নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড. মইনুল ইসলাম

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে অমনোযোগিতা ও সরকারের মিষ্টিপ্রীতি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৩ | ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ | ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে অমনোযোগিতা ও সরকারের মিষ্টিপ্রীতি

গত ১ জুন ২০২৩ তারিখে অর্থমন্ত্রী মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করেছেন। চিরাচরিত বাজেট বক্তৃতা না দিয়ে এভাবে বাজেট উপস্থাপনকে আমার কাছে ‘ফাঁকিবাজি’ মনে হয়। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তার অযোগ্যতাকে আড়াল করার জন্যই এহেন পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন কিনা সে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক! আমি সেজন্য পত্র-পত্রিকায় এবং টেলিভিশনে বাজেটের আলোচনা-বিশ্লেষণ করব না বলে মিডিয়া-প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, বাজেট বক্তৃতায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে অগ্রাধিকার প্রদানের ইস্যুটাকে যেভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সেটা আমাকে চরম হতাশ ও বিষ্ময়াহত করায় বক্ষ্যমাণ কলামটি লিখতে হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সৌরবিদ্যুতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক ও করহার বর্তমান ৫৪ শতাংশ থেকে মাত্র ১ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য এফবিসিসিআই যে দাবি জানিয়েছিল আমি তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলাম। কারণ, যেখানে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকে উৎসাহিত করাই সময়ের দাবি—সেখানে এ খাতে এত শুল্ক-কর থাকা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, বাজেট বক্তৃতায় এই ইস্যুটাকে কোনো পাত্তাই দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর দ্রব্য মিষ্টি বিক্রির ওপর যে ১৫ শতাংশ মূল্য-সংযোজন কর ছিল সেটাকে বাজেটে মাত্র ৭.৫ শতাংশে কমানোর প্রস্তাব করা হলেও সৌরবিদ্যুৎকে উৎসাহিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে—সেটা অর্থমন্ত্রী কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোনো মনোযোগই আকর্ষণ করতে পারেনি! মিষ্টির ওপর ভ্যাট কমানোর জন্য কোনো বিবেকবান কিংবা জনপ্রিয় মহল থেকে দাবি করা হয়েছিল কিনা তা-ও জানা নেই! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দেশে মিষ্টি উৎপাদন নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন ওটাকে দুধের ‘অস্বাস্থ্যকর অপব্যবহার’ আখ্যায়িত করে। কিন্তু, ওই নিষেধাজ্ঞা দেশের কয়েক লাখ মানুষকে বেকার করে দেওয়ার যুক্তিকে মেনে নিয়ে তিনি কয়েক দিন পর তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সরকারের অস্বাস্থ্যকর-মিষ্টিপ্রীতিকে প্রশংসা করতে পারছি না, আর ভ্যাট কমানোর এই প্রস্তাবটিকেও সমর্থন করতে পারছি না। কিন্তু, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি সরকারের অমনোযোগকেও কোনোমতেই মেনে নিতে পারছি না।

