নিউইয়র্ক     রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি : বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ০১:১১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ | ০১:১৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি : বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এটি সংস্থাটির আগের প্রাক্কলনের চেয়ে কম। এমনকি সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা অনেক কম। ৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রক্ষেপণ যথেষ্ট কম বলে মনে করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরেই থাকবে। অন্যদিকে, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসকে যথার্থ মনে করেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে চ্যালেঞ্জ করছে না সরকার। তবে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কম হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বরং আরও কিছুটা বেশিও হতে পারে। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। মূল্যস্ম্ফীতি কমছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। ডলার সংকটও কাটছে। এই ধারাবাহিকতায় আগামী ছয় মাস আরও ভালো যাবে বলে আশা করা যায়। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হলে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশার পরিবর্তে আশঙ্কা তৈরি হবে। তখন প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হয়তো হবে না।

অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি খুব মন্দ নয়, বরং বেশ ভালো। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমছে, উন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশ সব শ্রেণিতেই প্রবৃদ্ধি কমছে, সেখানে ৫ দশমিক ২ শতাংশ যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি। গত ছয় মাসের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এই নিয়ে আক্ষেপ থাকার কথা নয়।

জাহিদ হোসেনের মতে, আগের প্রাক্কলন কমানোর চারটি কারণ থাকতে পারে। ডলার সংকট, মূল্যস্ম্ফীতি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ডলার সংকটে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। বিলাসী পণ্যের সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানিও এতে কমেছে। মূল্যস্ম্ফীতি ছিল ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৯ শতাংশের বেশি হারের মূল্যস্ম্ফীতির বিপরীতে মজুরি বেড়েছে গড়ে ৬ শতাংশের মতো। তার মানে, মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এমনকি সারাদেশে চলমান শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আবার আগাম বন্যার ঘটনাও ছিল। এসব কারণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে ৫ দশমিক ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়ার কোনো কারণ নেই।

গত মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনার কারণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক প্রতিকূলতার কথা বলা হয়েছে। জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে শিল্পকারখানা এবং বাসাবাড়িতে চাহিদামতো বিদ্যুৎ পৌঁছানো যায়নি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে লোডশেডিং করতে হয়েছে।

এতে অনেক কারখানা বন্ধ ছিল। জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় শিল্প উৎপাদন কমেছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি নিতে হয়েছে সরকারকে। মূল্যস্ম্ফীতির নেতিবাচক প্রভাবে মানুষের আয় কমেছে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন