নিউইয়র্ক     সোমবার, ১৭ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের দাগী অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভারত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ | ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশের দাগী অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভারত

বাংলাদেশের দাগী অপরাধী চক্রের নিরাপদ আশ্রয়স্থল প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকা। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গকে ঠিকানা করে এসব অপরাধী চক্রের ভয়ানক অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ড এমনকি রাজনীতিরও অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ হয় ‘ওপার’ থেকে। অপরাধীরা সহজেই নাগরিকত্বের নথিপত্র সংগ্রহ করে নিজেদের ‘ভারতের নাগরিক’ দাবি করায় বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও সব সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বড় ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের বাঁচাতে অপরাধী চক্র অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। সেখানে গিয়ে অনেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস করে। নাম পাল্টে ছদ্মনামে অবস্থান করে অনেকে বিয়ে করে সংসারও পাতে। সামান্য কিছু অর্থ ব্যয় করে তারা জোগাড় করে ফেলে ভারতীয় আধার কার্ড, আই কার্ড, প্যান কার্ড (ভোটার কার্ড), রেশন কার্ডসহ যাবতীয় কাগজপত্র। অনেকে ছদ্মনামে তৈরি করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। ওই পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ান নানান দেশে। করেন ব্যবসা বাণিজ্যও। এসব দাগী সন্ত্রাসী, জঙ্গি, অর্থ পাচারকারী, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অর্থ আত্মসাৎকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছেন। আবার অনেকের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশে একটি হত্যা মামলার আসামি আত্মগোপন করেন পশ্চিমবঙ্গে। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি জানান, বর্তমানে ভারতীয় ২০ হাজার রুপি ব্যয় করে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, এরপর আই কার্ড এবং রেশন কার্ড সংগ্রহ করা যায়। প্রথমে নিতে হয় আধার কার্ড, এরপর প্যান কার্ড। তিন মাস পর আই কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। রেশন কার্ড নিতে হয় সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের নেতা বিমান বসু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বাংলাদেশে অপরাধ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়াটা একধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। শেখ মুজিবের ঘাতকরাও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধরা পড়েছে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভারতে কোনো বাংলাদেশি অপরাধী আত্মগোপন করলে তাকে আটক করে দেশে ফিরিয়ে আনতে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ভারতে অবস্থান মুকুলের

গত ১২ মে ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে প্রথমে নিখোঁজ ও পরে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নাম আসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি নেতা আমিনুর রহমান ওরফে মুকুলের। চরমপন্থিবিরোধী অভিযান শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। তবে সেখান থেকেই দেশে তার অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান। এলাকার অনেক রাজনৈতিক নেতা ও ঠিকাদার তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আবার বিদেশে গিয়ে তার সঙ্গে দেখাও করেন। ভারতের পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টধারী মুকুল বেশিরভাগ সময় ইতালিতে থাকেন। মাঝেমধ্যে থাইল্যান্ড যান। ভারত ও নেপালে তার ব্যবসা রয়েছে। বেশভূষায় পরিবর্তন এনে তিনি এখন জোব্বা পরেন। কুষ্টিয়া শহরের গোশালা রোডে তার দুটি বিলাসবহুল পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে।

মুকুলের নামে বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে। কুষ্টিয়ার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের রাজনীতিতে যুক্ত হন। গোপনে চরমপন্থি বাহিনীও গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সালের দিকে মুকুল প্রথম পুলিশের হাতে আটক হন। ছাড়া পেয়ে গা-ঢাকা দেন। শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলনের রাজনীতি ছেড়ে গণমুক্তি ফৌজ নামে চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তোলেন। শাহিন ও লিপটন ছিলেন তার সেকেন্ড ইন কমান্ড। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীকে হত্যা করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে এই বাহিনী। মুকুল ভারতে থেকেই তার বাহিনী দিয়ে বিএনপি নেতা ভিসি শহীদ ও বাচ্চু, ঠিকাদার জামু ও হাবিব, কুষ্টিয়ার থানাপাড়ার বাবু, কয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হোসেন বাচ্চু, ব্যবসায়ী বকুল সওদাগরসহ প্রায় এক ডজন হত্যাকাণ্ড ঘটান। এমনকি টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিতে সড়ক ও জনপথ অফিসের সামনে তিনজনের বিচ্ছিন্ন মস্তক এবং জি কে অফিসের সামনে দুজনের কাটা মাথা রেখে আতঙ্ক ছড়ান। এসব হত্যাকাণ্ডের পর দায় স্বীকার করে মিডিয়ায় বিবৃতিও দিতেন মুকুল।