২০২২ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশে চরম জ্বালানি সংকট থেকে উদ্ভূত বিদ্যুতের যে ব্যাপক লোডশেডিং চলেছে তা ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে আবার ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বর্তমান জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ডিজেল আমদানি-ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য দেশের ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে। এলএনজিচালিত অনেকগুলো বিদ্যুৎ প্ল্যান্টও বন্ধ থাকছে ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেওয়ায়। প্রায় চব্বিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্যাপাসিটি অর্জন সত্ত্বেও এই গ্রীস্মকালের তীব্র গরমের দিনেও দৈনিক উৎপাদনকে ১২/১৩ হাজার মেগাওয়াটে সীমিত রাখতে হওয়ায় একদিকে লোডশেডিং বেড়েছে, আর অন্যদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে কয়লার অভাবে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, কয়েকজন প্রভাবশালী এলএনজি আমদানিকারককে অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার জন্য এই আমদানিকৃত এলএনজিনির্ভরতা, যাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। এই নীতির কারণে দৃশ্যত একদিকে ইচ্ছাকৃত অবহেলার শিকার হয়েছে গ্যাস অনুসন্ধান, আর অন্যদিকে যথাযথ অগ্রাধিকার পায়নি সৌর বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০২০ সাল পর্যন্ত এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম সস্তা থাকায় হয়তো এই নীতি গৃহীত হয়েছিল, কিন্তু এই অতিনির্ভরতা এখন চরম বিপদে ফেলেছে আমাদের। ২০২০ সাল থেকে এলএনজির আন্তর্জাতিক দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এলএনজি ঘাটতিও চরমাকার ধারণ করেছিল। অবশ্য এলএনজির দাম এখন কমে প্রতি এমএমবিটিইউ ১২/১৩ ডলারে স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। তেলের দামও ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০২২ সালের মে মাসে ব্যারেলপ্রতি ১৪০ ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, এখন আবার কমছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৪-৮০ ডলারে ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ যে দেশের স্থলভাগে গত চৌদ্দ বছরে কয়েকটি ছোট ছোট গ্যাসকূপ ব্যতীত উল্লেখযোগ্য তেল-গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভোলা গ্যাসের ওপর ভাসছে বলা হলেও ভোলার গ্যাস এলএনজি/সিএনজিতে রূপান্তরিত করে কিংবা পাইপলাইনের মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডে আনার কাজটি এখনো শুরুই হয়নি! ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে মামলায় জিতে বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও মামলায় জেতার পর ৯/১১ বছরে সমুদ্রে গ্যাস-অনুসন্ধান চালানো হয়নি। সম্প্রতি মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সন-মবিল দেশের ১৫টি গভীর সমুদ্র-বন্দরকে অনুসন্ধানের ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে, কারণ মিয়ানমার অতীতে তাদের নৌবাহিনী পাঠিয়ে কোরিয়ান কোম্পানি দাইউকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল। মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা ওই ধরনের জবরদস্তি করার সাহস পাবে না। বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের অদূরে মিয়ানমার তাদের সমুদ্রসীমা থেকে পাঁচ টিসিএফের বেশি গ্যাস আহরণ করে চলেছে।

সেজন্যই দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রতি অবহেলা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে হয়তো বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ কম, কিন্তু সৌরবিদ্যুৎকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না কেন? ইংরেজি জাতীয় দৈনিক দি ডেইলি স্টারের ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিসের ‘এনার্জি ফিন্যান্স এনালিস্ট’ সাইমন নিকোলাসের উপসম্পাদকীয়তে একটি বিস্ময়কর তথ্যকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন তিনি, ২০২০ সালেই ভিয়েতনাম বাড়ির ছাদের সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৯ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিল। গত তিন বছরে তাদের সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন আরও কয়েক হাজার মেগাওয়াট বেড়েছে নিশ্চয়ই। অথচ, ২০২০ সালে বাংলাদেশের সোলার পাওয়ার উৎপাদন ছিল ৩০০ মেগাওয়াটেরও কম, আর ২০২২ সালেও বাংলাদেশে মাত্র ৯৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (মানে উৎপাদনের ৩.৬১ শতাংশ) উৎপাদিত হয়েছে নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে। ২৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত একটি খবরে জানা যাচ্ছে, ২০২২ সালে চীন তাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১ লাখ মেগাওয়াটের ৪৫.৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ভারত বিদ্যুৎ চাহিদার ৩৩.৭ শতাংশ ২০২২ সালে নবায়নযোগ্য উৎসগুলো থেকে মেটানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে।

