নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিদিন কলা খেলে শরীরে কী ঘটে!

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩ | ০১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ মে ২০২৩ | ০১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
প্রতিদিন কলা খেলে শরীরে কী ঘটে!

 সারাবছর ধরে দোকানে ঝুলতে থাকা কলা কেন সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। প্রথমত, এটি খুবই সস্তা। দ্বিতীয়ত, একে অনেকভাবে খাওয়া যায়। তবে এর স্বাস্থ্যগত উপকারও কম নয়।

আন্তর্জাতিক ফল উৎপাদন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি খাওয়া ফল হলো কলা। আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি থেকে শুরু করে অন্যান্য সব ফল তালিকায় আনলেও কলার সমান হবে না। সারাবছর ধরে দোকানে ঝুলতে থাকা কলা কেন সবার ওপরে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। প্রথমত, এটি খুবই সস্তা। দ্বিতীয়ত, একে অনেকভাবে খাওয়া যায়। কোথাও যাওয়ার তাড়া থাকলে খুব সহজেই একে ধরে হাঁটতে হাঁটতে খেয়ে ফেলা যায়, জ্যুস বানিয়ে কিংবা সকালের নাস্তায় ওটমিল বা চিড়ার সাথেও খাওয়া যায়। খাওয়া যায় পাউরুটির সাথে স্যান্ডউইচ বানিয়েও।

যদি আপনি প্রতিদিন কলা খান, তাহলে আপনার শরীর কীভাবে উপকৃত হচ্ছে তা হয়তো আপনি কখনো ভাবেননি। আর যদি এখনও আপনার নিয়মিত খাবারের তালিকায় কলা যোগ না হয়, তবে নিচের তালিকা পড়ার পর সেটি যে ভাববেন তা নিশ্চিত।

১। আরও বেশি শক্তি

ভিটামিন, বিভিন্ন ধরনের মিনারেল বা খণিজ এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস কলা, তবে ফলটি সবচেয়ে পরিচিত এর পটাশিয়ামের জন্য। ডায়েটিশিয়ান সুপ্রিয়া লাল জানান, “পেশি চলাচলসহ অন্যান্য শারীরিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য পটাশিয়াম খুবই জরুরি। বিশেষ করে কেউ যদি খুবই দৌড়াদৌড়ি বা নড়াচড়া করে, ব্যয়াম করে তবে মাসল রিকভারি এবং ক্র্যাম্প থেকে বাঁচার জন্য পটাশিয়াম অত্যাবশ্যাক।”

লাল জানান, যদি কেউ ঠিকঠাকভাবে পটাশিয়াম গ্রহণ না করে তবে সে খুব দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বে এবং মাসল ক্র্যাপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। একটি কলাতে ৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়ামের চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ না হলেও এটি যথেষ্ট। আরেকজন ডায়েটিশিয়ান অ্যালিসন থিবল্টের মতে, যদি পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ না করার তেমন অভ্যাস না থাকে, তবে প্রতিদিন একটি কলাই তাদের ক্লান্তি অনেকখানি কমিয়ে দেবে। যদি শরীরে আরও বেশি শক্তির প্রয়জন হয়, তবে নাট বাটার, গ্রিক ইয়োগার্ট কিংবা ডিমের মতো প্রোটিনের সাথে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন থিবল্ট।

২। আরও ভালো হজম

কেবল পটাশিয়ামের জন্যই কলা পরিচিত নয়, ফাইবারের চাহিদাও মেটাতে সাহায্য করে কলা। সুপ্রিয়া জানান, “ফাইবার পূরণের জন্য খুবই চমৎকার খাবার কলা, যেটি খাবার হজমে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খাওয়া সম্পূর্ণ পরিপাকতন্ত্রতে সুস্থ রাখে।”

ফাইবার ছাড়া কলাতে প্রিবায়োটিকও থাকে, যেটিও হজমে সাহায্য করে। “পেটের মধ্যে থাকা প্রোবায়োটিকগুলো প্রিবায়োটিক খেয়ে বেঁচে থাকে, যেগুলো মানুষের হজমশক্তিকে বাড়ায়। এগুলোর সুস্থতা ও পরিমাণ বাড়ানোর জন্যেও প্রিবায়োটিক জরুরি।”কলা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে কলা খাওয়ার অভ্যাস করার পর হজমশক্তির ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়বেই।

৩। ওজন কমানোর অস্ত্র

যদি আপনি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে চান, তবে খাবার তালিকায় কলাকে যুক্ত করে সাহায্য অরতে পারে। “স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন কমানোর জন্য কলা সাহায্য করতে পারে, যখন এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর স্নেহ (ফ্যাট) যুক্ত করা হবে,” বলে জানান থিবল্ট। তিনি জানান, কলায় রেজিজট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ বেশি থাকায় ব্লাড শ্যুগার যথেষ্ট পরিমাণে থাকে, যার ফলে শরীরে শক্তির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। এর ফলে শরীরে চর্বি জমা, অতিরিক্ত খাওয়া এবং শর্করা ও চিনির প্রতি অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয় না।

৪। অসুস্থতা কমানোর কার্যকর উপায়

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া কার্যকরী হতে পারে। এর একটি কারণ হতে পারে, এটি সরাসরি পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, এবং পরিপাকতন্ত্রের সাথে শরীর সুস্থ থাকার সম্পর্ক রয়েছে। থিবল্ট জানান, “কলায় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকে, যার মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটাইন সি, কপার, বি ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সাইডেন্টস।” এই প্রতিটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই ক্ষতিকর ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে খাবার তালিকায় কলাকে যুক্ত করা কার্যকরী ফল বয়ে আনতে পারে।

৫। শরীরের ভারসাম্য এবং পর্যাপ্ত ঘুমে সহায়তা

কলা যেহেতু ব্লাড শ্যুগার স্বাভাবিক রাখে, তাই শরীরে শক্তির পরিমাণ খুব বেড়ে বা কমে যায় না, এবং এর ফলে শরীরে ভারসাম্য বজায় থাকে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও প্রমাণিত হয়েছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি কলা খেলে রাতে ঘুম ভালো হয়। এর কারণ এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম এবং ট্রিপ্টোফান। ড. ক্রিস্টিন বিশারা জানান, “ম্যাগনেশিয়াম পেশিকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে, যে কারণে ঘুম ভালো হয়। অনেকেই, বিশেষ করে নারীরা রাতে ঘুমের সময় মাসল ক্র্যাম্প বা রেস্টলেস লেগে ভোগেন। ম্যাগনেশিয়ামের অভাব এর একটি কারণ হতে পারে। ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে একটি কলা খাওয়া এটি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।”

আশেপাশে প্রচুর পুষ্টিকর খাবার রয়েছে এবং ডায়েটিশিয়ানরা সব ধরনের খাবারের কম্বিনেশন মিলিয়ে খাবার খেতে বলেন। কিন্তু আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে কোনো কারণে সমস্যার মুখোমুখি হন, তবে দিনে কেবল একটি কলা খাওয়াই শরীরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। তাছাড়া কলার সুস্বাদ তো রয়েছেই! সূত্র : প্যারেড
সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন