নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২৯ শতাংশ

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩ | ০৬:১৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ | ১২:২১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সাত মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২৯ শতাংশ

আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়িতে কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারিতে বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে ২৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ; চলতি হিসাবে ভারসাম্যের ঘাটতিও নেমেছে অর্ধেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি কমে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যদিও ডলারের দরে অস্থিরতা ও সংকটের মধ্যে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির চাপও সামলাতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৬৪ কোটি ডলারের পণ্য, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি।

এ সময় আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৪০৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময় থেকে আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এতে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।

বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসার প্রভাবে এ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এ খাতে ঘাটতি হয়েছে ৫০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৬ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত জানুয়ারি শেষে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে ৫২২ কোটি ৩০ লাখ; শতকরা হিসাবে ৫০ দশমিক ৯০ শতাংশ। রেকর্ড ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি অর্থবছর। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয়ের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে ডলার সাশ্রয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এলসি (ঋণপত্র) খোলাসহ বিভিন্ন নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর প্রভাবে বিদেশ থেকে পণ্য আনার গতি কমে গেছে। গত কয়েক মাস ধরে জরুরি ছাড়া অন্যসব খাতে বিদেশি মুদ্রার ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলে। এমন প্রেক্ষাপটে অর্থবছরের প্রথম সাত মাস শেষে চলতি হিসাবের ঘাটতি ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এলো। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। রিজার্ভ কমে আসা এবং চলতি হিসাবে রেকর্ড ঘাটতির মধ্যে সরকার বাজেট সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী ও দেশের কাছে অর্থায়নের চেষ্টা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এটির প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই পেয়েছে বাংলাদেশ। কিস্তিতে অবশিষ্ট অর্থ পাওয়া যাবে ২০২৬ সাল নাগাদ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেবা খাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ২২৪ কোটি ২০ লাখ ডলার হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২০২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

একই সময়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে সামগ্রিক লেনদেনে (ওভার অল ব্যালান্সেস) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২০৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে ২৫৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া, চলতি অর্থছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের থেকে তা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সুত্র কালবেলা

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন