নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৭:১৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ | ০৭:১৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন

সমীর কুমার দে : ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেরর পর অনেকগুলো বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে নতুন সরকারের সামনে৷ প্রথমেই খুঁজতে হবে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা৷ এর সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি৷ এছাড়া দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, বেকারত্ব, বিরোধী দলের আন্দোলন ইত্যাদি তো থাকবেই৷

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যদি বলতে হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন ভালো যাচ্ছে না৷ এটা আমরা সবাই জানি৷ নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে কারা ক্ষমতায় আসবে সেটাও আমরা জানি৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনিই থাকছেন৷ তার দলই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে৷ ফলে নতুন সরকারকে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করাটাকে আমি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলবো৷ কারণ, আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকা৷ ফলে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না৷”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হবে সেই সরকারকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি যে পুরোপুরি ইতিবাচক নয়, তা তাদের বেশ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে৷ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয় তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধা দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আনার ঘোষণাও দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর৷

শেখ হাসিনা নিজেও বেশ কয়েকবার বলেছেন,‘‘যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গন নয়, দেশের মধ্যেও মানুষ তাদের কতটা গ্রহণ করছে, সেটাও বড় বিষয়৷ সরকারের মন্ত্রীদের কথা শুনলে মনে হয় তারা লেখাপড়া করেননি৷ যে ভাষায় তারা কথা বলেন, একজন শিক্ষিত, সচেতন রাজনীতিবিদের পক্ষে ওই ভাষা ব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ প্রধানমন্ত্রীও তাদের এসব বিষয়ে কিছু যে বলেন তা-ও মনে হয় না৷ দেশের মানুষের সংকট নিয়ে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যে বক্তব্য দেন সেটা মানুষকে কতটা কষ্ট দেয় তারা সেটা বোঝার চেষ্টাও করেন না৷ ফলে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের নিজেদেরও গ্রহণযোগ্য হতে হবে৷”

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন বছরে অর্থনৈতিক সেক্টরে যে চ্যালেঞ্জ তার কোনোটাই নতুন নয়৷ সবগুলোই বিদায়ী বছরে ছিল৷ মূল্যস্ফীতি আগেও ছিল, এবারও থাকবে বলে ধারণা করা যায়৷ ডলার সংকট ও ডলারের মূল্য নির্ধানের সংকটটিও নতুন নয়৷ দ্রব্যমূল্যও নতুন নয়৷ ফলে অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জগুলো আগে ছিল, সেগুলো এবারও থাকবে৷ নতুন বছরে সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে নতুন সরকারকে৷”

গার্মেন্টস সেক্টরে মাঝে মধ্যে যে অস্থিরতা দেখা যায়, সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখাও সরকারের আরেকটা চ্যালেঞ্জ হবে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্র যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, সেখানে শ্রমিকদের সুবিধাবঞ্চিত করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করবে৷ ফলে শ্রমিকদের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে৷ এ বিষয়ে এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রাজনীতি৷ রাজনীতি ঠিক হলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে৷ সেটা অর্থনীতি বলেন আর শ্রমনীতি বলেন৷ কিন্তু নতুন বছরে আমরা কী ভালো রাজনীতি পাবো? পাবো না? তাহলে সবকিছুতেই আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকবে৷ সেটা হতে পারে অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, বেকারত্ব… সবকিছু৷ ফলে বিদেশিরা কী বলছে, সেটা নয়, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই রাজনীতিটা ঠিক করা প্রয়োজন৷ এটা যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে মানুষও শান্তিতে থাকবে৷”

ডেঙ্গু পরিস্থিতিও ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে৷ বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সব অতীত রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৩ সালে৷ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন, আর শুধু ২০২৩ সালেই সেই সংখ্যাটা ছিল ১ হাজার ৬৯৭ জন৷ আগের ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে যত মানুষ মারা গেছেন, গেল এক বছরেই মারা গেছেন তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষ৷ ডেঙ্গু পরিস্থিতির এই পর্যায়ে আসার পেছনে অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, সিটি কর্পোরেশনসহ প্রশাসনের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের মতো বিষয়গুলোকে তুলে ধরা হয়৷ এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি৷

শিক্ষানীতিও নিয়েও বিদায়ী বছরে অনেক আলোচনা হয়েছে৷ নতুন যে শিক্ষানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে৷ শিক্ষানীতির বিষয়ে জানতে চাইলে এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “শিক্ষানীতির নামে যা করা হচ্ছে তা ভালো কিছু বলে আমার মনে হচ্ছে না৷ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা-নিরিক্ষা কখনোই ভালো ফল দেয় না৷” অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হকও মনে করেন, “এই শিক্ষানীতি ভালো হয়নি৷ ইংলিশ ভার্সনের নামে এখন শিক্ষার্থীরা না শিখছে বাংলা, না শিখছে ইংরেজি৷ ফলে ভবিষ্যতে আমাদের একটা প্রজন্ম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল৷”

অন্যদিকে নতুন বছরের প্রথমদিন সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ২৪৪ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা৷ একিউআই অনুযায়ী, সোমবার ঢাকার বাতাসকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কারণ, ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে৷ শুধু বছরের প্রথম দিন নয়, গোটা বছর ধরেই ছিল এই চিত্র৷ নতুন বছরে পরিস্থিতির উত্তরণে কাজ করতে হবে সরকারকে৷- সমীর কুমার দে, জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে, ঢাকা

শেয়ার করুন