নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈয়দ কামরুল এর কবিতা

বেদী চাই অথৈ আলোর সকাল

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বেদী চাই অথৈ আলোর সকাল

১.বেদী চাই অথৈ আলোর সকাল

(চন্দ্রমৌলি গ্রীবায় লিখি যমজ ম্যাড্রিগাল —

শ্রেষ্ঠ সুহৃদ, রাফিয়াতুল নিশাত কে)

জলবতী মেঘডানা ছিড়ে গর্ভবতী বৃষ্টিভার ঝরে

অঝোর জর্জর —

তোমার লাজুক ঝিনুক সিন্দুকে প্রিয় বিষ।

শিল্প সঙ্গমে জাগুক যামিনী উষ্ণীষ

দাহ চৌচির জমিনে বাজুক সিম্ফনি সুর শততার সন্তুর।

ভরে গেলে গ্যারিসন ছুটে যায় বিপুল আগুন

দূরের পালঙ্ক বালিশে স্বপ্নময় ঘুমে,

শিশুর দোলনায়,

পিতার ঢুলুনী চোখে,

ওডেসার সিঁড়ির মতো বত্রিশ ধানমন্ডি সিঁড়িতে,

অনেক আকাশ পোড়ে ডানার পালকে ওড়ে

ইনফার্নো দীঘল আগুন —

“হেল্প ইজ অন দ্য ওয়ে”—

চিরকাল কল্যাণের নামে ছোটে রাষ্ট্রবিজ্ঞান

আগুনে কামানে মোড়া পেন্টাটুস কনভয়।

দেখছো না গায়ে আগুন নিয়ে নগর ছুটছে অরণ্যের দিকে

বনভূমি পুড়ছে সবুজ ছাই

সমুদ্র বোঝাই টর্পেডো ডুবো ড্রোন —

বেসামাল জল, ভয়ার্ত পাতাল

মাশরুম মেঘে টলোমল জল খুঁজছে ঠাঁই

অতিকায় তিমি কাঁন্দে পসিডন জলের জিকিরে নবী খোয়াজ খিজির।

শব্দভূক সীসা ঢেলে বধির করেছি কান —

প্রতীকে, পর্দায় ঢেকে রাগীমুখ কাটাই নির্বোধ কাল

তোমার বুকে চাই জননীর মানবিক জায়নামাজ—

বেদী চাই অথৈ অরোরা সকাল।

উপুড় স্থাপিত মুখ পিনোন্নত সরোজে লুকাই।

রোদের ফুলের মতো কপালে পরে নাও সান্দ্র বিকাল

লাক্ষ্মা পায়রার মতো নেচে যাক ফুলেল শাড়ির পাড়

টিউলিপ পাপড়ির মতো চুম্বনযোগ্য পায়ের পয়ার

মেলে দাও স্বর্গ সিঁড়ির ধাপ

চন্দ্রমৌলি গ্রীবায় লিখি যমজ ম্যাড্রিগাল।

ড্রেনের ঝর্ণায় রক্তভূক জোঁকের সাঁতার ছেড়ে

নিটোল নীল লাগুন জলে ডুবে যাই।

কাল সকালে কেউ চড়াবে ন্যুকে আগুনের অন্ধকার—

শ্মশানের গন্ধের মতো উড়বে পোড়া মানুষের ছাই

পোড়ামাটি সন্ধ্যায় উড়বে না সুদর্শনা

মাতিসের নগ্ননীল জ্যামিতির বাঁক,

গোলাপ উরুর ওম।

২.
না অর্জুন না একলব্য

চাঁনমারি করিনি কখনো — দ্রোণে কেটে দিইনি আঙুল,

দেবতার পায়ে দক্ষিণা প্রতুল।

যে যাবে যাক যুদ্ধ কি জঙ্গলে সাধক

আনত যে হবে হোক বৈশ্য একলব্য

গান্ডিব পড়ে থাক অন্ধ বাউলের কান্ধে।

তোমার যুদ্ধে আমার নেই কোন সায়।

যুদ্ধ ছিল না কখনো জনযুদ্ধ জয়।

কার জন্য যুদ্ধ তবে — যুদ্ধ মহাকাব্য!

