নিউইয়র্ক     রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বব্যাপী তীব্র হচ্ছে খাদ্য সংকট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ | ০১:০৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ০১:১৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বিশ্বব্যাপী তীব্র হচ্ছে খাদ্য সংকট

ছবি : সংগৃহীত

ক্রমশই তীব্র হচ্ছে বিশ্বের খাদ্য সংকট। রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানির উচ্চ দামে বৈশ্বিক কৃষি ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই চরম পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তাদের এক পরিসংখ্যানে বলছে, ২০০৫ সালের পর এবার খাদ্য মূল্য সূচক রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের খাদ্য শস্যের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ২০২২ সালে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে লড়াই করা লোকের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। পৃথিবীব্যাপী ২০১৯ সালে যেখানে অনাহারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৫০ লাখ সেখানে বিদায়ী বছরে তা দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ। সামনের মাসগুলোতে খাদ্য শস্যের বাজার কিছুটা সহনীয় হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে খাদ্য সংকট কাটবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বার্তা সংস্থা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যেই ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করা পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আরও খারাপ সময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এটি সোমালিয়ার মতো দেশে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ক্যারি ফাউলার সিএনএনকে বলেন, ‘খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি উচ্চ দাম এখনও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমি মনে করি ২০২৩ সাল আমাদের জন্য একটি রুক্ষ বছর হতে যাচ্ছে। এ সময়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।’

রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেই মধ্য ও দক্ষিণ ব্রাজিল প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি হয়েছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরবরাহ প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হওয়ায় খাদ্যের দাম এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। এবার প্রাকৃতিক গ্যাসের রেকর্ড মূল্য নাইট্রোজেনভিত্তিক সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষকদের জন্য সার কেনা দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে ওঠেছে।

যুদ্ধের আগে ইউক্রেন প্রতি বছর বিশ্ব বাজারে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য সরবরাহ করে। একইসঙ্গে বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের শীর্ষ রপ্তানিকারকও তারা। এছাড়াও ২০১৯ সালে রাশিয়া এবং ইউক্রেন একত্রে বিশ্বব্যাপী গম রপ্তানির প্রায় এক চতুর্থাংশ সরবারহ করেছিল। তবে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের খাদ্য সরবারহ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে ওঠেছে।

অক্সফাম আমেরিকার সিইও অ্যাবি ম্যাক্সম্যান বলেন, “ইউক্রেন সংকট বিশ্বে খাদ্যের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এতে সরবারহ প্রক্রিয়া মারাত্নক ভাবে ব্যাহত হয়েছে। পূর্ব আফ্রিকা এবং হর্ন অব আফ্রিকার মতো জায়গায় এ সংকট আরও তীব্র ভাবে আঘাত হানছে।’

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্যারি ফাউলার আরও বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনদের সংখ্যা আমাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষমতার চেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিনা।’

খাদ্য সরবরাহ আরও বাড়ানো দরকার উল্লেখ করে টুইট করেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে আমরা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পেয়েছি। এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এই অর্থের ৭০০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অর্থ দিয়ে আমরা ১৬ কোটি মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে পেরেছি। কিন্তু উচ্চ খাদ্যমূল্যে এবং রাশিয়ার যুদ্ধ অস্থিরতা তৈরি করে চলেছে। বৃহত্তর চাহিদাযুক্ত দেশগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আরও অর্থ দরকার।’

বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী ৫ বছরের চেয়ে কম বয়সী ৩ কোটির বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। স্বাভাবিক বাচ্চাদের তুলনায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের সাধারণ রোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১২ গুণ বেশি। অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের জন্য সামনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে যাচ্ছে জানিয়ে সতর্ক করেছেন এফএও মহাপরিচালক কু ডংইউ।

তিনি বলেন, ‘এবছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের অবশ্যই অল্পবয়সী শিশু, মেয়ে, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রাপ্যতা এবং ক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। জীবন বাঁচাতে এবং তীব্র অপুষ্টির মূল কারণগুলো মোকাবেলা করতে আমাদের এখনই জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের সব খাতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

শেয়ার করুন