নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফারহানা আফসার মৌরী

‘বাংলা’ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০২:১১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ | ০২:১৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
‘বাংলা’ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা

বাংলা ভাষা—মায়ের ভাষা, মাতৃভাষা। জন্মের পর বাঙালির প্রথম মুখে ফুটে ওঠা ভাষার নাম ‘বাংলা ভাষা’। ‘মা’ শব্দটির যে মাধুর্য, তা অন্য কোনো ভাষার শব্দে পাওয়া দুষ্কর। সত্যিই, মনের ভাব প্রকাশে বাংলা ভাষার জুড়ি মেলা ভার। বিখ্যাত বিদেশি কবি-সাহিত্যিকেরাও বাংলা ভাষার প্রশংসা করেছেন। সম্মান দেখিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। তবে দুঃখজনকভাবে বর্তমানে তথাকথিত আধুনিকতার দৌরাত্ম্যে বাংলা ভাষায় দূষণ স্পষ্টত লক্ষণীয়! ‘বাংলিশ’ শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। ‘আমি এটা জাস্ট টলারেট করতে পারছি না’—এ রকম অনেক কথা আমরা বলে থাকি আজকাল, যেখানে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি শব্দ যোগ হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে। বিশেষ করে তরুণ সমাজে এই দৃশ্য বেশি দেখা যায়। নিজেদের ‘স্মার্ট-আধুনিক’ প্রমাণ করতে অনেক ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় কথা বলতেও অস্বস্তি বোধ করেন কেউ কেউ। কী পরিতাপের বিষয়! অথচ প্রাণের ভাষা বাংলার মান রক্ষা করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলার দামাল সন্তানেরা।

ভাষার জন্য একটি জাতি কতটুকু আত্মত্যাগী হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাঙালি জাতি। রফিক, শফিক, জব্বারের মতো ভাষাপ্রেমীরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন শুধু বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। স্মৃতিচিহ্নিত ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি তাই সংগ্রামের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় উজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর। ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এবং ভাষা শহিদদের সম্মানার্থে প্রতি বছর দিনটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের-গৌরবের! কিন্তু দুঃখের বিষয়, সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাকে যথাযথ সম্মান দিলেও নিজেদের ভাষাকে অপমান করছি স্বয়ং আমরা!

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা বাংলা ভাষার প্রমিত প্রয়োগ নিয়ে ভাবতে শুরু করি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নতুন মাস তথা মার্চ আসতে না আসতেই বাংলার মর্যাদা রক্ষার চিন্তা হারিয়ে যায়! বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রতি ‘চরম অবহেলা’ দৃশ্যমান। বিজ্ঞাপন-সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড থেকে শুরু করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাংলার প্রতি চরম অনীহা, উদাসীনতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আজকাল বইপত্র কিংবা পুস্তক-কাগজ প্রকাশনীতেও শব্দের বিকৃত বানান দেখা যায়। ইচ্ছাকৃত হোক কিংবা মনের অজান্তে, বাংলার প্রতি অবহেলার চিত্র দৃশ্যমান—বাস্তবতা এটাই। এমনকি নাটক, সিনেমায়ও দেখা যায় বাংলা ভাষার বিকৃত উচ্চারণ। বিষয়গুলো বেশ হতাশাজনক। যে শিশু আগামীর বাংলার ভবিষ্যৎ, ‘ভিত্তি মজবুত’ করার অজুহাতে সেই শিশুর কাঁধে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি চাপিয়ে দেওয়া হয়। কী সাংঘাতিক কথা! এর ফলে এসব শিশু বাংলা ভাষার মধুর শব্দগুলো শোনা থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ তাদের মাতৃভাষা বাংলা! অনেক সময় খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে, এসব শিশুর কোনো স্বজন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন! বাংলা ভাষা ও ভাষাশহিদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতি বছর আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশেষভাবে পালন করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বছরে শুধু এই একটি দিন সাদা-কালো পোশাক পরে শহিদ মিনারে ফুল দিলেই বাঙালির দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং সত্যিকার অর্থেই ভাষাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিত বছরব্যাপী, জীবনব্যাপী। বাংলা ভাষা বাঙালির অধিকার; এই অধিকার যুগের পর যুগ রক্ষা করে এসেছি আমরা, রক্ষা করতে হবে আজীবন—এ কথা কীভাবে ভুলে যাই আমরা!

সুতরাং, বাংলা ভাষাকে অবহেলা নয়, বরং সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করতে হবে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় একমাত্র ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেবল নিজেদের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতাই পারে ভাষার মান অক্ষুণ্ণ রাখতে। এক্ষেত্রে বিশেষত তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সবাইকে খুব ভালোভাবে স্মরণে রাখতে হবে, বছরে শুধু একটি দিন নয়, বরং বছরের ৩৬৫ দিনের প্রতিটি মুহূর্তেই বাংলা ভাষাকে যদি আমরা সম্মান দিতে পারি, তবেই নিজেদের সত্যিকারের বাঙালি বলে দাবি করতে পারব। আমাদের সব সময় মাথায় রাখতে হবে, আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের মায়ের ভাষা ‘বাংলা’। আমাদের কোনো অবস্থাতেই ‘রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাকে’ ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ‘একুশ’ ও ‘বাংলা’—এই দুই-ই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।ফারহানা আফসার মৌরী শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে

শেয়ার করুন