নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৫শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলঝেইমারের লক্ষণগুলো চিনে নিন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩ | ১১:৩৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ | ১১:৩৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আলঝেইমারের লক্ষণগুলো চিনে নিন

আলঝেইমারে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পায় বলে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। প্রতীকী ছবি : সংগৃহীত

আলঝেইমার হলো মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত একটি রোগ। সচরাচর আলঝেইমার ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি হ্রাসের বড় কারণ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। একে থামানো কঠিন।

প্রধান লক্ষণ
স্মৃতিশক্তি লোপ : আলঝেইমারে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পায়। আক্রান্ত ব্যক্তির চেনা মানুষের নাম, চেনা মুখ, জায়গার নাম, পরিচিত টেলিফোন নম্বর ইত্যাদি ভুলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। এই অবস্থা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটায়।

প্রতিদিনের কাজের বিভ্রান্তি : আক্রান্ত ব্যক্তি রান্না করা, বাতি জ্বালানো, টিভি চালানো ও সাধারণ হাটবাজারের হিসাব-নিকাশের মতো প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। অথবা এসব কাজ করতে গিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে।

ভাষাগত সমস্যা : আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক ভাষাগত কর্মকাণ্ডে বাধার শিকার হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা শিশুদের মতো এলোমেলো কথা বলে।

সময় ও স্থান চিহ্নিত করতে অপারগতা : এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সকাল, বিকেল বা রাত বুঝতে তাদের সমস্যা হয়। রাস্তা হারিয়ে অন্যখানে চলে যাওয়া বা বাড়ির রাস্তা খুঁজে না পাওয়া, পরিচিত জায়গা চিনতে অসুবিধা হওয়া বা চিনতে না পারার মতো ঘটনার শিকার হয় এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা।

বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা কমে যাওয়া : নিজের অবস্থানে থেকে কী কাজ করতে হবে, আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত রোগীরা তা অনেক সময় বুঝতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে, কোন অবস্থায় কোন পোশাকটি পরতে হবে, তা বুঝতে কষ্ট হওয়া, রিকশা ভাড়া দেওয়া, বিভিন্ন সময় অন্যমনস্ক হওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় কোন জিনিস দিয়ে কী করতে হবে, তা বুঝে উঠতে না পারা।

জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা : নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র অদ্ভুত সব জায়গায় রেখে তা বেমালুম ভুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে আলঝেইমারে আক্রান্ত হলে।

মেজাজ ও আচার-আচরণে পরিবর্তন : যখন-তখন মেজাজের পরিবর্তন হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, রাগান্বিত হওয়া, অন্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এই রোগের সাধারণ লক্ষণ।

ব্যক্তিত্ববোধের পরিবর্তন : বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক। তবে ডিমেনশিয়ায় ভুগছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। অন্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা, সন্দেহপ্রবণ বা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে থাকে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলা ও ক্লান্তিবোধ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আলঝেইমার রোগের ক্ষেত্রে যেকোনো কাজের প্রতিই আকর্ষণ কমে যায়।

রোগের কারণ : আলঝেইমার রোগটি সাধারণত ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সী মানুষদের হয়ে থাকে। তবে কম বয়সীদেরও হতে পারে, যদিও এর সংখ্যা খুব কম। পুরুষ বা নারী—যে কারও ডিমেনশিয়া হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ডিমেনশিয়ার সঙ্গে বংশগত সম্পর্ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছেন।
দেখা যাচ্ছে, কিছু বিরল ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী রোগগুলো বংশগত হতে পারে। কিছু মানুষের নির্দিষ্ট ধরনের বংশগত গাঠনিক প্রক্রিয়ার কারণে ডিমেনশিয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। প্রতিরোধযোগ্য যে রোগগুলো থেকে ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে, সে রোগগুলো কেন হয়, সেটি নিশ্চিত করে জানা যায়নি।

প্রতিরোধ : বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি ডিমেনশিয়া রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। ধূমপান বর্জন, চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও সচল জীবনযাপন করা ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার থেকে মানুষকে দূরে রাখতে পারে।- অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ঢাকা

শেয়ার করুন