নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২টি স্মার্ট সিটি গড়তে ১ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব চীনা কোম্পানির

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ০১:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩ | ০১:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
২টি স্মার্ট সিটি গড়তে ১ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব চীনা কোম্পানির

চীনের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় করা হচ্ছে ধীরগতিতে। তবে এর মধ্যেই আরেকটি চীনা কোম্পানি এখন দুটি মেগা প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি প্রকল্পের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ৮.০৮ বিলিয়ন ডলারের নয়টি প্রকল্পের জন্য ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল তখন—এর মধ্যে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে মাত্র ৪.৪৭ বিলিয়ন ডলার।

এখন কেরানীগঞ্জ ও আশুলিয়ায় দুটি উদ্ভাবনী স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে এই বিশাল বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিংয়ের প্রকৌশল ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না রোড এন্ড ব্রিজ করপোরেশন (সিআরবিসি)।

এর মধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসংলগ্ন কেরানীগঞ্জ ওয়াটারফ্রন্ট স্মার্ট সিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া আশুলিয়ার তুরাগ নদীর বন্যা প্রবাহ অঞ্চল সংরক্ষণ ও কমপ্যাক্ট টাউনশিপ গড়ে তুলতে প্রকল্প ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, সিআরবিসির অর্থায়নে ইতিমধ্যে প্রকল্প দুটির সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিবেশগত সমীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা কোম্পানিটি এরই মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চাইনিজ ইকোনমিক জোন নির্মাণের চুক্তি পেয়েছে। কোম্পানিটি যদি কেরানীগঞ্জ ও তুরাগে মেগা প্রকল্পের চুক্তিও পায়, তাহলে প্রকল্পটি বিলম্বিত হতে পারে।

বিনিয়োগকারী সংস্থার নিজেই প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সিআরবিসির নিজের করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষার ভিত্তিতে তাদের অর্থায়নেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পরবর্তীতে পুরো দায়ভার সরকারের ওপর বর্তাবে, যা সরকারের জন্য সুবিধাজনক হবে না।

তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করা কোম্পানিকে দিয়ে এ ধরনের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা উচিত। সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করা উচিত স্বাধীনভাবে। এ পদ্ধতি আরও যুক্তিসংগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে।

‘যে পক্ষ অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন দুটোই করবে, তারাই যদি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে, সেখক্ষেত্রে সমীক্ষায় প্রকল্পটিকে আর্থিকভাবে লাভজনকভাবে দেখানো না হলে প্রকল্পটি নিয়ে আর অগ্রসর না হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কর্মসংস্থান তৈরি না-ও হতে পারে। এই পরিস্থিতির ফলে এমন এক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হতে পারে, যা ভবিষ্যৎ চুক্তি বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে,’ বলেন তিনি।

প্রকল্পের বিস্তারিত

কর্মকর্তারা জানান, রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের কাছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে অবস্থিত কেরানীগঞ্জ ওয়াটারফ্রন্ট স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আয়তন হবে প্রায় ৫ হাজার ১৯ একর।

আর তুরাগ প্রকল্পটি তুরাগ নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় অবস্থিত, যার আয়তন ৯ হাজার ৫১৯ একর।

প্রকল্প দুটি চার ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।

১৫ বছর মেয়াদে কেরানীগঞ্জ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ৭ হাজার কোটি টাকা এবং ভূমি উন্নয়নে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জের প্রস্তাবিত স্মার্ট সিটিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ছোট ছোট অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হবে।

অন্যদিকে, তুরাগ প্রকল্পটি মূলত বন্যা প্রবাহ অঞ্চল সংরক্ষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২ শতাংশ এলাকা জলাশয়ের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৩৮ শতাংশ এলাকা নিয়ে কমপ্যাক্ট টাউনশিপ গড়ে তুলবে রাজউক, যার মধ্যে ৮ শতাংশ এলাকায় সবুজায়ন করা হবে।

বাকি ৩০ শতাংশ এলাকায় আবাসিক, বাণিজ্যিক ভবনসহ অন্যান্য বিনোদন সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

এ বিষয়ে গত ২৫ জুলাই অর্থ বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং চীনা কোম্পানিটির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে সিআরবিসি একটি ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার-টু-সরকার (জিটুজি), সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি), যৌথ উদ্যোগসহ ছয়টি মডেলের প্রস্তাব তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছে সূত্র।

সিআরবিসির ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির প্রস্তাব পর্যালোচনা করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-১) সৈয়দ মামুনুল আলমের নেতৃত্বে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, অর্থ বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ড্রাফটিং অনুবিভাগ, পূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাউজকের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি সিআরবিসির বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তি পর্যালোচনা করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

সৈয়দ মামুনুল আলমবলেন, কমিটির একটি সভা হয়েছে। আরও কয়েকটি সভা করতে হবে। ‘তবে এই দুই প্রকল্প নিয়ে এখনও বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজউক এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।’

এই দুটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ২০১৯ সালে রাউজক ও চীনা কোম্পানিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। তার আলোকেই প্রকল্প দুটির সম্ভাব্যতা ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

চলতি বছরের ১০ জুলাই পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়, যা পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদন করেছে।

পরিবেশগত উদ্বেগ

২০১৯ সালে যখন এই দুই প্রস্তাবিত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য সিআরবিসির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে রাজউক, তখন পরিবেশবাদীদের বিভিন্ন সংগঠন এর বিরোধিতা করেছিল।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলেছিল, এই প্রকল্প দুটি নেওয়া হলে জলাধার ভরাট হবে এবং উন্মুক্ত জায়গা কমে যাবে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২০২২ সালের ২৫ মে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটির ওপর প্রেজেন্টেশন দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক।

সেখানে প্রকল্প দুটির স্থাপত্য-নকশার উপস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে জলাধার সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা রাখা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। – আবুল কাশেম, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

শেয়ার করুন