নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ মেয়াদি মানসিক চাপ বাড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ০১:০৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ০১:০৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
দীর্ঘ মেয়াদি মানসিক চাপ বাড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি

নানান ধরনের খবর, সংসার সামলানো, সম্পর্কের জটিলতা- নানান কারণে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। তবে অনেকদিন ধরে মানসিক চাপে থাকলে শরীরের ওপরেও চাপ পড়ে। এই বিষয়ে সিএনএন ডকটম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শিক্ষা-বিষয়ক প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠান ‘লন্ডন’স ট্রেইনফিটনেস’য়ের প্রশিক্ষক ও পণ্য-উন্নতকরণ ব্যবস্থাপক রিচার্ড স্ক্রাইভনার বলেন, “মানসিক চাপ একেবারে খারাপ না।” “তবে চাপ যদি নিয়মিত হতে থাকে তাহলে সেটা ব্যক্তির জন্য খারাপ। বিশেষত বয়স্কদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”

মানসিক চাপ কি অসুস্থতার জন্য দায়ী?
বোস্টনের ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল অ্যান্ড ম্যাসাচুসেটস জেনারাল হস্পিটাল’য়ের ‘সেন্টার ফর প্রিসিশন সাইকিয়াট্রি’র সহকারী অধ্যাপক এবং ক্লিনিকেল সাইকোলজিস্ট ডা. কারমেল চৈ বলেন, “নতুন, অপ্রত্যাশিত বা ভয়ঙ্কর কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে এবং কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা বুঝে উঠতে না পারলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়।”

মানসিক চাপ কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। ফলে দেহে গ্লুকোজ নিঃসৃত হয়। গ্লুকোজ দেহে শক্তি যোগায় ও দেহকে সক্রিয় করে তোলে। কর্টিসোলের আধিক্য হৃদগতি বাড়ায়; ফলে শ্বাসের মাত্রা বাড়ে, যে কারণে ঝিমুনি বা বমি বমিভাব দেখা দেয়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের তথ্যানুসারে সিএনএন’য়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়- কর্টিসোলের মাত্রা বৃদ্ধি ও দেহে তা প্রতিরোধ করার যুদ্ধ চলতে থাকে। মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে এই মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। কর্টিসোলের মাত্রা বৃদ্ধি নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও দীর্ঘ মেয়াদি ‘গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল’ সমস্যা দেখা দেয় বলে জানায়। মানসিক চাপ উদ্বেগ, অস্বস্তি, ঘুমের সমস্যা, পদার্থের অপব্যবহার, দীর্ঘমেয়াদি বিরক্তিসহ নানান রকমের সমস্যা সৃষ্টি করে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে পন্থা :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের নানান উপায় রয়েছে। রুটিন মাফিক চলা, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা ইত্যাদি। এছারাও প্রয়োজনে ওষুধ, গভীর শ্বাস অনুশীলন করা উপকারী। শারীরিকভাবে সচল থাকা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়।

চৈ বলেন, “মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা লক্ষণীয়ভাবে কাজ করে। শরীরচর্চা শুধু মানসিক চাপ দূর করে না বরং এটা মন ভালো রাখে, দুশ্চিন্তা কমায় এবং ঘুম উন্নত করে- এসব কিছুই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যক্তির উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।”

অনেক গবেষণাতেই মানসিক চাপের ওপর শরীরচর্চার ইতিবাচক ফলাফল দেখা গেছে। শারীরিক সক্রিয়তা ও শরীরচর্চা উদ্বেগ কমায় বলে দেখা গেছে, ‘অ্যাডভান্সেস ইন এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজি’তে প্রকাশিত গবেষণাতে। ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি স্টাডি অব ইউনিভার্সিটি’র ছাত্র ছাত্রীরা দেখেছেন যে, ছয় সপ্তাহ নিয়মিত হালকা মাপের ‘অ্যারোবিক’ চর্চা মানসিক চাপ কমাতে সহায়াত করে।

মন ভালো করার হরমোন নিঃসরণ :
শরীরচর্চা দেহে ‘এন্ডোরফিনস’ নামক হরমোন উৎপাদন করে, যা মন ভালো রাখতে সহায়ক। গতিশীলতা চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসোলের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি রক্ত প্রবাহ বাড়াতেও সহায়াত করে। অ্যারোবিক কার্যক্রমের মধ্যে আছে- সাতার কাঁটা, দৌড়ানো, নাচা ও বক্সিং ইত্যাদি। এসব ‘এন্ডোরফিনস’ হরমোন বাড়ায়। এছাড়াও হালকা ব্যায়াম, যেমন- যোগ ব্যায়াম, শক্তি বর্ধক প্রশিক্ষণ ও হাঁটা উপকারী ভূমিকা রাখে।

চৈ বলেন, “আমরা সমীক্ষাতে যা দেখি, মনের ওপর ইতিবাচক ফলাফলের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় কম গতিও কাজ করতে পারে।” মানসিক চাপ সপ্তাহ এমনকি দৈনিক পরিবর্তন হতে পারে। এক্ষেত্রে মনের অবস্থা বুঝে ব্যায়ামের মাত্রা নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন, স্ক্রাইভনার। ১৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম থেকে শুরু করে ৩০ মিনিট সাঁতার কাটার মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, বলে জানান তিনি।

সামাজিক অংশগ্রহণ :

সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে- প্রকৃতির কাছে যাওয়া, বাইরে ব্যায়াম করা ও বন্ধুদের সাথে কাজ করা মন ভালো রাখে।

চৈ বলেন, “মানসিক চাপ ও শরীরচর্চার মাঝে সম্পর্ক খোঁজা চলমান। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক শান্তি ও শারীরিক সক্রিয়তা ভালো ঘুম দেয় এবং মন ভালো রাখে।” শরীরচর্চা মানসিক চাপ কমায় কিন্তু অতিরিক্ত শরীরচর্চার ফলাফল উল্টাও হতে পারে।

শেয়ার করুন