নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ মাসে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংক ঋণ ৮২ হাজার কোটি টাকা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৩ | ০২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২০ মে ২০২৩ | ০২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
১০ মাসে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাংক ঋণ ৮২ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের শেষদিকে এসে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়া অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে বাংরাদেশ সরকার। জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে নিয়েছে ৮২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, যা বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৩.৫২ শতাংশ। ঋণের প্রায় ৮০ ভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ করেছে। এ ঋণের মধ্যে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে শুধু গত এপ্রিল মাসেই নিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মধ্যে একক মাসে সর্বোচ্চ। এর আগের মাস মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে সরকারের মোট নিট ব্যাংক ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়। এ ঋণের অধিকাংশই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় করা হয়। অর্থবছরের শেষ ২ মাসে ঋণের পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ সরকারকে উন্নয়ন ও রাজস্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় বাড়াতে হবে। বিশ্লেষকদের ধারণা, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে সরকার ঋণ নেয় ১৭,৭৭০ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে নেয় ৬,৮০৩ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ৩৪ হাজার ৯ কোটি টাকা। সরকারের ঋণ বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, সরকারের ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ে-আবার কমে যায়। প্রয়োজনে নিয়েছে, আবার সমন্বয় হয়ে যাবে।

জানা গেছে, সরকারের ব্যাংক ঋণ অর্থবছরের শেষদিকে এসে বাড়তে থাকার আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ফেব্রুয়ারিতে বিকল্প উৎস থেকে ঋণ নিতে পরামর্শ দিয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারের ব্যাংক ঋণের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে। অন্যদিকে নন-ব্যাংক উৎস থেকে ঋণ নেয়ার হার কমছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমে আসায়। এ প্রবণতা মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে। বিকল্প উৎসমুখী হতে এমন পরামর্শ এলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়ছে এবং মূল বিকল্প সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ( পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার কথা বলছেন। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদনের পর কান্ট্রি প্রতিবেদনে পর্যায়ক্রমে এনএসসি নির্ভরতা কমাতে বলেছে। সরকারও বৈশ্বিক অর্থায়নকারী সংস্থাটির একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাবসহ আর্থিক ও ব্যাংক খাতের অনেক পরামর্শ মানতে সম্মত হয়েছে। এতে ব্যাংক থেকে ঋণ কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে বাড়ানোর পথে যাওয়ার খুব বেশি সুযোগও থাকছে না সরকারের। অন্য উৎস থেকে না পেয়ে নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতেই বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-এপ্রিল সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বেড়েছে এক বছরে ৬৭ হাজার ২৩০ কোটি টাকা বা ৯৩৮.৬৭ শতাংশ। এ নিয়ে গত এপ্রিল শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়ালো ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। অপরদিকে গত ১০ মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা, গত অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল ২৬ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। গত এপ্রিল শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা, এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরই ২ লাখ ২১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ২ লাখ ২১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। পরে তা কিছুটা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়, তখন সেটিকে হাই-পাওয়ার্ড মুদ্রা বলা হয়। এর ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হতে পারে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মানে বাজারে টাকা ছাড়া, যা মুদ্রাস্ফীতি ও লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। মার্চ মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক ৭ মাসের সর্বোচ্চ বেড়ে ৯.৩৩ শতাংশ হওয়ায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯.২৪ শতাংশে নেমে আসে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৬.১৭ শতাংশ। সুত্র : মানবজমিন

সাথী/পরিচয়

শেয়ার করুন