নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুমন শামসুদ্দিন এর কবিতা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সুমন শামসুদ্দিন এর কবিতা

নিঃসঙ্গতা

সঙ্গীবিহীন একটি ভ্রমর হারায় পথের দিশা।
একটি শালিক নিত্য ঘোরে আমার বাড়ির পাশে।
চন্দ্রাহত সাথী তাদের চোখে অমানিশা!

একটি ফড়িং রোজ বিকেলে বসে এসে ঘাসে।
সেই ঘুঘুটা রোজ সকালে ডাকতো বাড়ির কাছে।
আটক চড়ুই পাখির চোখে সাথীর মুখটি ভাসে।

বন-ময়ূরী মেলে পেখম হারায় ময়ূর পাছে!
অধীর চাতক উড়ছে একা অকূল বিলের চরে।
কাকাতুয়া নিথর বসে সাথী আসবে কাছে!

অধীর হয়ে পায়রা ডাকে সঙ্গিনী নেই ঘরে!
ইউরেশীয়-গুলিন্দাটা ফিরছে দেশে একা,
তবু খোঁজে সাথীরে তার যদি চোখে পড়ে!

প্রতি বিহান কাটে আমার দৃষ্টে গগনরেখা।
সাঁঝ পেরোলে ভাবি জীবন সঙ্গীহীনই লেখা!

 

অভিসার

শিহরিয়া উঠি তুমি কুহুকুহু ডাকো;
প্রতিক্ষণে পলকে যে সুখছবি আঁকো।
দেহযষ্টি পলে পলে বাঁকে বাঁকে নাচে;
ঘন ঘন প্রতি শ্বাসে কপোলেরই আঁচে।

কেশবতি পদে পদে ঢাকো মুখখানি;
দুরু দুরু কাঁপে বুকও দুটি আঁখি রানী।
উরু গলে চিবুকেও ঘামে ভিজে কাঁধ;
আলিঙ্গনে নিষ্পেষণে মানে নাকো বাঁধ।

ভালোবাসা অভিসারে মাতোয়ারা ঢলে;
চখাচখি মধুরিত মাতামাতি চলে।
রক্তজবা নিংড়ে পড়ে সুখনদী ধারা;
পরিনীতা স্বর্গবাসে বৃথা তুমি ছাড়া।

 

অনুরাগের সুর

প্রসুপ্ত এক অনুভূতি দিচ্ছে উঁকি মনে,
সপ্তরঙা সুরের তালে ভাবনা জাগার ক্ষণে।
শুরু তখন হবে, যখন সময় হবে জানি,
শেষ হলে তা আবার শুরুর উপলক্ষ মানি।

যখন তখন আসবে কাছে সেটাই ভালোবাসি,
এখন তো নয়, বললে পরে বাঁজবে না তো বাঁশি!
আমার যে সব তোমার যেনো, তুমি শুধু আমার,
হৃদয় দিয়ে গড়বো তোমার ভালোবাসার খামার।

চাঁদ যদি না ওঠে যেনো তুমি আমার চাঁদ,
জোছনা রাতে হাঁটবো দুজন আকাশ হবে ছাদ।
বাঁশির সাথে বাজবে তোমার হাতের সকল চুড়ি,
পাহাড় খুঁজে এনে দেবো সাতশো গোলাপ কুঁড়ি।

শুরু যখন হলো তোমার অভিসারের লগ্ন,
নেই কোনো শেষ, থাকবো তোমার অনুরাগে মগ্ন!

 

আরণ্যক প্রেম

শব্দরা সব ঘুমিয় পরেছে,
আমার সাথে গোপনালাপে রত শুধু
তোমার বুকের উষ্ণশোণিতপূর্ণ ধুকপুকানি!
ফিসফিসিয়ে অন্ধকারের গোপন ইঙ্গিত যেনো আলোর গতিতে আমার ধমনী, শিরা, উপশিরায়,
অতীন্দ্রি চৌম্বকীয় আলোক তরঙ্গের ঝড়!

তোমার গ্রীবা আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে
মুহূর্মুহু উদ্দিপিত করছে আমাজন লিলির উন্মত্ততায়;
আর আমি তার পত্র পেল্লায়
স্বচ্ছ জলবিন্দুসম নিদ্রি হৃদয়ে স্পন্দমান অনুপল!

আমার প্রতিটি লোমকূপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
তোমার রেশমপ্রতিম দেহপল্লবের শিহরণ!
যেনো পারিজাতের নিসর্গ বিভোল আর
মধুমক্ষিকার সঞ্চারিত গুঞ্জন।

প্রহেলিকাময় অন্ধকারে শুধুমাত্র
একটি প্রচ্ছন্ন পিঙ্গল চাহনি!
গুপ্ত ঘাতকের মতো আমার অলিন্দে অহর্নিশ লহুক্ষরণে অসহিষ্ণু অধীর!

পৌরাণিক তাম্রলিপিতে ক্ষোদিত
আদিম উদ্দামতা;
ভালোবাসার স্পর্শানুভূতির জৈব-নির্যাসে
ঐশ্বর্যময় হয়ে ওঠে!
আর প্রস্ফুটিত হয়
বহুরঙা সাত সহস্রাধিক বুনোফুল!

 

বেপরোয়া বিবেক

কবিতার সাথে প্রেম হলো বলে স্বজন করেছে পর!
আপন নিবাস নিকৃত হয়ে জোর করে যাযাবর!
স্বার্থের টানে দয়িত স্বজন বিস্ময় চোখে চায়!
আত্ম অংশ করতল হলে নিজালয় খুঁজে পায়!

গ্রহপতি রোজ উদ্ভাসে ভূমি তবু নেই কোনো পর্ব!
নিষিক্ত করে বর্ষণে ভূমি মেঘতো করে না গর্ব!
পথের বক্ষে চলাচল কতো গাড়ি-ঘোড়া, তরী, রথ;
শত পদাঘাত সয়ে যায় তবু সদা চেয়ে থাকে পথ।

উদার মলয় জুড়ায় হৃদয় শীতল হয় যে প্রাণ;
বিনিময় সেতো চায় না কখনো দিবানিশি করে ত্রাণ।
প্রকৃতি কখনো করেনা কামনা অর্পণে তার শান্তি!
অথচ মানুষ অবিচারে রত অস্বীকারে ভুল ভ্রান্তি!

জগতের যতো বিদ্যমানতা উত্সর্গিত ছন্দে!
শুভবিবেচক মানুষই শুধু আত্মম্ভরি দ্বন্দ্বে!

শেয়ার করুন