আনত যে হবে হোক বৈশ্য একলব্য।

রবীন্দ্রনাথের মতো বানাবো নৌকো।

জলে শুয়ে বলাকার প্রতীকে,পর্দায়

লিখব শ্লোক পলায়নবাদী কাব্য;

প্রেম ও দাসত্ব চিরকাল চায় রক্তের টিপসই।

লুসিফার চেয়েছিল দাসখতে ফস্টাসের রক্ত।

কাটি যদি কাটবো আঙুল একছত্র প্রেমপত্র লিখিবার তরে।

লিখবো সে হোকনা মেঘ অথবা আশরীর সিম্যানটিক্স।

ট্রয়ের হেলেন নয় —

নেবো সেমন্তির সকাল ছড়ানো চোখ।

উত্তরের আকাশ নয় —নেবো সেমন্তির আলোর আভোর —

সিজদার মতো নমিত চুমুক নেবো জোয়ারপ্রবণ বুক।

না-রুমি না-যামি

ঘর ছেড়ে আসি আমি বুনো খিদে গন্দমের পাপ!

পাপের দুহাতে খুলবো নীল দরোজার কপাট

যতোই পরাও হাতে হাতকড়া

ঢালো গালে নীল হ্যামলক।

অচল জলের খেয়া

মানব, তুমি খুব বেশী কথা বলো। স্বরাঘাত মানো না মীড়,

কথার সংগীত, গমক কি গিটিকিরি।

চিৎকারে, শীৎকারে ভাঙাও পিঁপড়েরও ঘুম।

পাখির কূজন থামে থতোমতো রাত

চিতার দৌড়ের মতো ছোটে বন ইনসমনিয়া

বন ডাকাতের কুড়োল কাটে সবুজ তরুর তনু।

সবুজের গায় পরাও মরুর দাহ

মাশরুম মেঘে আন্ধারমানিকে রোদ—

উধাও মৌচাক

ফেরারি গুঞ্জরার মতো প্রলীন পূর্নিমা!

জলে জ্বলে ফসফরাস জলের সন্ত্রাস।

সামরিক খননে যায় থেমে লাব্রাডার স্রোত।

ক্যান্সারে কাঁন্দে অতিকায় তিমি — কাঁন্দে গহীন জল।

জলের নিতলে নেই জলনবী খোয়াজ খিজির।

তেজী মাঝির বাজুর বৈঠা কাটে না তীব্র ঢেউ

রাক্ষস চুমুকে অহি করে পান অভিসারী নদী।

আমার তো নেই ইন্দ্রের মতো বজ্রবোঝাই ঝড়

রিক্সার চাকা ধূধূ বেয়ে যায় বালিয়াড়ি —

ছোটে স্মৃতি জলমহল অচল জলের খেয়াতরী।

৩.
অবিচ্ছেদ্য নদী ও জলের অর্কেস্ট্রা

এক
ঘাসরং রূপসার মতো ডাঙর তোমার জলে

ছুটেছি বহতাব্রত ডুবমগ্ন ডুবুরীর মতো।

স্বরলিপি শিখিনি তো জলতান — অর্কেস্ট্রা জলের।

লিখেছি কবিতা ধারা অজন্তাক্ষর — স্রোতপাথর

সবুজ দেয়ালে প্রথমা তোমারে হৃৎঝর্ণা টানে।

আর কোনো ছন্দ গনিত কষিনিতো কস্মিনকালে।

রবীন্দ্রনাথের ছিল মাত্রাবৃত্তে বেহাল বিদিশা!

দক্ষ দর্জি সে মেপেছিল ছিড়ে পূর্বগ গজফিতা।

নাদান খলিফা না জানি সেলাই শিল্পের দিশা!

ঘাসরং রূপসার মতো ডাঙর তোমার জলে

শেকলে বাঁধিনি কোন কূলহারা স্রোত স্বাধীনতা।

অ্যানারক্সিয়া বুক বানাইনি টেনে স্ফীত ডি-কাপ।

ম্যামোপ্লাস্টি স্তন স্থির প্রস্রবন,

হরিণশাখা নাব্যনদের জলে নামিনি স্নানে।

দুই
যেতে যেতে মর্মমূলে দিয়েছিলে রুয়ে কবিতার ভ্রূণ!

সেই থেকে অন্ধ অশ্বের পিঠে মর্মদ্রাবী দু:খের সহিস

ঘুরেছি দিগ্বিদিগ — রাতভর বাজিয়ে বিভোর সিম্ফনি।

তোমার দূরতা জ্বেলেছিল অনপনেয় গোপন দহন।

রূপসার জলিলিপি লিখি ঘুমহীন রাত্রিকথা।

লোহার জ্যাকেট মোড়া গেট টপকে দেখেছি তোমার না-থাকা! যেভাবে শেকলে বাঁধা কারা-চোখ দ্যাখে আকাশরেখা পাখিবিহীন দিন।

ঘাসরং রূপসার মেয়ে,

পাহাড়ের ঢালে তুমি ছুটেছিলে বিতস্তায়

প্রজাপতি কিম্বা ঋষি কাস্যপ তোমাকে ডেকেছিল বুঝি!

