নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ১২৭ মিলিয়ন ডলার

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ১০:৫৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ১০:৫৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
এক মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ১২৭ মিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। গত ২৯ মার্চ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ বিলিয়ন ১০৬ মিলিয়ন ডলার। এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ৩২.২৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার)। এ হিসাব অনুযায়ী এক মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১২৭ মিলিয়ন (১২৭ কোটি ডলার)। এরমধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২৪.৬ বিলিয়ন (২ হাজার ৪০৬ কোটি ডলার)। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ একসঙ্গে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করা হয় ১০৬ মিলিয়ন (১০৬ কোটি ডলার)। সে সময় রিজার্ভ ৩২.২ বিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার) থেকে কমে ৩১.১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে (৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারে) নেমে আসে। এরপর রিজার্ভ সামান্য পরিমাণে উঠানামা করছে।

সূত্র জানায়, রিজার্ভ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার নীতি অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে গড়ে আমদানি কমেছে। তবে রোজার পণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান বাড়াতে হয়েছে। এতে করে মার্চে আমদানি কিছুটা বাড়বে। এছাড়া রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ও নিম্নমুখী। নভেম্বর থেকে রপ্তানি আয় কমছে। এর আগে প্রতি মাসে ৫০০ কোটি ডলারের উপরে উঠেছিল রপ্তানি আয়। এখন আবার তা নিচে নেমে এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে এ খাতে আয় হয়েছে ৪৬৩ কোটি ডলার। এছাড়া গড় হিসাবে রেমিট্যান্স বাড়লেও গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্সও কমছে। আগে প্রতিমাসে রেমিট্যান্স আসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি। ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১৫৬ কোটি ডলার।

তবে আশা করা হচ্ছে, রোজা ও ঈদের কারণে চলতি মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। কারণ প্রবাসীরা রোজা ও ঈদের সময় দেশে আত্মীয়স্বজনের কাছে বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।এদিকে রপ্তানির অর্ডার কমে গেছে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক মন্দার কারণে রপ্তানি আয়ও দেশে আসার প্রবণতা কমছে। এ খাতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামীতে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে। অথচ দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে রপ্তানি আয়। এটি কমে গেলে রিজার্ভের ওপর আরও চাপ বেড়ে যাবে। এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে, জানুয়ারি-জুন সময়ের মুদ্রানীতিতে ৩০ জুনের মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আপাতদৃষ্টিতে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ আরও নিম্নমুখী হবে। জুনে গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। নিট রিজার্ভ আরও কম হবে। তখন ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, জুনে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮৩ কোটি ডলার। গত বছরের ২৯ মার্চ ছিল ৪ হাজার ৪৩৪ কোটি ডলার। এক বছরের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার পরও রিজার্ভ কমেছে বৈদেশিক ঋণ ও অন্যান্য বকেয়া দেনা পরিশোধের কারণে। সামনে এই চাপ আরও কিছুটা বাড়তে পারে। কেননা স্বল্পমেয়াদি আরও ঋণ চলতি বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে কমেছিল সাড়ে ১৯ শতাংশ। ওই কমার বিপরীতে বেড়েছে সোয়া ৪ শতাংশ। ফলে এক বছর আগের নিট হিসাবে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। এ হিসাবে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির হারও কম। এর আগে ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়ে ডলার সংকট মেটানো সম্ভব হয়নি। সেখানে এখন সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়ে কিভাবে মেটানো সম্ভব হবে এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্প ও যেসব উদ্যোক্তাদের ডলার আয় নেই তারা খুব সংকটে পড়েছেন। এলসি খুলতে পারছেন না। এতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল সোয়া ৪৬ শতাংশ। এলসি খোলার হারও কমেছে। ফলে আগামীতে আমদানি আরও কমবে।

২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফ’র ঋণের প্রথম কিস্তি বাবদ ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছিল। কিন্তু পরে আবার কমে গেছে। জুলাইয়ে তাদের ঋণের আরও একটি কিস্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য আইএমএফ’র অনেক শর্তই বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এতে রিজার্ভ সামান্য বাড়লেও ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন অনেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, মে মাসের আগে বড় ধরনের কোনো দেনা পরিশোধ করতে হবে না। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর দেনা শোধ করতে হবে। তখন ১০০ কোটি ডলারের বেশি একসঙ্গে ব্যয় হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশ কমেছে। এর প্রভাবও আমদানিতে পড়বে। ফলে ওই সময়ে রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমতে পারে।সুত্র যুগান্তর

শেয়ার করুন