নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রিজার্ভের পতন ঠেকানো না গেলে বড় বিপদ হতে পারে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
রিজার্ভের পতন ঠেকানো না গেলে বড় বিপদ হতে পারে

প্রতীকী ছবি

চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসন ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পাঁচটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। এগুলো হলো- ডলারের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, রেমিট্যান্স বাড়াতে অর্থপাচার ও হুন্ডির ব্যবসা বন্ধ করা, রিজার্ভের পতন ঠেকানোর পদক্ষেপ গ্রহণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধি ও আমদানিযোগ্য পণ্যে করছাড়, পণ্যবাজারের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা এবং খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সংস্থাটির এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়। বৈঠকে অর্থসচিব, চার ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সানেমের পক্ষে অংশ নেন নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ও গবেষণা পরিচালক ড. সাইমা হক বিদিশা।

দেশের আর্থিক সংকট নিরসনে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে গতকাল সানেমের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, আমরা সানেমের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। এর মধ্যে প্রথমে বলেছি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আনতে অর্থপাচার ও হুন্ডির ব্যবসা বন্ধ করার কথাও বলেছি। তা না হলে বৈধপথে রেমিট্যান্স আসা কঠিন হবে। দ্বিতীয়ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে আশঙ্কার কথা বলেছি। আমরা বলেছি ডিসেম্বর নাগাদ রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে। তাই এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। কারণ রিজার্ভ হচ্ছে এমন একটা সূচক, যা কোনো দেশের সংকটের সময়ও স্বস্তি দেয়। এটা যদি ক্রমশ কমে যায়, তা হলে আরও বড় বিপদ হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি থাকবে।

সেলিম রায়হান বলেন, তিন নম্বরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সুদের হারকে আরও বাজারভিত্তিক করার কথা বলেছি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সুদের হারে সীমারোপের বিষয়টি ভুল নীতি ছিল। এটার খেসারত এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। পরে বাজারভিত্তিক করার চেষ্টা করা হলেও সেটা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হয়নি। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এককভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা নেই। এখানে রাজস্বনীতিরও ব্যাপার আছে। বিশেষ করে আমদানিযোগ্য পণ্যের ওপর কিছু করছাড় দিয়ে যদি দেশের বাজারে পণ্যমূল্য কমানোর সুযোগ থাকে, সেটারও চেষ্টা করার কথা বলেছি। এ ছাড়া পণ্যবাজারে যে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা চলেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বশেষ খেলাপি ঋণের ব্যাপারেও শক্ত অবস্থানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ এটা ব্যাংকিং খাতে বড় ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

সাইমা হক বিদিশা বলেন, আমরা বলেছি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি এবং রাজস্বনীতি পরিবর্তন ছাড়াও বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আমাদের দেশে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এই জায়গাগুলোতে আলাদাভাবে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদে এটা কাজে আসবে না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত ডলারের অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল রেটে পার্থক্য থাকবে, ততক্ষণ রেমিটাররা অবৈধ পথেই ডলার পাঠাবেন। এ ছাড়াও একটা শ্রেণি রয়েছে যারা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসা করে। এই চ্যানেলটা বন্ধ করার জন্য শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়, ততক্ষণ ফরেন কারেন্সিতে একটা আশঙ্কা থেকেই যাবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণসহ আর্থিক খাতের সুশাসন ফেরাতে না পারলে নীতি পরিবর্তনের সুফল যথাযথভাবে আমরা পাব না। সূত্র : আমাদের সময়

শেয়ার করুন