নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘরে বসেই মিলবে রেমিট্যান্স

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২২ | ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২২ | ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ঘরে বসেই মিলবে রেমিট্যান্স

সার্কুলারে বলা হয়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিদেশি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার, ব্যাংক, ডিজিটাল ওয়ালেট, কার্ড স্কিম ও এগ্রিগেটর পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে।

বিকাশ, রকেট ও উপায়ের মতো মোবাইল সেবাদাতাদের মাধ্যমে (এমএফএস) সরাসরি রেমিট্যান্স আনার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগ্রহী মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আয় প্রত্যাবাসন-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালে ঘরে বসেই তা পাবেন গ্রাহক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব অথরাইজড ডিলার এবং মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অফ কর্পোরেট কমিউনিকেশনস্ শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আশা, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে প্রবাসীরা লাইসেন্সপ্রাপ্ত এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই নিরাপদে এবং আরো দ্রুত বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স পাঠাতে পারবেন, যা রেমিটেন্স গ্রহণে আরো গতিশীলতা আনবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুসারেই পরবর্তী সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে।’

এতদিন বিদেশি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এনে ওই টাকা গ্রাহকের মনোনীত ব্যক্তির এমএফএস অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেয়া হতো। এতে টাকা পেতে গ্রাহকের সময় বেশি লাগত। অনুমোদন পাওয়া সেবাদাতারা এখন থেকে সরাসরি রেমিট্যান্স আনতে পারবে এবং গ্রাহকও দ্রুত রেমিট্যান্সের টাকা পাবেন।

সার্কুলারে বলা হয়, লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবাসী আয় প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিদেশি অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রোভাইডার, ব্যাংক, ডিজিটাল ওয়ালেট, কার্ড স্কিম ও এগ্রিগেটর পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবে।

মোবাইল আর্থিক সেবাদাতাদের বিদেশি সহযোগীদের সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা থাকবে– যার মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা আসবে এবং সেখান থেকে প্রবাসী গ্রাহকের মনোনীত মুঠোফোনের আর্থিক অ্যাকাউন্টে তার মূল্য টাকায় প্রদান করবে।

বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা যথাযথ ই-কেওয়াইসি পরিপালন করে মোবাইল ব্যাংকিং অর্থাৎ এমএফএসে হিসাব খুলতে পারবেন। আর বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো মুঠোফোনের আর্থিক সেবাদাতাদের অ্যাকাউন্টে লেনদেন নিষ্পত্তির সুবিধা দিতে পারবে। এ জন্য অবশ্য নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিদেশস্থ নস্ট্রো হিসাবে অর্থ জমার পর উক্ত অর্থের সমপরিমাণ টাকা সেটেলমেন্ট হিসাবে জমা হবে।

‘নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট’ হলো বৈদেশিক মুদ্রায় দায়-দেনা পরিশোধের জন্য বিদেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্ট। এ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকের পক্ষে বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট এলসির পেমেন্ট দেয়া হয়। রপ্তানি বিল ও রেমিট্যান্সের আয়ও নস্ট্রো অ্যাকাউন্টে যোগ হয়।

গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ হুন্ডি বেড়ে যাওয়ার কারণেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৫ দিনে (১ থেকে ২৫ নভেম্বর) ১৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। অথচ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

চলতি মাসের বাকি ৫ দিনে এই হারে রেমিট্যান্স এলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মতো নভেম্বর মাসেও দেড় বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি রেমিট্যান্স আসবে। গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

ডলারের বাজারের অস্থিরতার কারণে অবৈধ হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। এটা বন্ধ করতে না পারলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার; যা ছিল আগের ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ। আগস্টে আসে ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই দুই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা ছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার এসেছিল। পরের মাস অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এ মাসে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। সূত্র : এনবি নিউজ বাংলা

শেয়ার করুন