নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধীর হচ্ছে পশ্চিমা ক্রয়াদেশ

স্থবিরতার মুখে পড়ছে ভিয়েতনামি কারখানা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
স্থবিরতার মুখে পড়ছে ভিয়েতনামি কারখানা

পশ্চিমে শুরু হচ্ছে ছুটির কেনাকাটার মৌসুম। তুমুল চাহিদার কারণে খুচরা বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত সময় পার করে। নভেম্বরের থ্যাংকসগিভিং থেকে শুরু করে ইংরেজি নববর্ষ পর্যন্ত চলে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের কেনাকাটা। এ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপেও। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে মৌসুম শুরুর আগেই পণ্যের মজুদ বাড়াতে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় নামে। ফলে বছরের এ সময়ে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় ভিয়েতনামের কারখানগুলোকে। তবে এ বছর যেন একেবারেই আলাদা। বছর শেষে কেনাকাটার মৌসুমের আগে ক্রয়াদেশের অভাবে স্থবিরতার মুখে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির কারখানাগুলো।

নিক্কেই এশিয়ার খবর অনুসারে, পশ্চিমা অর্থনীতির মন্থরতা ভিয়েতনামের মতো এশিয়া প্যাসিফিকের উৎপাদননির্ভর অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশগুলো পশ্চিমের কাপড়, ইলেকট্রনিকস ও অন্য জনপ্রিয় ছুটির উপহারের শীর্ষ উৎস হলেও চাহিদা হ্রাসের মুখোমুখি হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনামের রফতানি আগের মাসের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানির ঘাটতি ও অর্থনৈতিক সংকোচনের মতো পরিস্থিতি পশ্চিমা ভোক্তাদের ব্যয় কমাতে বাধ্য করেছে। এ পরিস্থিতি উৎপাদননির্ভর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নাইকি, পুমা, ইয়োনেক্স ও লেভিসের মতো পশ্চিমা জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ লেবেল প্রিন্ট করে পো লাই কাম। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক আনহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যদি পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না পারে তাহলে আমাদের জন্য ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে।

দেশটিতে জুতা, ফোন ও আসবাবপত্রের মতো পণ্যের উৎপাদন ধীর হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতের ছাঁটাইয়ের মুখোমুখি হওয়া কর্মীরা এরই মধ্যে গ্রামে ফিরে যেতে শুরু করেছে। যেমনটি ২০২১ সালে দেখা গিয়েছিল। যদিও সেই সময় কভিডজনিত লকাডাউনের কারণে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছিল। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভিয়েতনামের অর্থনীতি ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগে কভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সময়ের তুলনা করার কারণে এ প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি বলে মনে হতে পারে। তবে বছরের শেষ তিন মাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, ভিয়েতনামের রফতানি আশঙ্কার চেয়ে আরো তীব্রভাবে সংকুচিত হয়েছে। গত মাসে দেশটির রফতানি ২ হাজার ৯৯০ কোটি ডলারে নেমেছে। রফতানির এ পরিমাণ চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। মালয়েশীয় মেব্যাংক বলেছে, বিশ্বজুড়ে কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রগুলোর চাহিদা কমে যাওয়ায় ভিয়েতামের রফতানি সংকুচিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, উচ্চ মজুদ ও আমদানিকারক দেশগুলোয় নিম্নমুখী চাহিদা এশিয়ার রফতানি আরো কমিয়ে দেবে। সম্প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি আঞ্চলিক অর্থনীতিগুলোর চলতি বছর প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। এর আগে গত এপ্রিলে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

ভারতভিত্তিক তুলা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসপি ইয়ার্নসের পরিচালক মেঘা খেমকা চলতি বছরের বাজার পরিস্থিতিকে কেবল ধীর নয়, বরং মৃত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার প্রতিষ্ঠানের ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে ক্লায়েন্ট রয়েছে, যারা ইউরোপের এইচঅ্যান্ডএম ও প্রাইমার্কের মতো খুচরা বিক্রেতাদের পোশাক উৎপাদন করে। একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, শিল্পের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ব্যয়ের টান অনুভব করা হচ্ছে। এটি খুব দৃশ্যমান। কেবল খবরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি বাস্তবে বাজারে ঘটছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়াচ্ছে পশ্চিমা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। একদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অন্যদিকে ঋণের ব্যয় বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা দেশগুলোর ক্রয়াদেশ আগামী বছর আরো কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বৃহত্তম গ্রাহক। দেশগুলোয় এমন অস্থিতিশীলতা ভিয়েতনামসহ এশিয়ার অর্থনীতিগুলোকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।

শেয়ার করুন