নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৬%

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৪১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৬%

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহে ধস নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশভিত্তিক রেমিট্যান্সের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১১২ কোটি ৫৬ লাখ (১.১২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৭৬ কোটি (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর এতে রেমিট্যান্স আহরণে দ্বিতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থানে নেমে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাজ্যের ফেডারেশন-সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে- প্রায় ২ বিলিয়ন (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। বরাবর সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসত সৌদি আরব থেকে। জুলাই-ডিসেম্বরের হিসাবে সেই সৌদি আরবকে পেছনে ফেলে শীর্ষ উঠে এসেছে আমিরাত; এসেছে প্রায় ২ বিলিয়ন (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। এই ছয় মাসের মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দমিক ৩২ শতাংশই এসেছে আরব আমিরাত থেকে।জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে ১৪২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ১৩৭ কোটি ডলার।

আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনের আভাস গত অর্থবছরেই পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটি থেকে ৩০৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার (৩.০৩ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

প্রথমবারের মতো আমিরাত থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। গত অর্থবছরে তিনটি দেশ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। বাকি দুটি দেশ ছিল সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরের কয়েক মাসে সৌদি আরবের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স এলেও বরাবরের মতোই ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে।

তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ কম ছিল; ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ (৩.৭৬ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ (৪.৫৪ বিলিয়ন) ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে; ৩৫২ কোটি ২০ লাখ (৩.৫২ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিল ২০৮ কোটি (২.০৮ বিলিয়ন) ডলার।

সবশেষ ডিসেম্বর মাসে আরব আমিরাত থেকে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে এক মাসে এই দেশ থেকে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনই আসেনি।

ডিসেম্বরে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ২৮ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স কমার কারণ জানতে চাইলে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকার অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সেখানে আমাদের যারা প্রবাসী আছেন, তাদের খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

একই কথা বলেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের প্রবাসীরা তুলনামূলকভাবে ভালো চাকরি করেন। বেশি বেতন-ভাতা পান। তাই তারা গত কয়েক বছর ভালো রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন কম পাঠাচ্ছেন।

শেয়ার করুন