এলএনজির দামের উল্লম্ফন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে চরম সংকটে ফেলেছে। আরও দুঃখজনক হলো, বেশ কয়েকটি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল-চালিত রেন্টাল ও কুইক-রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মেয়াদ বহু দিন আগেই উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও এসব প্ল্যান্টের মালিকরা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের চুক্তির মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে নিচ্ছে। এসব প্ল্যান্টের মালিক সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয়স্বজন কিংবা তার পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী! এসব প্ল্যান্ট থেকে সরকার বিদ্যুৎ না কিনলেও ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হয়। (আগামী বছরের বাজেটে মিনিমাম ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা হবে বলা হয়েছে)! দেশের বিদ্যুৎ খাতের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে চীন, ভারত ও ভিয়েতনামের সোলার পাওয়ারের সাফল্য কীভাবে অর্জিত হয়েছে তা জেনে এদেশের সোলার-পাওয়ার নীতিকে অবিলম্বে ঢেলে সাজাতে হবে। বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ তাদের ঘোষিত ন্যাশনাল সোলার এনার্জি রোডম্যাপে ৩০ হাজার মেগাওয়াটের সোলার এনার্জির টার্গেট অর্জনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে ১২ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ছাদভিত্তিক সোলার প্যানেল থেকে আহরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু, এই রোডম্যাপ ঘোষণার পর কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও এই টার্গেট পূরণের উপযুক্ত কর্মসূচি আজও গৃহীত হলো না কেন? সাইমন বলছেন, ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট শুধু পোশাক ও বস্ত্র কারখানাগুলোর ছাদ ব্যবহার থেকে পাওয়া যেতে পারে, আর সরকারি বিভিন্ন ভবনের ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে আরও দুই হাজার মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। দেশের বড় বড় নগর ও মফস্বল শহরগুলোর প্রাইভেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িগুলোর ছাদ ব্যবহারের মাধ্যমে বাকি পাঁচ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন মোটেও অসম্ভব মনে হচ্ছে না, প্রয়োজন হবে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির ভর্তুকি-দাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রপাতির ওপর আরোপিত শুল্ক-কর হ্রাস এবং যুগোপযোগী ‘নেট মিটারিং’ পদ্ধতি চালু করা।

এ দেশের সোলার পাওয়ার উৎপাদন ২০২৩ সালেও এক হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারেনি কেন তা জরুরিভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। গণচীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ফিলিপাইন এবং জার্মানি ছাদভিত্তিক সোলার পাওয়ার উৎপাদনে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করেছে। সোলার প্যানেল ও ‘ব্যাটারি’র দামে সুনির্দিষ্ট ভর্তুকি প্রদান এবং ভর্তুকি-দামে ‘নেট মিটারিং’ স্থাপনে প্রণোদনা প্রদান এসব দেশের সাফল্য অর্জনের প্রধান উপাদান হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। এই ‘নেট-মিটারিং’ প্রযুক্তি গণচীন থেকে এখন সুলভে আমদানি করা যাচ্ছে। অথচ, এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি একেবারেই নগণ্য রয়ে গেল কেন? রূপপুর পরমাণু শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য আমরা এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছি, যেখান থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ আমরা নাকি দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। কিন্তু, এই মহাবিপজ্জনক পারমাণবিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মাঝখানে স্থাপনকে আমি সমর্থন করিনি। ছাদভিত্তিক সোলার-পাওয়ার প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিলে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মোট ব্যয়ের অর্ধেকও হতো না। অথচ, সৌরবিদ্যুৎ সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত প্রযুক্তি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত, এক ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ইতোমধ্যেই গণচীন, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি দশ টাকার নিচে নেমে এসেছে। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খালি জায়গা লাগে বিধায় বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তা উৎপাদন সম্ভব নয় বলে যে ধারণা রয়েছে তা-ও ঠিক নয়। দেশের সমুদ্র-উপকূল এবং নদী ও খালগুলোর দুপাড়ে সোলার প্যানেল স্থাপনের সম্ভাবনাটি খতিয়ে দেখা হোক। সম্প্রতি জার্মানি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশকে বিপুলভাবে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজ-ক্লিপ জানিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে জমির তুলনামূলক স্বল্পতার প্রকৃত সমাধান পাওয়া যাবে যদি দেশের বিশাল সমুদ্র-উপকূলে একইসঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকে দেশের বিদ্যুৎ খাতে প্রধান অগ্রাধিকার প্রদান করুন। ২০২১ সালে দেশের শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার ঐতিহাসিক সাফল্যকে টেকসই করার জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকে বিদ্যুতের প্রধান উৎসে পরিণত করা সময়ের দাবি। এফবিসিসিআই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট সব যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক-করকে শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার যে দাবি জানিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও যৌক্তিক।ড. মইনুল ইসলাম সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি; একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন