নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২৩শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে আইএমএফ

ধনীদের কর বাড়াও, গরিব বাঁচাও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ধনীদের কর বাড়াও, গরিব বাঁচাও

ফাইল ছবি

চরম অর্থসংকটে ভুগতে থাকা পাকিস্তান বহুদিন ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু দফায় দফায় বৈঠকের পরেও ঋণের শর্ত নিয়ে একমত হতে পারেনি দু’পক্ষ। এর ফলে ঝুলে রয়েছে আইএমএফের ঋণ ছাড়ের বিষয়টি। তাই প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী এমন শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি, যা মানতে পারছে না পাকিস্তান সরকার?

সম্প্রতি মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে জার্মান সম্প্রচারমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জানিয়েছেন, পাকিস্তান সরকারের কাছে তাদের মাত্র দুটি চাওয়া: গরিবদের রক্ষা করো এবং ধনীদের ওপর কর বাড়াও। তিনি বলেন, আমরা চাই, পাকিস্তান এমন পদক্ষেপ নিক, যাতে সে বিপজ্জনক জায়গায় না পৌঁছায়, যেখানে ঋণ পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়ে।

গত বছর ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা। এতে তাদের তিন হাজার কোটি ডলারের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রাণঘাতী সেই দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে আইএমএফ প্রধান বলেছেন, তারা চান, পাকিস্তান তার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করুক। জর্জিয়েভা বলেন, আমরা দুটি জিনিসের ওপর জোর দিচ্ছি। প্রথমত, কর সংগ্রহ। যারা সক্ষম, যারা ভালো অর্থ উপার্জন করছেন, সরকারি-বেসরকারি খাত নির্বিশেষে অর্থনীতিতে তাদের অবদান রাখতে হবে।

‘দ্বিতীয়ত, চাপের ন্যায্য বণ্টনের মাধ্যমে ভর্তুকি কেবল এমন লোকদের দিতে হবে, যাদের সেটি সত্যিই প্রয়োজন। ভর্তুকি থেকে ধনীরা উপকৃত হওয়া উচিত নয়। উপকৃত হওয়া উচিত দরিদ্রদের। আমরা চাই, পাকিস্তানের দরিদ্র জনগণ সুরক্ষিত থাক।’ আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের ১০ দিনব্যাপী ইসলামাবাদ সফর শেষ হওয়ার পরপরই এসব কথা বললেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ছেড়েছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা। তবে এই দফায়ও সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়েছে দু’পক্ষ। এটি সফল হলে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পেতো পাকিস্তান, যা তাদের জন্য এই মুহূর্তে খুবই জরুরি।

আরও পড়ুন  বিশ্ব অর্থনীতিতে ১৩ লাখ কোটি ডলার সুদের বোঝা

অবশ্য আইএমএফ প্রতিনিধিরা বিদায় নেওয়ার পরে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছিলেন, তাদের সরকার আইএমএফের শর্তে রাজি হয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ৬৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারের একটি বিল পেশ করেছেন ইসহাক। ওই বিলে ট্যাক্স ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। জানা গেছে, নির্ধারিত সব শর্ত পূরণে পাকিস্তানকে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির সঙ্গে ৬০০ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচিতে অংশ নেয় পাকিস্তান। গত বছর এর আকার বাড়িয়ে ৬৫০ কোটি ডলার করা হয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত আগস্টে ১১৭ কোটি ডলার ঋণ পায় পাকিস্তান। তবে এতেও বিপদ কাটেনি।

পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্যমতে, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে, যা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। করাচি-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ কায়সার বাঙালি আল-জাজিরাকে বলেছেন, তিনি পাকিস্তানের জন্য আইএমএফ প্রধানের অনুভূতির প্রশংসা করেন। তবে, শর্ত অনুযায়ী কর বৃদ্ধি দেশটির অর্থনীতিকে আরও বেশি আঘাত করবে। তার মতে, একটি অচল অর্থনীতির ওপর করের বোঝা বাড়ালে সেই অর্থনীতি আরও সংকুচিত হবে, বেকারত্ব এবং দারিদ্র্য আরও বেড়ে যাবে। সূত্র : আল-জাজিরা
পরিচয়/সীমা

শেয়ার করুন