নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে বিদেশযাত্রা, কমছে রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৪৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ | ০২:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাড়ছে বিদেশযাত্রা, কমছে রেমিট্যান্স

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কাজ নিয়ে বিদেশে গেলেও গত ৪১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে গতমাস সেপ্টেম্বরে। জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাব বলছে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য বাংলাদেশ থেকে কাজ নিয়ে মানুষের বিদেশ যাওয়া শুরু হয়েছে ১৯৭৬ সালে। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করতে বিদেশে গেছেন।

বিএমইটির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৫ জন শ্রমিক বিভিন্ন ধরনের কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২২ সালের একই সময়ে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৯ জন। প্রবাসে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ঘটনা। ২০২২ সাল থেকে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর রেকর্ড করলেও প্রবাসী আয় কমছে। আবার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও দুর্বল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ৪১ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর আগে সবচেয় কম ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে।

তথ্য বলছে, আগের মাস আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ শতাংশ। আগস্টে প্রবাসীরা ১৬০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ১৩ শতাংশ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে রেমিট্যান্স কমছে। নির্দিষ্ট করে বললে, ভালো মুনাফার কারণে শ্রমিকরা হুন্ডিতে অর্থ পাঠাচ্ছেন। বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে না আসার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে কোনো ধরনের সাহায্য করতে পারছে না। যদিও বিশেষজ্ঞরা অর্থ পাচারকে আরও একটি বড় কারণ বলে দায়ী করছেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়াটাই বাংলাদেশে ডলার সংকটের একমাত্র সমাধান নয়। বরং যেসব অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশে ডলার বিশেষ করে রেমিট্যান্স আসছে সেগুলো বন্ধ করা না গেলে ডলার সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ডলার আসার ওপর একটা চাপ অবশ্যই আছে। আর সেটা হচ্ছে হুন্ডি। হুন্ডির কারণেই বিদেশে ডলারে চাহিদা অনেক বেশি বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ জন্য একটা অ্যাগ্রেসিভ অ্যাকশন নেওয়া যায় কি না এই জিনিসটাকে পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি দু-চারজনকে না ধরতে পারেন তাহলে তো এটা চলতেই থাকবে।’ তবে একই সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার যদি বাজার দরের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায় তাহলে সেটা খারাপ হয় না- বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, ডলারের দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে ডলার সংকট সমাধানে সেটি সহায়ক হতে পারে। তবে একই সঙ্গে হুন্ডির ব্যবহারও কমিয়ে আনতে হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অবস্থান নির্দেশিকা (বিপিএম৬) অনুযায়ী, রির্জাভ ২১ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। তবে দক্ষকর্মী প্রেরণ, ন্যায্য মজুরি ও কাজের সুযোগ থাকা দেশগুলোতে শ্রমিকদের যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে বলেছেন খাত বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়া বেড়েছে, যদিও এদের ৮০ শতাংশই অদক্ষ ও অল্প দক্ষ। বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বিদেশে গেছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ শ্রমিক, ২০১৯ সালে গেছে ৭ লাখ ১৫৯ জন, ২০২০ সালে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৬৯ জন, ২০২১ সালে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন ও ২০২২ সালে কাজ নিয়ে বিদেশে গেছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন শ্রমিক। অধিকাংশ শ্রমিক গেছে প্রচলিত চাকরি বাজার সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঠিয়েছেন ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

শেয়ার করুন