আলোচিত আরাভ খানের আছে ভারতীয় পাসপোর্ট

ঢাকায় পুলিশ হত্যার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমে আত্মগোপন করেন ভারতে। সেখান থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। দুবাই পাড়ি জমানোর আগে তিনি ভারতে একটি বিয়ে করেছেন বলেও জানা যায়। আরাভ খানের প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি। মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ পলাতক রবিউল ওরফে আরাভসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দেয়। বহুল আলোচিত আরাভ খান দুবাইয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। গত বছরের ১৫ মার্চ দুবাইয়ে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করেন তিনি। সেখানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বাংলাদেশের বিনোদনজগতেরও অনেক তারকা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন আরাভ। এরপর তার নানা অপকর্মের খবরও বেরিয়ে আসতে থাকে। এখনও তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নানান ধরনের পুরস্কার ও লটারি দেওয়ার নামে প্রতারণা করছেন।

ভারতে আত্মগোপন করেন পরিদর্শক সোহেল

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের টাকা আত্মসাৎ করে ভারতে পালিয়ে যান বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। তার বিরুদ্ধে ই-অরেঞ্জের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

পিকে হয়ে যান শিবশঙ্কর

ভারতে নাম বদলে অবস্থান নেন বহুল আলোচিত অর্থ পাচারকারী পিকে হালদার। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে ক্যাসিনো ও অর্থ পাচারবিরোধী অভিযান শুরু হলে পি কে হালদারের নাম আলোচনায় আসে। ওই মাসেই বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে শিবশঙ্কর হালদার পরিচয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার পাশাপাশি জালিয়াতি করে রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড নিয়েছিলেন। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আটক হওয়ার পর পি কে জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়া ও সেখানে অবস্থান করার কথা স্বীকার করেন।

খুনি মাজেদ হয়ে যান আলী আহমেদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। তিনি নাম পাল্টে ২৫ বছর ধরে ভারতে আত্মগোপন করে ছিলেন। ২০২০ সালের ১৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওই বছরের ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। ভারতের বেডফোর্ড লেনে বিহারি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে আব্দুল মাজেদ হয়ে গিয়েছিলেন আলী আহমেদ। সেই নামেই তৈরি করা হয় ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত নথি। গ্রেপ্তারের ছয় দিনের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১২ এপ্রিল তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

নূরনবী নাম নেন তমাল চৌধুরী

চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নূরনবী ওরফে ম্যাক্সনকে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। উত্তর চব্বিশ পরগনার ডানলপ নর্দান পার্ক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এই সন্ত্রাসী জাল পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে নাম বদলে তমাল চৌধুরী পরিচয়ে কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন। দালাল ধরে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট জোগাড় করেন। গ্রেপ্তারের পর ম্যাক্সনের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে আত্মগোপনে থাকতে নিজের নামের পাশাপাশি বাবার নামও পরিবর্তন করে রাখেন অসীম চৌধুরী। শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সারোয়ার বাবলা ও নূরনবী ম্যাক্সন। একে-৪৭-এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন দুজন।

নূর হোসেন আত্মগোপন করেন কলকাতায়

২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার অন্যতম আসামি নূর হোসেনকে ২০১৫ সালের ১ জুন কলকাতা বাগুইহাটির একটি ভবন থেকে আটক করা হয়। ওই বছরের ১২ নভেম্বর ভারত সরকার নূর হোসেনকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। ওই দেশেরই কয়েকজন অর্থের বিনিময়ে নূর হোসেনকে সেখানে থাকার সুযোগ করে দেয়।

মোল্লা মাসুদ ভারতে গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ভারতে আত্মগোপন করেন। বিভিন্ন সময় পলাতক সন্ত্রাসীদের যে তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে দেওয়া হয়, তাতে মোল্লা মাসুদের নাম ছিল। এ ছাড়া তার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিস ছিল। ২০১৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশে অন্তত ১০টি হত্যা মামলার আসামি মোল্লা মাসুদ। ২০০১ সালে সরকার ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করলে মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে যান। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া মাসুদ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিলেন বলে ‘মোল্লা মাসুদ’ নামে পরিচিতি পান।

ভারতের জেলে সুব্রত বাইন

২০০৩ সাল পর্যন্ত সুব্রত বাইন ছিলেন ঢাকার অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চক্র সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান। ৩০ মামলার এই আসামি গ্রেপ্তার এড়াতে ২০০৩ সালে দেশ ছেড়ে ভারতে আত্মগোপন করেন। ২০১২ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তারের পর থেকে ভারতের কারাগারে রয়েছেন তিনি।

