নিউইয়র্ক     শনিবার, ২২শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিগগির নতুন কর্মসূচি নিয়ে নামছে বিএনপি

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৩ | ০২:০৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩ | ০২:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
শিগগির নতুন কর্মসূচি নিয়ে নামছে বিএনপি

বিএনপি।ছবি : সংগৃহীত

চলমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন আরও জোরদার করতে চাইছে বিএনপি। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে দলটির হাইকমান্ড। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে অর্থাৎ কোরবানির ঈদের আগেই সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফার ভিত্তিতে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়তে চাইছেন। তারা এবার আন্দোলনের গতি ওঠানামা করতে চান না। বড় কর্মসূচি না দিয়ে আবারও সাদামাটা কর্মসূচি দেওয়ার জন্য জোটের শরিকরা পরামর্শ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে জেলা, মহানগর বা বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবেশ, মানববন্ধন অথবা অবস্থান বা ঘেরাও কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে। এরপর জেলা বা বিভাগে রোডমার্চের মতো যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি আসবে। এসব কর্মসূচি নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আগামী বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। এসএসসি পরীক্ষা চলমান থাকায় কর্মসূচি নিয়ে নতুনভাবে ভাবছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান আন্দোলন শুধু বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়; দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ফেরানোর আন্দোলন। দেশের বর্তমান সংকট বিএনপির একার নয়, এটা সমগ্র দেশবাসীর সংকট। এই সরকারকে না সরালে কেউ রেহাই পাবে না। সুতরাং আন্দোলন আরও গতিশীল হবে। জানা যায়, ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, গণপদযাত্রাসহ একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির বেশিরভাগই আর ঘোষণা করা হবে না। ফলে আবারও নতুন করে কোনো ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করার জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের পর ইতোমধ্যে গণফোরাম, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কালবেলাকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান যুগপৎ আন্দোলন আরও গতিশীল করতে চূড়ান্ত কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বিএনপি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

জানা যায়, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। আন্দোলনকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭ নেতাকর্মী নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছেন। কারাগারেও যেতে হয়েছে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীকে। প্রথমদিকে গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক চাল, ডাল জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি, ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন, যশোরে আব্দুল আলিমসহ মোট পাঁচজন হত্যার প্রতিবাদে, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। গত বছরের ১২ ও ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহে, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও সবশেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করে বিএনপি। ঢাকার সমাবেশ থেকে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ধারাবাহিক ওই আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো।

কর্মসূচির ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবার পুরো রোজার মাসেই একাধিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। ইফতার মাহফিল আয়োজনের পাশাপাশি রাজপথের কর্মসূচিতেও সরব ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। এই রোজাতেই সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে উপজেলা, জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন স্তরে দুই ঘণ্টার ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করা হয়েছে। নতুন করে যুগপৎ আন্দোলনের যে কর্মসূচি আসবে, তা আগের চেয়ে জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রোডমার্চের মতো কিছু কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে বলে বিএনপি ও জোটের নেতারা জানিয়েছেন। যদিও রোডমার্চের মতো কর্মসূচি কতটা নির্বিঘ্নে করা যাবে, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে সংশয় আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের আন্দোলন ১৫ বছর ধরে চলমান। যদিও কেউ কেউ বলেন, ঈদের আগে পরে, আবার কেউ বলেন ঈদের পরে আন্দোলন। আসলে আন্দোলন ফুটবল বা ক্রিকেট খেলার মতো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আন্দোলন কখনো দীর্ঘস্থায়ী, কখনো স্বল্প সময়ের মধ্যে বিজয় লাভ করে। যেমন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আবার ভিয়েতনামের যুদ্ধ অনেক দিন চলেছে, দীর্ঘদিন পর তারা স্বাধীন হয়েছে। কোন সরকার কবে যাবে, সেটি নির্ধারিত নয়; এটি নিশ্চিত যে ফ্যাসিবাদের পতন অনিবার্য। এটি করবে দেশের জনগণ। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের বিদায় ঘটানো হবে।

স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা

গত সোমবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেন স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো পঠিত ও অনুমোদিত হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা আট মাসের বেশি সময় কারাগারে আটক এবং ইউএনবি সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, এই কুখ্যাত আইন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়, যা গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সরকার এই আইনের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সংবাদকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে। ফ্যাসিবাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে এই নিবর্তনমূলক আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সভা অবিলম্বে কারাগারে আটক শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ আটক সব বন্দির মুক্তি ও এ আইনের অধীনে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে। সভা গণতন্ত্রবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানায়।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেন। অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল ২০২৩ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে। দ্রুত তা আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রস্তাবিত আইন নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। আইটি প্রণয়নে অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি। বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত আইনটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকারপরিপন্থি। প্রস্তাবিত ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩’ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে। সূত্র :  দৈনিক কালবেলা

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন