নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন : রোদে কাজ করা মানুষের বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন : রোদে কাজ করা মানুষের বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ

পৃথিবীর জানা ইতিহাসে গত জুলাই ছিল উষ্ণতম মাস। গত ৮ আগস্ট ইউরোপীয় জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করে। প্রাক–শিল্পযুগের গড় তাপমাত্রার চেয়ে এই তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পৃথিবী কেমন হতে পারে বিভিন্ন ঘটনায় তার একটু ধারণাও এরই মধ্যে পাওয়া গেছে।

এই গ্রীষ্মে দাবানল ও তাপপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া উত্তর গোলার্ধ ঘিরে ফেলেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তা আরও বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে গরমের কারণে স্ট্রোকে মৃত্যু। এর সঙ্গে বাড়তে পারে কম জানা বা অজানা উৎস থেকে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অনেক রোগের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এসব রোগের মধ্যে আছে এমন কিছু রোগ যার নাম খুব কম মানুষই শুনেছে। তাপ ও আর্দ্রতা যত বাড়বে তত বাড়বে এসব রোগের ব্যাপকতা। ২১ বছর আগে এল সালভাদরের আখ চাষি ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রথম এ ধরনের কিডনি রোগ ধরা পড়ে।

মেসো–আমেরিকান নেফ্রোপ্যাথি বা মধ্য আমেরিকার মানুষের কিডনি রোগটিকে এখন অপরিচিত উৎসের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (CKDnt) নামে পরিচিত। যারা উচ্চ তাপমাত্রায় বাইরে দীর্ঘসময় কায়িক শ্রম দেন তাঁরা এ ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী আমেরিকান সোসাইটি অব নেফ্রোলজিতে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই রোগ নিয়ে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত হলে কিডনির কার্যক্ষমতা দ্রুত গতিতে কমতে থাকে। প্রথম চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে মধ্য আমেরিকায় এই রোগে অন্তত ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বাইরে সারা বিশ্বে এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার।

থাইল্যান্ডের কৃষক ও লবণ চাষি, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় নেপালি অভিবাসী শ্রমিক, ভারতের ইটভাটার শ্রমিক ও নারিকেল চাষি এবং মিসর ও ক্যামেরুনের খামারি ও খনি শ্রমিকদের মধ্যেও এই রোগ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও নিরক্ষরেখায় অবস্থিত অঞ্চল যেখানে উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ আর্দ্রতা এবং মানুষ কঠোর কায়িক শ্রম দেয় সেখানে এই রোগের বিস্তার ঘটতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যত বাড়ছে তত এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এটিই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিশ্বের প্রথম পেশাগত রোগ। খনি শ্রমিকদের ব্ল্যাক লাং (ফুসফুস কালো হয়ে যাওয়া) রোগের মতো এই রোগও কর্মস্থলের পরিবেশের উন্নতি করার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এ নিয়ে মহামারি বিশেষজ্ঞ ও সিকেডিএনটি রোগ বিশেষজ্ঞ জেসন গ্ল্যাসারের সঙ্গে কথা বলেছে মার্কিন সাময়িকী টাইম। গ্ল্যাসার নিশ্চিত যে, যুক্তরাষ্ট্রের যে যে অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে দাবদাহ দেখা গেছে সেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যেখানেই ভারী কাজের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রা আছে কিন্তু শ্রমিক নিরাপত্তা নেই সেখানেই এই রোগ আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, কয়েকটি ক্লিনিক ছাড়া কেউ এই রোগের তথ্য–উপাত্ত রাখছে না।’

জটিল এই কিডনি রোগের পরামর্শক সংস্থা লা ইসলা নেটওয়ার্কের প্রধান গ্ল্যাসার বলেন, ‘এই রোগের প্রতিরোধ খুবই সহজ, কিন্তু এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এই রোগে আক্রান্ত হলে কিডনি প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিস ছাড়া উপায় থাকে না।’

সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম (পরিপাক তন্ত্রের সমস্যা) বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু সিকেডিএনটি রোগটি উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত। যারা বাইরে উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে কায়িক শ্রম দেন ও খনি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

শেয়ার করুন