নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুলসুম আক্তার সুমী’র কবিতা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কুলসুম আক্তার সুমী’র কবিতা

কবিতার খোঁজে

হঠাৎ লুকালে কোথায়, কোন অনন্তে?
চেনাজানা পথে প্রান্তরে কত খুঁজে মরছি-
গাছে গাছে, লতায় পাতায় বিচিত্র রঙের সমারোহ,
সেই রঙের ছোঁয়া লেগেছে মনের কোণে।

সুনীল আকাশ আমায় ছন্নছাড়া করতে চায়,
প্রভাতের সোনার আভা নিশিথের ক্লান্তি হরায়।
তরুন কিরণে ভালোবাসা খুঁজি নির্দয় পাথারে,
কনে দেখা আলোর গোধুলি বরাবরের নিরব প্রেম!

এই সব আলো, ফুল, গাছও পাতাদের কোলাহল-
শুধু তুমি নেই আমার কাছে, কোথায় তুমি?
উচ্ছ্বসিত হাসির দমক, নবারুণে অবগাহন, আলোকচ্ছটা-
ভালো লাগছে না তোমার-কি চাও তুমি? নির্জনতা!?

তবে তাই হোক,
আঁধার নামুক ধরণীর পাঁজর জুড়ে-
আমি পোয়াতি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বসে থাকবো অযুত কাল!
তুমি আসবে তো?
থরো থরো প্রথম পরশের বিহ্বলতায় বরণ করে নেবো।
আসবে তো…

পুরুষের মনস্তত্ত্ব

তুমি সমর্পিত হতে চাও,
ভক্তিরসে ভেসে পূত হতে চাও,
ডুবে যেতে চাও গহীনে-
সেখানেও তোমার প্রভাব, প্রাধান্য এবং…

তুমি জোৎস্নার সাথে তুলনা করো আমার,
হাত ধরে নিতে চাও সোনাদীঘির ঘাটে,
চাঁদ দেখতে চাও চাঁদ পাশে রেখে…
জানতে চাও না আমি কী চাই!
কী, কখন ভালো লাগে আমার-
জল-জোয়ারের গল্প, জোছনার জলকেলি, নাকি নির্জনতার ঘ্রাণ?

আমায় তুমি জল বলো, নদী বলো,
ফুল-পাখি, পাহাড় চূড়ার আবাহন বলো।
কঠিন-তরল-বায়বীয় হাজারো বিশেষণের অলংকারে আবৃত করো,
মাথার উপর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত।
শুধু সমতার প্রশ্নেই ধনুকের মতো বেঁকে উঠে তোমার উদার মন!

আমাকে দেবী এবং দাসী
দু’টোই করো তুমি,
তোমার ইচ্ছায়, স্বার্থে, খেয়ালে এবং প্রয়োজনে।

পেলিসাইড এভিনিউর একাকী সন্ধ্যা

আজকের সন্ধ্যেটা ঘোরলাগা…
নিয়নের বাতিগুলো হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে,
প্রাণগুলো ম্রিয়মান।
এ পাড়ায় গাছেদের হাহাকার শুরু হয়ে গেছে—
শীতের আগমনে ঝরার খেলা!
কতক ঝরেছে কতক অপেক্ষায়—
আর ক’দিনেই ন্যাড়া মাথার বুড়ো হয়ে যাবে সব।

বাচ্চাকে তায়কোয়ান্দো ক্লাসে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,
হাঁটছি ইতস্তত!
পাশ দিয়ে ফায়ার ট্রাক চলে গেলো শা শা করে—
কোথাও আগুন লেগেছে, জ্বলছো দাউদাউ
পুড়ছে হয়তো কারো গোছানো স্বপ্ন!
পুলিশ স্টশনের দিকে তাকিয়ে
নিশুদের সংসার ভাঙ্গনের দিনগুলো দেখলাম।

পেছনে তাকিয়ে দেখি আজকের সারাটা দিন,
পথে পথে কত রঙ ছড়িয়ে আছে,
তার থেকে কিছুটা মনে, চোখে, হাতে মাখি—
মর্মে ছড়ানোর প্রার্থনা করি।
সন্ধ্যেটা গাঢ় হয়ে উঠে,
ফিরার পথ ধরি;
ক্লাস শেষ হলো বলে—
… কেউ চেয়ে থাকে বিবস বদনে।

অলঙ্ঘনীয় অভিমান

যখন সময় হলো জানার
দূরত্ব ঘনালো আমাদের চতুর্পাশে।
আমরা ভিন্ন গ্রহে ছিটকে যেতে যেতে
হারিয়ে গেলাম নিঃশব্দে,
আমাদের আর কথা হবে না কোনোদিন!

আমাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গেলো
এক অলঙ্ঘনীয় দেয়াল।
ফুরিয়ে গেলো বেলা- অবেলার খুনসুটি,
বাগ্বিতন্ডা, ঝগড়া-বাগড়া।
আমরা এক নিমেষে চিরঅচেনা হয়ে গেলাম।

বিবর্ণ আঁধার আমার

এভাবেই আমার দেরি হয়ে যায়,
এভাবেই আমার পুস্পিত প্রহরগুলো শেষ হয়ে য়ায়,
এভাবেই আমার মধুরেণু সময়গুলো ফুরিয়ে যায়,
এভাবেই আমার স্বপ্নিল রাতগুলো ভোর হয়ে যায়,
তোমাকে ছোঁয়া হয় না কিছুতেই!
অতলান্তিক তোমার দু’চোখ ভেবে ভেবে—
জলে নামা হয় না আমার!
বীজতলা শূন্য পড়ে থাকে—
অস্পর্শিল, অধরা তোমায় স্পর্শ করার অমোঘ আকাঙ্খারা
গহীনে গুমড়ে মরে।
আমি বিবর্ণ আঁধার কাটাই নিস্ফলা আর্তনাদে।
ইথারের গায়ে ছড়িয়ে পড়ে তার বুদ্বুদ—
তোমার এন্টেনায় কি ধরা পড়ে না একটুও
সেই বিপন্ন হাহাকার!?

 

দহন ভেতরে বাইরে

ওদের মাথায় রক্ত চড়ে গেছে,
ওদের গায়ে আগুন লেগে গেছে,
জ্বলছে-পুড়ছে-ফুটছে আপাদমস্তক,
ওরা পাগল হয়ে গেছে।

এমন লেলিহান শিখা দেখেছে কি কেউ?
এমন গতরের দহন কি হয়েছে কারো?
এমন আগুন বুকে হাসিমুখ কোথায় কে পেয়েছে কবে?

ওদের পাঁজরের হাড়ে আগুন লেগেছে,
ওদের চামড়ার লোমে আগুন লেগেছে,
ওদের মনের অতলে আগুন লেগেছে,
ওদের গায়ের চাতালে আগুন লেগেছে।

ওরা পাগল হয়ে গেছে,
গাছগুলো পাগল হয়ে গেছে…।
ওদের জ্বলে-পুড়ে মরা দেখে আমি উল্লাস করি,
বুঝতে পারো আমার নিষ্ঠুরতা!?

শেয়ার করুন