নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা পালন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৩ | ১২:১১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৩ | ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা পালন

রোজা মানুষকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করে। আর এই সুশৃঙ্খল জীবনই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অপরিহার্য। তাই রমজান মাস শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু বিশেষ সতর্কতা, নিয়ম আর শৃঙ্খলা মেনে চললে বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগীই রোজা রাখতে পারেন এবং এতে তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সহজে ও নিরাপদে রোজা রাখার সুযোগ করে দিয়েছে।

যেসব জটিলতা হতে পারে

রক্তে সুগারের স্বল্পতা (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), রক্তে সুগারের আধিক্য (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), ডায়াবেটিস কিটো-অ্যাসিডোসিস, পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি।

রোজা পালনে ঝুঁকিপূর্ণ কারা

অতি বৃদ্ধ বা ভগ্ন স্বাস্থ্যের রোগী। বিগত তিন মাসের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা সুগার অধিক বেড়ে গিয়ে কিটো অ্যাসিডোসিস বা হাইপার অসমোলার স্টেটের ইতিহাস থাকলে। ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া বুঝতে অক্ষম ব্যক্তি। অনিয়ন্ত্রিত টাইপ-১ ডায়াবেটিস বা দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত টাইপ-২ ডায়াবেটিস। গর্ভবতী ডায়াবেটিস আক্রান্ত মা বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা (স্টেজ-৪ ও ৫), ডায়ালাইসিসের রোগী। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে। দিনে একাধিকবার ইনসুলিন গ্রহণ করলে। মারাত্মক ইনফেকশন, যক্ষ্মা, ক্যানসার থাকলে।

ঝুঁকি কম যাদের

যারা শুধু খাবার ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেন। যারা মেটফরমিন, গ্লিটাজোনস কিংবা ইনক্রিটিনজাতীয় ওষুধ খান। তবে যারা সালফোনাইলইউরিয়া ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাদের ঝুঁকি কিছুটা থাকে। ওষুধ ও ইনসুলিনের ধরন অনুযায়ী এর তারতম্য হয়।

ওষুধের ডোজ সমন্বয় করে নিন

অন্য সময়ের তুলনায় সাধারণত এ সময় মুখে খাওয়ার ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ কিছুটা কমিয়ে আনতে হয়। রমজানের আগে থেকে সকাল বা দুপুরের ওষুধ রাতে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অর্থাৎ যারা মুখে খাওয়ার ওষুধ খান, তারা সকালের ডোজটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সাহরির আধা ঘণ্টা আগে খাবেন। যারা দিনে এক বেলা ওষুধ খান, তারা ইফতারের আগে পরিমাণে একটু কম খাবেন। ইনসুলিনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। অর্থাৎ সকালের ডোজটি ইফতারের আগে, রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সাহরির আধা ঘণ্টা আগে। কতটা কমাবেন তা চিকিৎসক বলে দেবেন।

আরও যা যা করতে হবে

দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করে, এ রকম কিছু ইনসুলিন নেবেন। নিয়মিত সুগার পরীক্ষা করুন। রোজার সময় রাতে, এমনকি দিনেও সুগার মাপুন; যাতে ওষুধের মাত্রা ঠিকভাবে সমন্বয় করা যায়। ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। সাহরির দুই ঘণ্টা পর এবং ইফতারের এক ঘণ্টা আগে রক্তের সুগার পরীক্ষা করুন। যদি সুগারের পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ৯ মিলিমোল/লিটার হয়ে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। রোজায় যদি সুগারের মাত্রা ১৬ দশমিক ৭ মিলিমোল/লিটার বা তার বেশি হয়, তাহলে প্রস্রাবে কিটোন বডি পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে চামড়ার নিচে ইনসুলিন নেয়া যেতে পারে। রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করা, এমনকি প্রয়োজন হলে ইনসুলিন ইনজেকশন নেয়া যেতে পারে। গ্লুকোজের মাত্রা কমার কারণগুলো হলো, বড় ধরনের শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ইনসুলিন অথবা ট্যাবলেট গ্রহণ, ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ একই মাপের না হলে, খাবার খুব কম খেলে বা খাবার খেতে ভুলে গেলে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ

অসুস্থ বোধ করা, খিদে বেশি পাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, ঘাম বেশি হওয়া, শরীর কাঁপতে থাকা, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি। এটি ঘটলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হবে। রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে চা-চামচের ৪ থেকে ৬ চামচ গ্লুকোজ বা চিনি এক গ্লাস পানিতে গুলে খাওয়াতে হবে। গ্লুকোজ বা চিনি না থাকলে যেকোনো খাবার সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে মুখে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করে গ্লুকোজ ইনজেকশন দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে রক্ষার উপায়

মানানসই সামঞ্জস্যসম্পন্ন এবং নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ গ্রহণ করুন। কঠিন শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ পরিহার করুন। রোজার সময়ে দেরিতে ইফতার গ্রহণ করবেন না। লেখক: ইনডোর মেডিকেল অফিসার, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সাথী / পরিচয়

শেয়ার করুন