নিউইয়র্ক     সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক এর ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তেলানের অপচেষ্টা ব্যর্থ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক এর ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তেলানের অপচেষ্টা ব্যর্থ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন, বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক এর ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছে বলে সেসাইটির কর্মকর্তাদের সুত্রে জানা গেছে। সোসাইটির সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষসহ কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক সতর্কতার কারণে চেকের মাধ্যমে একটি চক্র কর্তৃক জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউ ইয়র্ক তাদের আক্রান্ত ব্যাঙ্ক একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। জালিয়াতির ঘটনাটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের তদন্তনাধীন রয়েছে বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন এই জালিয়াতির ঘটনায় নিউ ইয়র্ক সিটির ১১০ প্রিসিঙ্কটে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যেহেতু লক্ষাধিক ডলারের জালিয়াতির অভিযোগ, সেকারণে পুলিশের পাশাপাশি ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআইও এ ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন সুত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চেক জালিয়াতির সঙ্গে হয়তো একজন বাংলাদেশি জড়িত থাকতে পারে, যে অর্থ উত্তোলনের জন্য নিজেই সশরীরে ব্যাংকে গিয়েছিল। নিউ ইয়র্ক পুলিশ চেক থেকে তার আঙুলের ছাপও সংগ্রহ করেছে।

বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউ ইয়র্ক এর কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন জানান, সোসাইটির কর্মকর্তাদের প্রায় ১২ ঘন্টাব্যাপী ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সোসাইটি, নিই ইয়র্ক এর ফিউনেরাল ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লোপাট করা অর্থ পুরোপুরি ফেরত পাওয়া গেছে। তবে অস্বস্তির বিষয় হলো- প্রথম ৫ হাজার ডলারের চেক জালিয়াতির পর তাৎক্ষণিক ব্যাংকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরো দুটি চেকে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার কীভাবে ব্যাঙ্ক থেকে ক্লিয়ার করা হয়েছিল তা বোধগম্য নয়।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে নওশেদ হোসেন কলেন,গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে টিডি ব্যাংক ডিটমার্স বুলেভার্ড শাখা থেকে আমার কাছে একটি ফোন আসে। ব্যাংকের একজন নারী কর্মকর্তা জানান যে, জনৈক মামুন আবু ৫ হাজার ডলারের একটি চেক জমা দিয়েছেন। চেক নম্বর ২৯০৩। চেক ইস্যুর তারিখ লেখা ১৯ সেপ্টেম্বর। চেকের মেমোতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭৩ স্ট্রিটে স্টেজ প্রোগ্রামের জন্য। নারী কর্মকর্তার কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেকটি পরিশোধ না করার অনুরোধ জানান। এমনকী ব্যাংকে আগত বাহককে পুলিশে দেওয়ার অনুরোধ জানান। ওইদিন চেকটি পরিশোধ করা হয়নি।

তিনি জানান, পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউ ইয়র্ক এর সভাপতি আব্দুর রব মিয়া ও আমি ব্যাংকে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে হিসাবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। এরপর সতর্কতা অবলম্বন করতে অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্ট যাচাই করছিলাম। কিন্তু এদিন বিকালে হঠাৎ আমি দেখতে পাই, ব্যাংক হিসাব থেকে ১৪ হাজার ডলার তুলে নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের হিসাবে জনৈক রফিক উল্লাহর নামে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের একটি চেক জমা করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংক ১৪ হাজার ডলার অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে। বাকী অর্থ হয়তো পরে দেয়া হতো।

নওশেদ জানান, তিনি তৎক্ষণাৎ টিডি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে এ ব্যাপারে আপত্তি জানান। প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলার পর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ১৪ হাজার ডলার অ্যাকাউন্টে ফেরত দেয়া হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ২২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা ১০ মিনিটে একই অ্যাকাউন্টে সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার নামে ২০ হাজার ডলার অয়্যার ট্রান্সফার করা হয়। এ বিষয়টিও কর্মকর্তাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। নিরূপায় হয়ে ব্যাংকে গিয়ে অভিযোগ জানানো হয়।

ব্যাংক থেকে তাদের জানানো হয়- সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রব মিয়ার নামে টিডি ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে সভাপতি নিজে অয়্যার ট্রান্সফার করে ২০ হাজার ডলার নিয়েছেন। অথচ সভাপতি জানিয়েছেন, টিডি ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টই নেই। কিছুদিন আগে সভাপতির সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর হ্যাক হয়েছে। এমনকী তার ফোন নম্বরও ক্লোন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- কেউ তার নামে অ্যাকাউন্ট করে এই অপকর্মটি করেছে।

কোষাধ্যক্ষ নওশাদ আরো জানান, বাংলাদেশ সোসাইটির যে অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে সেই অ্যাকাউন্টের কোনো চেক বইই নেই। জালিয়াত চক্র নিজেরাই চেক বই ছাপিয়ে নিয়েছে। এমনকী ওই অ্যাকাউন্ট থেকে শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ লেনদেন পরিচালিত হয়। বাইরের কারো অ্যাকাউন্টের তথ্য জানার কথা নয়।

সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী জানান, এই ঘটনা বেশ উদ্বেগের, আমরা আতংকিত। অপরাধী যেই হোক তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই আমরা।

শেয়ার করুন