জিসানও ছিলেন কলকাতায়

পুলিশের তালিকাভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির দুই ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন। ২০০৫ সালে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ছাড়া পাওয়ার পর কলকাতায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকার চাঁদাবাজি। জিসান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যান। নিজের নাম পাল্টে আকবর নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নেন। এখনও তার নামে চলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অপরাধ।

তানভীরুল ইসলাম জয় হয়ে যান তারেক রানা

বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয় প্রথমে ভারতে, পরে অন্য দেশে পালিয়ে গেছেন। তারেক রানা নাম নিয়ে তিনি ভারতের পাসপোর্ট করেন। চলতি বছরের ১২ এপ্রিল তিনি মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন বলে খবর আসে। তার বিষয়ে তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ইন্টারপোল কুয়ালালামপুর ইন্টারপোলকে মেইল করে। কিন্তু ইন্টারপোল এখনও কোনো তথ্য নিশ্চিত করেনি।

শীর্ষ জঙ্গি বোমা মিজানও ভারতে

২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান। ওই ঘটনার পর পুলিশ তৎপর হলে মিজান পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন করেন। সেখানে জেএমবির জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের আগস্টে বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার হাতে। বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজান বিহারের বুদ্ধ গয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় জড়িত বলে ওই সংস্থা জানিয়েছে।

টিকটক বাবু আটক

এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল করার পর সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশি এক যুবককে গত বছরের ২৮ মে আটক করে ভারতের কেরালা পুলিশ। ওই যুবকের নাম হৃদয় বাবু ওরফে টিকটক বাবু। তার ঠিকানা ঢাকার মগবাজার। নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও একই এলাকার বাসিন্দা।

বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুল মাজেদ কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, পলাতক খুনি রিসালদার মোসলেহউদ্দিনও ছিলেন ভারতে। তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার একটি স্থানে। মোসলেহউদ্দিন নাম পরিবর্তন করে হয়েছিলেন সমীর কুমার দত্ত। ‘দত্ত ডাক্তার’ নামেই পরিচিত ছিলেন এলাকায়।

ভারতে দুই খুন করে আলোচিত মকবুল

বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী মকবুল হোসেন মুকুল শুধু বাংলাদেশেই নয়, ত্রাস ছড়িয়েছেন ভারতেও। বাংলাদেশে ১৭টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযুক্ত মুকুল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় আত্মগোপনে গিয়ে কমপক্ষে দুটি খুন করেছেন। চব্বিশ পরগনা থানার হেলেঞ্চা গ্রামের শোয়েব খন্দকার ও আজিবর রহমান নামে দুই সন্ত্রাসীকে মুকুল গলা কেটে হত্যা করেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে।

আব্দুর রহমান হয়ে যান বাবু হক

গত বছরের জুনে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বাংলাদেশ সীমানায় গিতালদহের জারিধরলা গ্রামে বাবু হক খুন হন। তিনি ছিলেন তৃণমূলকর্মী। পরে তদন্তে ভারতীয় পুলিশ জানতে পারে বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বাবু হক বাংলাদেশি নাগরিক। তার প্রকৃত নাম আব্দুর রহমান। ভারতে তার নামে আধার কার্ডসহ বিভিন্ন নথিপত্র রয়েছে। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে বাবু হক। তবে তার বাংলাদেশের জাতীয়পত্রও খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে জানা যায় তার প্রকৃত নাম। চোরাকারবারে জড়িত এ অপরাধী বিভিন্ন ঘটনায় বিজিবি এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতেও আটক হয়েছিলেন।

যা বলল পুলিশ

বাংলাদেশে হত্যা মামলার আসামি, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারিসহ দাগী অপরাধীদের ভারতে অবস্থানের বিষয়টি স্বীকার করেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি ইন্টারপোলের শাখা সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-ইন্টারপোল) আলী হায়দার চৌধুরী গতকাল বুধবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশি বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা ও ইউনিটের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এনসিবি-ঢাকা থেকে এনসিবি-নয়াদিল্লিকে আত্মগোপনকরী আসামি গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এ ছাড়া তদন্তকারী সংস্থা ও ইউনিটের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এনসিবি-ঢাকা প্রয়োজনে আসামি গ্রেপ্তারে রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলকে অনুরোধ জানায়।সুত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশ

শেয়ার করুন