বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটতে শুরু করেছে। ডলারসংকট আর চাপে থাকা রিজার্ভ নিয়ে এবার একের পর এক সুখবর আসছে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার পর বেশ খানিকটা বেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়ে আরও শক্তিশালী হলো দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকটি। অবশ্য এর আগের মাস নভেম্বরেও সন্তোষজনক রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসে থাকা প্রায় দেড় কোটি বাঙালি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষ মাসে ব্যাংকগুলো ১.৯৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। আর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৭ বিলিয়ন ডলার। যা সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১০.৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময় শেষে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০.৪৯ বিলিয়ন ডলার।
ডলার সংগ্রহের নির্ধারিত দামের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছুটা নমনীয়তার কারণে ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭.০৬ শতাংশ বেড়েছে।ব্যাংকাররা এর আগে আশা করেছিলেন ডিসেম্বরের শেষে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, টাকার বিপরীতে ডলারের দর ভালো হওয়ায় প্রবাসীরা এখন রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোতে ভালো দর পাওয়ায় অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানো কমেছে বলেও জানান তারা। ব্যাংকাররা বলছেন, অনুকূল বিনিময় হারের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। গত মাসে এক ডলারের জন্য ১২২ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া গেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো বছরের শেষের দিকে ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে।’
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, অ্যাসোসিয়েশন অভ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলো ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দেবে। এর বাইরে ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারে। সে হিসেবে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারেে দাম সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ২৪ পয়সা পর্যন্ত দিতে পারে।
তবে ব্যাংক এমডিদের সংগঠন দুটোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া ডলারের এই দাম অনেক ব্যাংকই মানেনি না। সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে ব্যাংকগুলো।
একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বেশ কয়েকটি ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝতে পেরেছে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নিয়ে ব্যাংকগুলোকে খুব বেশি চাপ দিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়।উল্লেখ্য, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার।