ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ কর্মকাণ্ড ও ধর্মান্তকরণের অশুভ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে একটি গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারসহ পরিকল্পিতভাবে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।শুক্রবার (২৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক কর্মসূচি থেকে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান।
সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু ছেলে-মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্মান্ধকরণের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি, ধর্মীয় অবমাননাকর প্রচার, হিন্দু বিদ্বেষ প্রসূত সাম্প্রদায়িক বক্তব্য, রাষ্ট্রদ্রোহীমূলক বক্তব্য প্রদান করা, প্রতীমা ভাঙচুর, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট করা এবং এ সংক্রান্ত ঘটনায় অভিযুক্তকারীদের আইনের আওতায় নেওয়া এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো আইনগত উদ্যোগ না নেওয়ার ব্যাপারে সরকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা, উদাসীন থাকার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।’
সমাবেশে সংগঠনের নেতারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা আইনের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। ফৌজদারি অপরাধও বটে। ধর্ম ও সংবিধান এসব সমর্থন করে না। তথ্যপ্রযুক্তি ও ধর্মীয় অবমাননা আইনেও যা গুরুতর অপরাধ। এই প্রেক্ষাপটে অনৈতিক ধর্মীয় অবমাননাকর প্রচারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
কর্মসূচি থেকে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংসদে সংখ্যানুপাতে আসন বরাদ্দ করা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সকল বেদখলকৃত মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার এবং সকল উদ্ধারকৃত দেববিগ্রহ পূজার্চনার জন্য স্ব-স্ব এলাকার মন্দিরে পুনঃস্থাপন করা ও অর্পিত সম্পত্তির প্রকৃত মালিক এবং ওয়ারিশদারদের ফেরত দেওয়া।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করা এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে ধর্মান্তকরণের নতুন মিশনে নেমেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা দাওয়াতের নামে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরিত করতে রীতিমতো সংগঠনের কর্মীদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি ও পেজ খুলে এ সংক্রান্ত প্রচার চালানো হচ্ছে। নিজেদের কর্মীদের শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধর্মান্তরিত করার কলাকৌশল।
নওমুসলিমদের সুরক্ষার নামে এ ধরনের অপকর্মে একটি বেসরকারি ব্যাংক যুক্ত থাকার অভিযোগ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছে ‘নওসুসলিম কেয়ার এইড’সহ একাধিক সামাজিক সংস্থা। এছাড়াও ইসলামী ফাউন্ডেশন তাদের জাকাত ফান্ডের নামে এ প্রক্রিয়া চলমান।
দেশজুড়ে কিছু ইসলামিক সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে সংখ্যালঘুদের ধর্মান্তরিত করতে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ এনে বক্তারা আরও বলেন, মুফতি জোবায়ের আহমদের পরিচালনায় ইসলামী দাওয়াহ ইনস্টিটিউট নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান এই অপকর্মে জড়িত।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ভিন্ন ধর্মের মানুষদের নানাভাবে দুর্বল করা ও দেশত্যাগে বাধ্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা এমন অপকর্ম করছে। এক্ষেত্রে নির্বিকার সরকার, প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রবীর রঞ্জন হালদার, সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায় প্রমুখ।