নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লবণ বিষয়ক ৭ ভ্রান্ত ধারণা!

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৩ | ০১:১০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ মে ২০২৩ | ০১:১২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
লবণ বিষয়ক ৭ ভ্রান্ত ধারণা!

খাবারে লবণের কার্যকারিতা নিয়ে রয়েছে বহু তর্ক – বিতর্ক। বিশেষ করে রান্নায় ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় লবণ ব্যবহারে বহু ভ্রান্ত ধারণা আজও বিদ্যমান। হাজার বছর ধরে রান্নায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে লবণ ব্যবহার করা হচ্ছে। লবণ যেমন খাবারের স্বাদ বাড়ায় তেমনি দেহের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

লবণের অন্যতম উপাদান সোডিয়াম। শরীরে খনিজটির অতিরিক্ত উপস্থিতি উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই খাবারে ঠিক কতটুকু লবণ ব্যবহার করতে হবে, সেটিও বিবেচ্য বিষয়। তবে সর্বোপরি খাবারে লবণের কার্যকারিতা নিয়ে রয়েছে বহু তর্ক-বিতর্ক। বিশেষ করে রান্নায় ও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় লবণ ব্যবহারে বহু ভ্রান্ত ধারণা আজও বিদ্যমান।

১. লবণ শুধু খাবারের লবণাক্ত স্বাদই বাড়ায় : লবণ শুধু খাবারের লবণাক্ত স্বাদই বাড়ায় এমন ধারণাটি ভুল। কেননা লবণ খাবারের তিক্ত স্বাদ কমিয়ে আনে। একইসাথে অনেক সময় খাবারের ঘ্রাণ বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। পাস্তা রান্নার সময় ফুটন্ত পানিতে লবণ ব্যবহার করলে সেটি পাস্তাগুলোকে পরস্পরের সাথে লেগে যাওয়া থেকে অনেকাংশে বিরত রাখে। একইসাথে সবজি রান্নার সময় লবণ ব্যবহার করলে সেটি সবজির ভেতরের পুষ্টিগুলোকে ধরে রাখে। আবার ডিম ভাজার সময় লবণ ব্যবহারে সেটি ডিমের মধ্যেকার পানিকে বের করে প্রোটিন বন্ডকে শক্ত করে ফেলে। ফলে ডিম ভাজতে সহজ হয়। এছাড়াও মাংসে লবণ ব্যবহার করলে এটি খাবারটির আর্দ্রতা ধরে রাখে।

২. ভিন্ন ধরণের লবণ একই খাবারে ব্যবহার করা যায় : অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে যে, খাবারের এক রেসিপিতে নির্দিষ্ট ধরণের লবণের পরিবর্তে একই পরিমাণে অন্য ধরণের লবণ ব্যবহার করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সকল লবণের দানার আকার সমান নয়। একধরণের লবণের এক চা পরিমাণের সাথে অন্য লবণের এক চা চামচ পরিমাণ সমান নাও হতে পারে।

মিহি সামুদ্রিক লবণ ও সাধারণ রান্নার লবণের দানা ও সোডিয়ামের উপস্থিতি প্রায় একই ধরণের। তাই খাবারে এ লবণ দুটি একটির পরিবর্তে আরেকটি সমান পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে। তবে অন্য লবণের দানা অপেক্ষাকৃত বড় হতে পারে। এমনকি ব্র্যান্ড অনুযায়ীও পার্থক্য থাকতে পারে। তাই না জেনে এক ধরণের লবণের পরিবর্তে অন্য দরনের লবণ রান্নায় ব্যবহার করা যাবে না।

৩. বাড়ির খাবারে ব্যবহৃত লবণই সোডিয়ামের প্রধান উৎস : বাড়িতে খাবার তৈরির ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছামতো কম বা বেশি লবণ ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সমস্যা হয় বাইরের খাবারের ক্ষেত্রে। কেননা বাইরের খাবারে লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, দেশটির মানুষের খাদ্যতালিকার ৭০ ভাগ সোডিয়াম আসে রেস্টুরেন্ট ও প্যকেটজাত খাবার থেকে। তাই দেহে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে বাড়ির বাইরের কী ধরণের খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির দিকে নজর দিতে হবে।

