নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্ক ষ্টেটের গভর্ণর নির্বাচনে হোকুল-জেল্ডিন তীব্র লড়াইয়ে দুই দশক পর রিপাবলিকানদের জয়ের আশা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউইয়র্ক ষ্টেটের গভর্ণর নির্বাচনে হোকুল-জেল্ডিন তীব্র লড়াইয়ে দুই দশক পর রিপাবলিকানদের জয়ের আশা

নিউইয়র্ক ষ্টেটের গভর্ণর নির্বাচনে এবার লড়াই হবে তীব্র। একাধিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপে জানা গেছে বর্তমান গভর্ণর ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ক্যাথি হোকুল এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কংগ্রেসম্যান লি জেলডিন এর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে । সর্বশেষ জরীপসমুহেে গড়ে ব্যবধান খুবই সামান্য।

ডেমোক্রাট রাজ্য হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কের এবারের হিসেব কি পাল্টে যাবে ? নাকি নিজেদের আসন অক্ষুণ্ণ রাখবে দলটি। দুই দশক ধরে একক আধিপত্য ধরে রাখার পর এবার পরাজয়ের শঙ্কায় কপালে ভাঁজ পড়েছে ডেমোক্রাট শিবিরে। আগামী ৮ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিনই একই সঙ্গে এই রাজ্যে গভর্ণর নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে নিউইয়র্ক রাজ্যের নেতৃস্থানীয় ডেমক্রেট নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন টিভি মিডিয়া সিএনএনকে জানিয়েছে, তারা আশঙ্কা করতে শুরু করেছেন যে নিউ ইয়র্ক এর গভর্ণর পদটি দুই দশক পর এতজন রিপাবলিকানের হাতে চলে যেতে পারে। কংগ্রেসে নিউ ইয়র্ক এর চারটি আসনও রিপাবলিকানদের হাতে চলে যেতে পারে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্রেটিকদের দুর্গ হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কে রিপাবলিকান প্রার্থীর জয়ী হওয়া এত সহজ হবে না। আবার দুর্বল প্রার্থীর কারণে হাতছাড়া হতে পারে এ রাজ্যটি এমন আশংকাও উড়িয়ে দিতে পারছে না ডেমোক্রাট শিবির।

২০০২ সালের পর এই রাজ্যে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হতে পারেনি। জরিপ অনুযায়ী, ক্যাথি হোকুল শ্বেতাঙ্গদের সমর্থন হারালেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সেটা সামান্য কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। তিনি রেজিষ্টার্ড ভোটারদের মধ্যে ১০ শতাংশ পয়েন্টে এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ৮ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে বেশ কোনঠাসা ক্যাথি প্রতিপক্ষের সঙ্গে ব্যবধান বাড়াতে সক্ষম হচ্ছেন। রিপাবলিকান প্রার্থীকে রাজ্যের জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, লি জেলডিন নিউইয়র্কের কঠোর গর্ভপাত আইন সংরক্ষণের জন্য হুমকি এবং এই পদের জন্য সে অযোগ্য।

কথিত যৌন কেলেংকারিতে পড়ে চাপের মুখে গত বছরের ১০ আগষ্ট পদত্যাগ করেন নিউইয়র্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় গভর্ণর আ্যান্ড্রু কুমো। এরপর তার ডেপুটি ক্যাথি হোকুল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী গভর্ণর হিসেবে দায়িত্ব পান। কিন্তু পূর্বসুরির মতো অভিজ্ঞতা আর শক্ত হাতে রাজ্য পরিচালনার ছাপ রাখতে পারেননি।

নিউ ইয়র্কে অপরাধের প্রাধান্য থাকায়, একাধিক ডেমোক্র্যাট এই প্রতিযোগিতাগুলিকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের দিকে ইঙ্গিত করে বলছেন তিনিই প্রথম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন এবং ডানপন্থীরা এমনভাবে খেলছেন যা ডেমক্রেটিক পার্টিকে বিপর্যয়ের জন্য সেট আপ করতে সাহায্য করেছে। সিএনএন এর কাছে গভর্নর হোকুল অবশ্য দাবি করেন যে রিপাবলিকানরা নিউ ইয়র্কে অপরাধ বৃদ্ধির সংখ্যা সম্পর্কে ‘অসৎ’।

কিন্তু একটি বড় চার্ট সিএনএন গভর্নর হোকুলের পাশে প্রদর্শন করেছে যার মধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটিতে গুরুতর অপরাধের হারের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ ছিল, যেখানে খুন ছাড়া সবগুলোই ১১% থেকে ৪০% বেড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে ৩১% বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী রাজ্যের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আবাসন সংকট, করোনা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি এবং দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বেশ কিছু অপরিপক্ক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ভোটারদের আকৃষ্ট করেন। জরিপে ডেমোক্রাট প্রার্থীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। অনেক বছর পর রিপাবলিকান শিবির জয়ের স্বপ্ন দেখছিল।

ঠিক সেই সময় লি জেলডিনকে সমর্থন দিলেন সাবেক বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম “ট্রুথ সোস্যাল”এ দেয়া এক পোস্টে জেলডিনকে “মহান এবং বিচক্ষণ” প্রার্থী আখ্যায়িত করেন। আর এতেই ঘটে বিপত্তি।

ট্রাম্পের সমর্থনের কারণে প্রথমদিকে নিচে নামতে থাকে জেলডিনের জনপ্রিয়তা। একের পর এক জরিপে পিছনে পড়তে থাকে তার অবস্থান। কারণ নিউইয়র্কের নিজের দলের সমর্থকরাও পছন্দ করেন না ট্রাম্পকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ডেমোক্রাট শিবির।

তবে এসব জরিপকে তোয়াক্কা করতে চান না রিপাবলিকান প্রার্থী লি জেলডিন। সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য বনে যাওয়া নিউইয়র্কের মানুষ এবার পরিবর্তন চান বলে প্রচার করছেন তিনি। আর সাধারণ মানুষের একটি অংশ তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ডেমোক্রাট হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের একটি বড় অংশ ও প্রকাশ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী জেলডিনের জনসভায় অংশ নিয়েছেন।

শেয়ার করুন