নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আহসান জামান এর কবিতা 

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৫১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৪:০৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আহসান জামান এর কবিতা 


তুমি

তুমি উড়ে যাচ্ছো পাখি পাখি মনের ভিতর
সারা গায়ে সন্ধ্যার অন্ধকার;
তোমার পালকের নীচে গুপ্ত বেদনা
গ্রীবায় ঝুলে আছে তৃষ্ণা।

তুমি রোদ্দুরের গন্ধ ভুলে গেছো
পায়ে বাঁধা অভিশপ্ত শিকল।

তুমি, শাশ্বত যাপনের খাঁদে
আটকে পড়া ডিঙিনৌকো, চারিদিকে
জলের উত্তাল, স্রোতেশ্বরী জলধারায়
তোমার হাসির নিক্কণ।

তুমি উড়ে যাচ্ছো স্বপ্ন ডানায়।


লোকটা

ব্যস্ত দৈনন্দিক ছকে সে কেবলই
ছুটে চলা কেউ; কখনও বাসের ভীড়ে
জনবহুল ফুটপাথে, ধাক্কা খাওয়া
মানুষগুলোর মতো সে কেবলই
একা হওয়া কেউ। লোকটা, অচল
মুদ্রার মতো থুবড়ে বসে থাকে
টুংটাং শব্দমোহন চায়ের খুপরি ঘরে।

তার চোখের ভিতর এক অচীন ঝর্ণা
গলে পড়ে ভাবলেশহীন; তার আঙ্গুলের
ফাঁকে জোছনা ঝরে গেছে রাতে;
ঝিঁঝির গানের স্বরে সে ক্রমাগত
কথা বলে; স্তব্ধ অন্ধকারে।

তার চারিপাশে দিগন্ত ছুঁয়ে দিচ্ছে
ক্রমশঃ ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ুরেখা পথ।

 


সম্পর্ক

সমুদ্র ঢেউয়ের নীচে জেগে থাকে
বন্ধন, একটা ঢেউ যখন আঁচড়ে
পড়ে আরেকটা ঢেউয়ের ভাঁজে
গহীনে অবাধ সম্পর্কটা আঁকড়ে
ধরে। ঢেউয়ের গায়ে লিখে রাখে
আরেকটা ঢেউয়ের নামধাম।

ঢেউয়ের প্রযত্নে ঢেউ; সামাজিক
বাঁধন; আমাদের চলাচল।


কালরথ

ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে দৌঁড়ে যাচ্ছে
আয়ুপথে; আমরা কজনা, চোখ পেতে
দেখে নিই হরেক যাতয়াত; কেউ যেনো
হঠাৎ চমকে দিয়ে, নিভে যায় এই
ভরসন্ধ্যা বেলায়। তারার প্রীদিম জ্বলে
ঠিকই, কেউ কেউ ফেরে না কেবল।

ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে থৈথৈ নদীর ঢেউ
মিলেমিশে একাকার; জলের পূর্নতা,
ভাগ্নাংশে যায় না লেখাজোকা। কেবল
এক ঢেউ এসে তীরে; আচমকা ফেরে
একা; তার বুকে জড়িয়ে যায় শূন্যতা।

ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে আমাদের চারিপাশ
পুরানো হতে হতে; স্মৃতি। তার সাথে
স্তব্ধতা জড়িয়ে বাড়ে, যোগাঙ্কের খাতা।

ঘড়ির কাঁটায় বেঁধে দূরত্বে চলে যায়
শৈশব, মায়ের আঁচল। দ্রাঘিমার
কোনাঙ্কে লাগে ব্যবধান; দেখি,
আলোকবর্ষের দূর; চড়কী মেলার মতো
রূপকথায় ভেসে যায়; আমাদের কালরথ।


সংসার 

হেমন্তের শীতের মতো আমরা জড়িয়েছি
সংসার। ভোরের আলোর ভিতর যখন
মেলেছি হাত পা; শিউলী শিশিরে দেখেছি
দেহভাঁজে গেঁথেছে মায়ামেদ। হাওয়ানোটে
লিখেছে পাখির কলতান।

কর্মঠ দুপুর গড়িয়ে বিকেলের গল্পে
নেমেছে সন্ধ্যার নিমন্ত্রণ; ঘরমুখী
মানুষের ভীড়ে ডাউন ট্রেনে ফিরেছি
পাখিদের নীড়ে; দু হাতে অন্ধকার সরিয়ে
আলোর অভিলাষে পেতেছি হাত
হাসি ও বেদনা জড়িয়ে কতশত
স্মৃতি আমরা করেছি জড়ো।

পথরেখায় পদচিহ্নে এঁকেছি
সংসার; অটুট আহ্বানে।

হাওয়ার ইথারে

তুমি কি হাওয়ার ইথারে
লিখেছো ক্ষয়িষ্ণু কালির অক্ষরে
হারানো গল্পের শিরোনাম।

বিকেলের মায়ায় যে রোদ্দুর
হারিয়েছে সমস্ত ব্যস্ততা।নির্জন
স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে সন্ধ্যার
শেষ ট্রেন; তার হুইসেলে কান্নার
রেশ মুছে, চলে গেছে শূন্যতায়,
কেন খুঁজছো হারানো নক্ষত্র।

তুমি কি বিষণ্ণতা কুঁড়িয়ে আনো
রাত্রির নির্জনতায়; ঘুম ঘুম পৃথুল
থেকে খসে পড়া জীবন গল্পের অনুচ্ছেদ।

শেয়ার করুন