নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝা যায় ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষায়

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১১:১০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১১:১০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
কিডনির কার্যক্ষমতা বোঝা যায় ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষায়

ক্রিয়েটিনিন শব্দটি শুনলে সবার মাথায় প্রথমে একটি বিষয়ই আসে, সেটি হলো কিডনি রোগ। ক্রিয়েটিনিন কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কিডনি রোগের মাত্রা নির্দেশ করে না, কিন্তু কিডনি রোগে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার তারতম্য ঘটে। কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা বোঝা যায় ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে। চলুন জেনে নিই ক্রিয়েটিনিন নিয়ে অল্পস্বল্প তথ্য:

কিডনি পরীক্ষা হিসেবে ক্রিয়েটিনিন জনপ্রিয় কেন : এমন না যে ক্রিয়েটিনিন ছাড়া কিডনি ফাংশন টেস্ট আর নেই কিংবা এটিই একমাত্র পরীক্ষা, তাহলে ক্রিয়েটিনিন এত জনপ্রিয় কেন? তার কারণ ক্রিয়েটিনিন অল্প টাকায়, সহজে করা যায়, প্রায় সব জায়গায়ই টেস্ট করা যায় বলেই এটি এত জনপ্রিয়।

তাহলে কিডনি ফাংশনের সর্বোত্তম পরীক্ষা কোনটি : ইজিএফআর (এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট) হলো কিডনি বিষয়ে জানার জন্য সর্বোত্তম ও বিশ্বব্যাপী সমাদৃত পরীক্ষা। বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানে কম খরচে এখন এ পরীক্ষা করা যায়।

ইজিএফআর ও ক্রিয়েটিনিনের সম্পর্ক : কিডনি রোগ যত বেশি প্রকট হবে ইজিএফআর তত কমবে। ইজিএফআর যত কমবে ক্রিয়েটিনিন আনুপাতিক হারে তত বাড়বে। কিন্তু ক্রিয়েটিনিন বাড়লেই ইজিএফআর কমবে না। মজার তথ্য হলো ক্রিয়েটিনিন ১.৫ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার (১৩০ মাইক্রো মোল/লিটার) হলে ইজিএফআর ২০-৯০-এর মতো হতে পারে। যা দিয়ে কিডনি একদম স্বাভাবিক থেকে শুরু করে চতুর্থ পর্যায়ের কিডনি বিকল পর্যন্ত নির্দেশ করে। তাই ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা না করে ইজিএফআর পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন অনেক চিকিৎসক। তবে হ্যাঁ, ইজিএফআর পরীক্ষায় ক্রিয়েটিনিন ব্যবহৃত হয়।

ক্রিয়েটিনিন কী : ক্রিয়েটিনিন মাত্র ১১৩ ডাল্টনের সামান্য অণু। প্রাচীন গ্রিক ভাষায় ক্রিয়েটিনিন শব্দের অর্থ মাংসল অংশ। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাংসপেশির ফসফোক্রিয়েটিন বিপাক প্রক্রিয়ায় ক্রিয়েটিনিন তৈরি হয়, তাছাড়া প্রোটিন বেশি খেলে কিংবা বডি বিল্ডাররা যে ক্রিটিন সাপ্লিমেন্ট খায় তা থেকেও ক্রিয়েটিনিন তৈরি হয়। ক্রিয়েটিনিন শরীরের মাংসল অংশের সমানুপাতিক। যার শরীরে মাংসপেশি যত বেশি, তার ক্রিয়েটিনিন উৎপন্নও সমানুপাতিক হারে হয়।

ক্রিয়েটিনিন রক্তের জলীয় অংশে মিশ্রিত থাকে, এটি প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। তাই এটি সহজেই কিডনির ছাঁকনিতে ফিল্টার হয়, নিঃসরিত হয় এবং শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

কিছু ওষুধ শরীর থেকে ক্রিয়েটিনিন বের হতে বাধা দেয়, যেমন সিমেটিডিন (গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ), ট্রাইমেথোফ্রিম (অ্যান্টিবায়োটিক) এবং ফেনোফিব্রেট (কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ) কিন্তু এতে ইজিএফআর কমে না কিংবা এটি কিডনি রোগ নির্দেশ করে না।

ক্রিয়েটিনিন কীভাবে নির্ণয় করা হয় : ক্রিয়েটিনিন কলরোমেট্রিক ও এনজাইমেটিক প্রক্রিয়ায় ল্যাবে রক্ত থেকে পরীক্ষা করা হয়। তবে এখন এনজাইমেটিক প্রক্রিয়ায় নির্ণয় করা হয়।

ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত : প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ১১০ মাইক্রোমোল/লিটার পর্যন্ত আর নারীদের জন্য ১০০ মাইক্রোমোল/লিটার পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক। মাইক্রোমোলকে ৮৮.৪ দিয়ে ভাগ করলে মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নির্ণয় হয়।

ইজিএফআর ও কিডনি রোগ : ইজিএফআর সর্বোত্তম পরীক্ষা হলেও আকস্মিক কিডনি বিকল, ১৮ বছরের কম বয়সী আর গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ইজিএফআর পরীক্ষা প্রযোজ্য নয়। ইজিএফআরের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৯০-এর অধিক আর ইজিএফআর ৩০-এর কম হলে রোগীর উচিত কিডনি প্রতিস্থাপন প্রোগ্রামে নাম নিবন্ধন করা। ৬-১২ মাস নিয়মিত কিডনি বিশেষজ্ঞের অধীনে ফলোআপে থাকার পরও যদি ইজিএফআর ২০-এর কম থাকে তবে কিডনি প্রতিস্থাপন করাই উত্তম। তবে কিডনি সম্পূর্ণ বিকল ধরা হয় ইজিএফআর যখন ১৫-এর নিচে নেমে যায় তখন। – ডা. শেখ মইনুল খোকন, চিকিৎসক ও গবেষক

শেয়ার করুন