পার্বতী ছিলে না তুমি — ছিলে তুমি আমার কবিতা।

ঝিলামের পাহাড় ছেড়ে দাঁড়ালে টেমস এর তীরে

হলুদ স্কার্ফে নীল কুয়াশা রোদ্দুর — কতোদূর, কতোদূর!

কোন ভূগোলের দুপুর, কোন কালা, কার নদী, তুনাভা,

এ্যারোফোন — কার এতো জোর দ্রবী করে তোমার পরাণ!

পেত্রায় ইহুদি নারীর মুখে, আলেকজেন্দ্রিয়া, বসরার

গোলাপ সুন্দর গালে,

মহুয়া মদের মতো কুর্দী গতরে

পাইনি তোমার সবুজাভ ঘাম! ধানিরং কাম!

রূপসা মোহনা মোড়ে আজো বাজে ভাস্কর বৈয়া বাখলে!

নৌকার গলুই গায় ভাটির ঘোলাটে ভাটিয়ালী

লোহার জ্যাকেট মোড়া গেটের ওপারে কুজো চোখ দ্যাখে তোমার না-থাকা।

তিন
চল্লিশ বছর পর তোমাকে দেখেছি দৃকের দেয়ালে।

থমকে দেখেছি চিরপ্রিয় চারুরূপ।

সরাসরি, কোনাকুনি, ক্লোজআপ, মিডলং, দূর থেকে দৃক।

ম্যুজে দ্যু লুক্সেমবারর্গের দেয়ালে, কাঁচের কাসকেডে

হেমিংওয়ে যেভাবে দেখেছিল সেজানের রঙ সেতু।

সময়ের তেমাথায় দাঁড়ায় তোমার নির্মাণবিদ

কবি ও সময়

সময়ের তিন মাত্রার ভাস্কর —

তোরণে দাঁড়িয়ে ফিরে যায় দূরের মিছিলে,

সামনের সড়কে বানায় শব্দসেতু।

আমার লুলো হাতে যা লিখি তাতে মেলে না বিদিশা!

নাদান খলিফা না জানি সেলাই শিল্পের দিশা।

প্রেমের অনিন্দ্য প্রেমিক রোমিও ছেঁটে দিলে মন্ট্যাগু

শেক্সপীয়র কাটে অন্তমিল

ব্লাংক ভার্সে পায় কবিতা অজন্তাক্ষর স্রোত স্বাধীনতা

প্রথাবিরুদ্ধ পথে ছুটে আসে ঝড় নতুন পঙক্তিমালা

অনিন্দ্য কবিতা প্রণয়ের গাঁথা।

চার
জেনেছি এখন তুমি অনেক হয়েছো খ্যাত।

দেশের রূপকারেরা তোমাকে চেনে।

ট্রান্স-আটলান্টিক দূতাবাস তোমাকে চেনে।

কনসাল জেনারেল তোমার পাসপোর্ট দেখেই ভিসা দেয়।

বিমান বন্দর তোমাকে যেতে দেয় তল্লাশি ছাড়া তরতর

তুমি অপ্রতিরোধ্য।

শুধু আমি আর চিনি না তোমাকে।

তোমাকে ঘিরে আমার গভীরতম আবেগ তবু

ঘাসরং রূপসার জল তরঙ্গ তোলে।

কবিতার ভিত্তিমূলে আছে বড়ু চন্ডীদাস।

তোমার ছবির ভিতর রেখেছি জমা নদী গতিতমা!

শুধু তোমার ফিউশান থেকে তুলে আনতে পারিনা

আদিতম ঘাসরং রূপসার গান

সংগীতে সংঘাত বাঁধে।

তোমার সঙ্গে অনঙ্গ অঙ্গ আমার বাঁধা।

নাচ ও নর্তকীর মতো অবিচ্ছেদ্য গতরের সবুজ ঘাম দ্রাক্ষাকাম টানে।

কবিতার কাছে তুমি যাকে দিয়েছিলে দত্তক

অনাথ ঘরের কোনে সে লেখে রাগী শব্দ

ঘোলাজল রূপসার জলতান — অগ্নিজলের অর্কেস্ট্রা।
নিউ ইয়র্ক আগষ্ট ২০২৩

 

শেয়ার করুন