নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি : বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় ৬ হাজার কোটি টাকা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ০১:৩১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ০১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি : বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় ৬ হাজার কোটি টাকা

দেড় বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছেই। আর গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। দুই বছর আগে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। এক বছর পর ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ওই রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছর জুড়েই (২০২২ সালে ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন) বাংলাদেশে ডলারের তীব্র সংকট ছিল। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ডলার মিলছিল না। বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়ে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর রিজার্ভ থেকে এই ডলার বিক্রি করে ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ওই প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আয়, ব্যয় ও মুনাফার তথ্যও জানা যায়। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভায় সভাপতিত্ব করেন।

বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারকে দেয়া প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে বিনিয়োগ থেকে আয় বাড়ায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রেকর্ড ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৪৮ শতাংশ বেশি। বিপুল এ আয় থেকে ব্যয় ও কর দেয়ার পর গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট মুনাফা হয় ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় ছিল ৬ হাজার ২৯ কোটি টাকা এবং মুনাফা ছিল ৫ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা আয় হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে। তার আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে সরকারকে দেয়া ঋণের সুদ থেকে সাত হাজার কোটি টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যাংককে দেয়া ঋণের সুদ হিসেবে দুই হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। অপরদিকে রিজার্ভ থেকে বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগ থেকে আয় হয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে মোট ঋণ নেয় ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ও বাণিজ্যিক ব্যাংককে দেয়া ঋণ থেকে সুদের আয় ছিল ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা এবং বিদেশি মুদ্রা খাতে বিনিয়োগ থেকে ২ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়ে যেমন উল্লম্ফন হয়েছে (১৪৮ শতাংশ বেড়েছে), তেমনি মুনাফাতেও। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ‍মুনাফা ছিল ৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট মুনাফা বেড়েছে সাত হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা বা ২৩৯ শতাংশ।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদের বৈঠকে অর্থ পাচার প্রতিরোধে আমদানিতে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্লুমবার্গের একটি টার্মিনাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিমান বাংলাদেশকে দেয়া অর্থের সুদহার লাইবর রেটের বদলে বাংলাদেশ ব্যাংক র্নিধারিত ‘বেঞ্চমার্ক পদ্ধতি’ অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স পাওয়া নগদ ফাইন্যান্সের ‘লাইসেন্স সমপর্ণ’ বৈঠকে গ্রহণ করা হয়। গত ১৭ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়ার পর ব্যবসা শুরুর আগেই কোম্পানিটি লাইসেন্স সমপর্ণ করেছে। নতুন এ লাইসেন্স পাওয়া নগদ ফাইন্যান্সে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি নগদ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ মিশুক একজন পরিচালক হিসেবে আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাজারে ডলারের জোগান ঠিক রাখতে ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি করা হয় প্রায় দ্বিগুণ, ১৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে চলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেড় মাসে (১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট) দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি ককরা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরে অবশ্য বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

শেয়ার করুন