভারি আমার আত্মাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

 

মানুষের ঔদ্ধত্যে পৃথিবী অন্ধকার এবং শূন্য মনে হয়,

আমি আমার পথ খুঁজে পেতে সংগ্রাম হিসাবে

গিরগিটির দেয়া ব্যাথা ও আঘাতগুলোকে গ্রহণ করি।

 

ছলনার প্রতিটি মুহূর্ত অনন্তকালের মতো মনে হয়,

তাই, ব্যথাগুলোকে ধাক্কার মাধ্যম হিসাবে গননা করি

অনাহূত এ দুঃখ আমাকে কখনোই ছাড়বে না,

জানি, অতীত মুছে ফেলা যায় না,

এবং এই দুঃখগুলো বিবর্ণ হবে না কোনদিন

তবু, উঠে দাঁড়াই, হুঙ্কার নয় সহমর্মিতা নিয়ে।

 

আমি আমার শক্তিতে চলি, এবং চলতে থাকব

কারণ আমি জানি, সময় এবং নিরাময়ের সাথে,

আমি আরো শক্তিশালী হবো।

 

জীবন আনন্দের !

জীবনের উজ্জ্বল দিক, যেখানে প্রকৃত আনন্দ আমার জন্য অপেক্ষা করছে,

আমি সেদিকেই পা বাড়াই, ফ্লাশিং-এর পথে হাঁটতে হাঁটতে।

শেয়ার করুন