নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি তিন গুণের বেশি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি তিন গুণের বেশি

বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে নতুন করে এলসি খোলার হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ খুব বেশি কমেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি আয়রও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়ছে না। ফলে এখনো রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গত মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়লেও আশানুরূপ নয়। উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণছাড় কমেছে। একই সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না বিদেশি বিনিয়োগ। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাব ঘাটতির পাশাপাশি সার্বিক বৈদেশিক লেনদেনেও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। সূচকটিতে আগের বছর একই সময় ঘাট‌তি ছিল ২২২ কোটি ডলার। সেই হিসেবে বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি তিন গুণেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। এতে এক হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশ‌মিক ৮২ বি‌লিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে চলতি হিসাবের ভারসাম্য আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। কারণ, আমদানির তুলনায় রপ্তানি আয় কমলে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে যায়। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার অর্থই হলো বিদেশি বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ কারণেই চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে আশার কথা হচ্ছে, কড়াকড়ির কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুফল হিসেবে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে নভেম্বর শেষে ৮৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আট মাসে বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা খাতেও ঘাটতি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫৮৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে এ সময় বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সেবার বিপরীতে বিদেশে অর্থ চলে গেছে ৮৩৯ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) চলতি অর্থবছরের আট মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্বক ৪৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ঋণাত্মক এক হাজার ২৯৬ কোটি ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হওয়ার অর্থই হলো বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাবসহ বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া। বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক দায় মেটাতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে। সামগ্রিক লেনদেনেও ঘাটতি : সামগ্রিক লেনেদেনেও (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এই সূচকটিতে আগের বছর একই সময় ঘাট‌তি ছিল ২২২ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এক হাজার ৪০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। যদিও আলোচ্য সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে উঠেছে।

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন