নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো ওষুধ ছাড়াই যেভাবে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০:৪৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০:৪৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-

আমরা যখন কোনো খাবার খাই তখন সেটা পরিপাকের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। পরিপাকতন্ত্রের অন্যতম অঙ্গ হলো লিভার বা যকৃত। এখানে খাবার খাওয়ার পর পরিবর্তন, পরিশোধন ও সংরক্ষণের কাজ চলতে থাকে। লিভারে অনেক ধরনের কাজ হয় বলে একে শরীরের ল্যাবরেটারি বা গবেষণাগার বলা হয়।

প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি গ্রহণ করার ফলে তা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমা হতে থাকে। যদি অতিরিক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে চর্বি জমতে থাকে, তখন লিভার চর্বিতে ভারী হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে যত ধরনের রোগ হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলা ফ্যাটি লিভার। সাধারণ লোকের মধ্যে শতকরা ২৫ জনের ফ্যাটি লিভার রয়েছে।

অনেকের ধারণা অ্যালকোহল গ্রহণ করলেই লিভার খারাপ হতে পারে। আসলে তা নয়। বিভিন্ন কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। লিভারে জমা চর্বি থেকে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তাকে বলে নন অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা ন্যাশ। ন্যাশ আক্রান্ত রোগীর রোগ আরও তীব্র হলে লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ক্যানসার হতে পারে। এজন্য ফ্যাটিলিভার অসুখটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

যদি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মান উন্নত করা না যায়, তাহলে ফ্যাটি লিভারের কোনো চিকিৎসাই কাজে লাগে না। এ ক্ষেত্রে রোগীদের ওজন কমিয়ে আদর্শ ওজনে নিয়ে আসতে হবে। কারণ অধিক ওজনের ফলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়। এতে শরীরের কোষে সংরক্ষিত চর্বি ভেঙে মুক্ত ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। লিভার এ ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করে নিজের ভেতর জমা করতে থাকে।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। বরাদ্দকৃত ক্যালরি থেকে ৫০০-১০০০ ক্যালরি খাবার কম খেতে হবে। মাছ-মাংস-ডিম-দুধ সীমিত পরিমাণে খাবেন। আমিষের পরিমাণ হবে ২০ শতাংশ। এর মধ্যে মাছই উত্তম। উদ্ভিদ আমিষ যেমন- ডাল, বাদাম, সিমের বিচি, মটরশুটি, ছোলা আশযুক্ত খাবার অবশ্যই খেতে হবে।

ওমেগা থ্রি ও ওমেগা নাইন জাতীয় অসম্পৃক্ত তেল খাবারে থাকলে ভালো হয়। খাবারে চর্বি ও তেলের পরিমাণ হবে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দুই ধরনের তেলই থাকবে। তবে ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে অসম্পৃক্ত তেলই ভালো। এর উৎস হলো মাছ ও উদ্ভিজ্জ তেল। এই ক্ষেত্রে জলপাইয়ের তেল ও তিসির তেল উত্তম। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো খাবার ভেজে খেলে সেটাতে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। এই ট্রান্সফ্যাট বাদ দিতে হবে।

সফ্ট ড্রিংকস, গ্লুকোজ, কৃত্রিম জুস, সস, রসে ডোবানো মিষ্টি, জ্যাম-জেলী অর্থাৎ ফ্রুক্টোজযুক্ত খাবার বাদ দিলে ভালো হয়।
ডুবো তেলে ভাজা খাবার, তৈলাক্ত খাবার, ঘি, চিনি, অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে।

মিষ্টি ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, পাকাকলা, আঙ্গুর, যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। তবে আনারস, আতাফল, আমড়া, জাম্বুরা, পেয়ারা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন ৩০ গ্রাম আখরোট খেলে লিভারে চর্বির পরিমাণ কমে যায়।

ফাস্টফুড, টেস্টিং সল্ট, সয়াসস পরিহারযোগ্য। এগুলো লিভারে চর্বির পরিমাণ যেমন বাড়ায়, তেমনি ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমায়।
দিনে ২-৩ কাপ চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি পান করা যেতে পারে।

যে কোনো ধরনের শাক, সাজনা, কলার মোচা, ঢেড়স, ডাটা, লতি, মটর, শিম, গাজর, শালগাম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, পটল, কচু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা ইত্যাদি খেলে ভালো হয়।

ফ্যাটি লিভার থেকে রক্ষা পেতে হলে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে। ডায়াবেটিস ও রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন স্বাভাবিক রাখতে হবে। অর্থাৎ বিএমআই ১৮.৫-২৪.৫-এর মধ্যে রাখতে হবে। তবে দ্রুত ওজন না কমিয়ে ধীরে ধীরে কমালেই ভালো। শরীরে ওজন ৩-৫ শতাংশ কমালে ফ্যাটি লিভার থেকে সৃষ্ট ফাইব্রোসিস ভালো হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে ১ কেজির মতো কমাতে পারলে ভালো হয়। মনে রাখতে হবে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের সঙ্গে শরীর চর্চাও জরুরি। আখতারুন নাহার আলো চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম।

শেয়ার করুন