কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন লিওনেল মেসি। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার পর বিশ্বকাপ জয় মেসির ক্যারিয়ারকে দিয়েছে পূর্ণতা। একটা সময় শুধু ক্লাব ফুটবলে সফল বলে যে কটাক্ষের শিকার হতেন, তার সব জবাব মেসি দিয়েছেন কাতারে। বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার পর মেসির ক্যারিয়ারে পাওয়ার মতো কিছু বাকি নেই। তাই ফুটবল ভক্তরা সংশয়ে ছিল, মেসি বুঝি অবসরের ঘোষণা দেবেন।
অন্যদিকে ফুটবল দুনিয়ায় মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য কাতার বিশ্বকাপ ছিল হতাশার। তার দেশ পর্তুগাল বিদায় নিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাব ফুটবলেও রোনালদোর পদচারণায় নেই দাপটের চিহ্ন। তিনি এখন ইউরোপ ছেড়ে সৌদি পেশাদার লিগের বাসিন্দা। তাই তাকে নিয়েও ভক্তদের মনে সংশয় ছিল।
আপাতত মেসি আর রোনালদো ভক্তদের সংশয় কেটেছে। দুজনই ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে। বিশ্বকাপের পর নিজ নিজ দেশের হয়ে মাঠে নেমে গোলও করেছেন। জানান দিয়েছেন, দ্রুতই শেষ হচ্ছে না দুই মহারথীর যুগ। বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনা প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছিল পানামার বিপক্ষে। নিজ দেশের মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপজয়ী মেসি অ্যান্ড কোং পেয়েছে বিপুল সংবর্ধনা। উৎসবের আমেজে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি আর্জেন্টিনা জিতেছে ২-০ গোলে।
ম্যাচে ফ্রি কিক থেকে মেসির গোলটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ৮০০তম গোল। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স অনুযায়ী রোনালদোর পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এই রেকর্ড গড়লেন মেসি। এছাড়া কুরাসাওয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার সাত গোলের জয়ে হ্যাট্রিক করেছেন মেসি। ইতিহাসের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে করেছেন গোলের সেঞ্চুরি (১০২টি)। সব মিলিয়ে তার ক্যারিয়ার গোল ৮০৩টি, যা ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৮০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করার সময় রোনালদোর ম্যাচসংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৫। তার চেয়ে ৭৮ ম্যাচ কম খেলে একই মাইলফলকে পৌঁছেছেন মেসি। অর্থাৎ দ্রুততম ৮০০ গোলের রেকর্ড এখন মেসির।
রোনালদোও গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। ইউরো ২০২৪-এর বাছাইপর্বে লিখেনস্টাইনের বিপক্ষে রোনালদো গড়েন সবচেয়ে বেশি ১৯৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড। পুরুষদের ফুটবলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯৬ ম্যাচ খেলেছেন কুয়েতের ফরোয়ার্ড বাদের আল-মুতাওয়া। ম্যাচটি রোনালদো স্মরণীয় করে রাখেন জোড়া গোলে। দুদিন পরেই লুক্সেমবার্গের বিপক্ষেও জোড়া গোল করেছেন সিআর সেভেন। তাতে তার আন্তর্জাতিক গোলের সংখ্যা এখন ১২২টি, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। পেশাদার ক্যারিয়ারেও রোনালদোর গোল ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ৮৩২টি।
রোনালদোর বয়স বর্তমানে ৩৮ আর মেসির ৩৫। রোনালদোর ক্যারিয়ারে ভাটার টান এখন স্পষ্ট। মেসিও আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলছেন না। দুজনের লক্ষ্য ২০২৬ সালের পরবর্তী বিশ্বকাপ। সেই সময়ে ৪২ বছরের রোনালদোর জন্য যা ভীষণ কঠিন টার্গেট। তখন ৩৯ বছরের মেসির জন্যেও বিষয়টা সহজ হবে না। তবে এটা সত্যি, মেসি বা রোনালদো কেউই সহজে হাল ছাড়ছেন না। তারা শেষ সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত চেষ্টা করবেন নিজেদের রাজত্ব ধরে রাখতে। সূত্র : সাম্প্রতিক দেশকাল