৪. বেকিং এর ক্ষেত্রে লবণ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় : অনেকের মাঝেই ভুল ধারণা আছে যে, বেকিং এর ক্ষেত্রে লবণ শুধু লবণাক্ত স্বাদ আনতেই কার্যকরী। তবে এছাড়াও বেকিং এ আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হিসেবে লবণ কাজ করে থাকে। ফিলাডেলফিয়ার মোনেল ক্যামিকেল সেন্সেস সেন্টারের গবেষণা মতে, লবণ খাবারের তিক্ত স্বাদ কমাতে চিনির থেকেও বেশি কার্যকরী।

লরেন চ্যাটম্যান তার ‘বেকিং এন্সার’ বইয়ে জানান, ব্রাউনিতে চকলেটের স্বাদ বাড়াতে কিংবা ভুট্টা রুটির ক্ষেত্রে ভুট্টার স্বাদ বাড়াতে লবণ কার্যকরী। লবণ বেকিং এর সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে স্টার্চের পানি শোষণের পরিমাণ বাড়ায় এবং খাবারগুলোকে ফুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও লবণ ইস্টের কার্যকারিতাকে কমিয়ে আনে যা বেকিং এর ক্ষেত্রে স্বাদ ও রঙ বৃদ্ধিতে সহায়ক।

৫. লবণ পানি ফোটাতে সহায়তা করে : অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, পানি ফোটানোর সময় তাতে লবণ দিলে এর গতি বেড়ে যায় কিংবা কমে যায়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে দ্রুত পানি ফোটানোর সাথে লবণের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং পানি ফোটানোর সময় লবণ ব্যবহার করলে পানির স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়। ম্যাকগি বলেন, “পানিতে লবণ ব্যবহারের ফলে লবণের অণুগুলো অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ করতে থাকে। এতে করে পানি ফোটাতে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি তাপের দরকার হয়।”

বৈজ্ঞানিকভাবে লবণ ব্যবহারে পানি ফোটাতে বেশি সময় লাগার ব্যাপারটি প্রমাণিত হলেও সেটি প্রতিদিনের রান্নার ক্ষেত্রে খুব এক প্রযোজ্য নয়। কেননা গ্যালনের এক চতুর্থাংশ পরিমাণ পানির স্ফুটনাংক ১ ডিগ্রী ফারেনহাইট পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে এক আউন্স পরিমাণ লবণ মেশাতে হবে। যা প্রতিদিনের রান্নার ক্ষেত্রে একেবারে প্রযোজ্য নয়।

৬. আয়োডিনবিহীন লবণ দেহের জন্য ক্ষতিকারক : আয়োডিন দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক খনিজ। এটি থাইরয়েডের কার্যক্রমে সহায়তা করে এবং এর অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়। সমুদ্রের নিকটবর্তী এলাকার মাটি ও পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে আয়োডিন থাকে। অন্যদিকে যেসব এলাকা সমুদ্র থেকে দূরবর্তী, সেসব এলাকার মানুষদের আয়োডিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ১৯২০ এর দশক থেকে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার শুরু হয়।অনেকেরই সেই থেকে ভ্রান্ত ধারণা যে, আয়োডিনবিহীন লবণ খেলে সেটি দেহের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা যায়, খাবারে প্রতিদিন আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারে এত জোর না দিয়ে বরং গর্ভকালীন ও বিশেষ শারীরিক অবস্থায় থাকা মানুষের শরীরে আয়োডিনের অভাব পূরণের বিষয়টিকে আলাদাভাবে নজর দিতে হবে। কেননা স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন শরীরের জন্য ১৫০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিনের প্রয়োজন; যা মাছ ও দুধের মতো খাবার থেকেই পূরণ হয়ে যায়।

৭. দামী লবণ খাবারের স্বাদ বেশি বাড়ায় : খাবারে দামী লবণ ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ বেশি বৃদ্ধি পায়- এই ধারনার কোনও ভিত্তি নেই। কেননা লবণের গঠন যতই আলাদা হোক কিংবা দামে যতই বেশি হোক; শেষমেশ সেটি খাবারের সাথে মিশেই যাবে। তাই সাধারণ লবণের তুলনায় দামী লবণ আলাদা করে খাবারের স্বাদ বাড়াতে পারে না। তবে পুরো খাবার প্রস্তুত করার পর যদি বাইরের দিকে লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়, তখন সাধারণ লবণের তুলনায় স্বাদের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন