নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে ব্যবসার প্রধান বাধা দুর্নীতি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশে ব্যবসার প্রধান বাধা দুর্নীতি

বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে দুর্নীতিই প্রধান বাধা। ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি, গ্যাস-বিদ্যুৎসেবা, সরকারের সঙ্গে চুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। এতে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনা কঠিনতর হয়ে পড়ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ব্যবসা পরিবেশ জরিপে অংশ নেওয়া ৬৭ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যবসায়ী এমন অভিমত জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ব্যবসা পরিবেশ ২০২৩: নির্বাহীদের মতামত জরিপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

গত বছরের মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে এ জরিপ চালানো হয়। এতে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৭১ জন শীর্ষ কর্মকর্তার মতামত নেওয়া হয়। জরিপ পরিচালনায় সহায়তা করেছে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। ২০০১ সাল থেকে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় ডব্লিউইএফ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ২০২২ সালের জরিপেও দুর্নীতিকেই ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পথে এক নম্বর সমস্যা বলে মত দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা। তাদের মতে, গত বছর পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের তৃতীয় বড় সমস্যা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে মনে করেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী।

সিপিডি মোটাদাগে ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে। শীর্ষ তিনটি ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো হলো—অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, জটিল কর নীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বল নৈতিকতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, বিধিনিষেধমূলক শ্রম আইন ও দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, জরিপকালে একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গ্যাস সংযোগ পেতে তাঁর কাছে যে পরিমাণ ঘুষ দাবি করা হয়েছে, তা তাঁর মোট বিনিয়োগের প্রায় সমপরিমাণ।

নতুন সরকার দুর্নীতি দমনে বিশেষ গুরুত্ব দেবে বলে সংবাদ সম্মেলনে আশা করা হয় সিপিডির পক্ষ থেকে। সিপিডি মনে করে, এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দুর্নীতি প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। দলের এ অঙ্গীকার নতুন সরকার বাস্তবে রূপ দেবে বলে আশা করে সিপিডি।

ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতির কারণে ক্ষতির বিষয়টি ব্যবসা পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে বেসরকারি খাতের জন্য বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জরিপে প্রাপ্ত ফল নিয়ে নির্বাচনের পরও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন চান তারা।

জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় দুর্নীতির পর দ্বিতীয় বড় বাধা হচ্ছে অদক্ষ আমলাতন্ত্র। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের ৫৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ এ মত দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে তৃতীয় বড় সমস্যাটি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিতিশীলতা।

ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় এ সমস্যাটি এবারই প্রথম এতটা গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র পাঁচ বছর আগেও এটি এত বড় সমস্যা ছিল না। এরকম মোট ১৭টি সমস্যার চিহ্নিত করা হয় জরিপে। গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার একটি অবকাঠামো সংকট। তবে গত তিন বছরে এ সমস্যাটি কিছুটা কমে এসেছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি, অর্থের সংস্থান, জটিল করনীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বলতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, বিধিনিষেধমূলক শ্রম আইন ও দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ব্যবসা পরিচালনায় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসা পরিবেশের উন্নয়নে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন সরকারি অফিসের জন্য ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। সিপিডি বলেছে, এসব কর্মপরিকল্পনা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে সব অফিসে স্বাধীন ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

সিপিডির মতে– ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারে সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা দরকার। যাতে এ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সব ধরনের লেনদেন পরিচালিত হয়। এতে নজরদারি বাড়বে। অর্থ পাচারসহ সব ধরনের অনিয়ম রোধ করা সম্ভব হবে।

সিপিডির প্রতিবেদনের সঙ্গে ‘ডব্লিউইএফের ফিউচার অব গ্রোথ রিপোর্ট ২০২৩’ প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

শেয়ার করুন