নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বত্রই ডলারের প্রভাব

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৩ | ০৩:২৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ মে ২০২৩ | ০৩:২৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সর্বত্রই ডলারের প্রভাব

ডলার সঙ্কট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ডলার সঙ্কট মেটাতে আমদানি কমিয়ে দেয়া, রফতানিতে উৎসাহ প্রদান, রেমিট্যান্সে বাড়তি সুবিধাও দিচ্ছে সরকার। কিন্তু তারপরও কোনভাবেই কাটছে না ডলারের সঙ্কট। দেশে সর্বত্রই ডলারের প্রভাব বিরাজ করছে। যার সর্বশেষটি দেখা গেল বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের কার্যক্রম সীমিত করেছে এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এইচটিটিপুল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণায় বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ স্থানান্তরে সমস্যার কারণে তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের গ্রাহকরা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পড়েছে সমস্যায়। বিশেষ করে এফ-কমার্স হিসেবে পরিচিত ফেসবুকনির্ভর ব্যবসা প্রতষ্ঠান প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন কার্যক্রম সীমিত হতে চলেছে। একই রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও। দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছে দেশের ব্যাংকগুলো। এতে বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন পাওয়া শিক্ষার্থীরা রয়েছেন বিপাকে। যদিও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। তবে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে সাময়িকভাবে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের যেসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্থানীয় ব্যাংকে ডলারে একটি স্টুডেন্ট ফাইল বা অ্যাকাউন্ট খোলা। এছাড়া গত এক বছরে ডলার সঙ্কটে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে দেশে খাদ্য, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ঘন ঘন বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ছোট ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা দেশের রাজস্ব আয়েও প্রভাব ফেলেছে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঁধে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আয়ের অস্বাভাবিক লক্ষ্য। শেষ ৩ মাসে গড়ে প্রতি মাসে ৪৮ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। যদিও আগের নয় মাসে সংস্থাটির মাসিক গড় আহরণ ছিল মাত্র ২৫ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি কমানো ও রফতানি বৃদ্ধি করা না গেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। আইএমএফ’র মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ ইতোমধ্যে বলেছেন, মূল্যস্ফীতি, অস্থির বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও প্রধান বাণিজ্যিক মিত্র রাষ্ট্রগুলোতে অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও টাকার মানের ওপর চাপ বেড়েছে যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ডলারের সঙ্কট আমরা যা দেখছি বাস্তবে তার চেয়ে আরো গভীরতর। প্রকৃত পক্ষে আমাদের ডলার কী পরিমাণ আছে, ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদার বিপরীতে কী পরিমাণ পাচ্ছে তা নিয়মিত সপ্তাহভিত্তিতে তদারকি করা দরকার। একই সঙ্গে এখন আমাদের দরকার অর্থনীতিতে ভারসাম্য রেখে প্রয়োজনের অগ্রাধিকার নির্ধারণ, সেভাবে এলসি খুলতে দেয়া। অন্যথায় দিনে দিনে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গতকাল বলেছেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ এখন রিজার্ভ ধরে রাখা। আমাদের পেমেন্ট আছে, আকুর দায় পরিশোধ আছে। এসব কারণে রিজার্ভ কমছে, আরও কমবে। তবে এর মাঝে আরও অর্থ সমন্বয় (রফতানি আয়, রিজার্ভ) হবে। রিজার্ভ কমছে এটা ঠিক, আবার বাড়বে।

সূত্র মতে, ডলার সঙ্কটে কাঁচামাল আমদানি কমায় দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আন্তঃব্যাংক মানি মার্কেটে ২০২২ সালের শুরুতে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। বর্তমানে তা ১০৯ টাকায় উন্নীত হয়েছে। যদিও খোলাবাজারে আরও ৭-৮টাকা বেশি। যা মুদ্রাস্ফীতিকে ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে। এতে দেশের সীমিত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অবশ্য ডলার সঙ্কটে চাল-গমসহ খাদ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক কমিয়েও আমদানি বাড়ানো যায়নি। আবার শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, চাল, সার, ছোলা ভোজ্যতেলসহ জরুরি নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এর সঙ্গে হজের মৌসুম শুরু হয়েছে। এখন আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে হজ যাত্রীদের। এমনকি অতীব জরুরী হওয়া স্বত্তেও দীর্ঘদিন থেকে চাহিদা অনুযায়ী ব্লাড ব্যাগ আমদানি করতে পারছেন না আমদানিকারকরা। ফলে দেশের হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্লাড ব্যাগের সঙ্কট। এতে দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি ডলার সঙ্কটে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন ওষুধ প্রস্তুতকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধ উৎপাদকরা ঠিক সময়ের মধ্যে ওষুধ রফতানি করার বিষয়েও উদ্বিগ্ন। যা দেশের ওষুধ খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। পাশাপাশি অগ্রাধিকার খাতভুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ থাকায় সামনে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিল্পের উৎপাদনও বন্ধের উপক্রম হবে। এমনকি এসব পণ্য আমদানিতে এলসিও কম খোলা হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, এলসি খোলার পরও পণ্য দেশে আনার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের তেমন আগ্রহ নেই। এতে চাহিদার তুলনায় যোগান কমে যাওয়ায় হুহু করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এসব কিছুর প্রভাব পড়বে সাধারণ ভোক্তাদের উপর। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হলো ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়টি। সম্প্রতি ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা গ্রাহকদেরকে পাঠানো এক চিঠিতে এইচটিটিপুল বিজ্ঞাপন কার্যক্রম সীমিত করার পেছনে মার্কিন ডলার সঙ্কট ও বিদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় জটিলতার কথা উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ স্থানান্তরে সমস্যার কারণে ফেসবুকের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এইচটিটিপুল বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সীমিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। এইচটিটিপুল বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক সানি নাগপাল বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর তাদের কোনো হাত নেই। সমস্যার দ্রুত সুরহা করতে তারা ডিজিটাল মাধ্যমে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

ই-কমার্স ও এফ-কমার্স (ফেসবুকভিত্তিক) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেটার এই ঘোষণার ফলে দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর মাধ্যমে, কেবল বাংলাদেশ থেকে ডলার বাইরে যায় তাই নয়, বাংলাদেশেও ডলার ফিরে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ডিজিটাল ক্রিয়েটররা যেসব কনটেন্ট তৈরি করে সেগুলোতেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডলার আয় করে। ই-কমার্স ও এফ-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই বিদেশ থেকে পন্য আমদানিসহ নানাভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর বলেন, ফেসবুক সরাসরি পেমেন্ট নেয়া বন্ধ করেনি, তাদের এজেন্ট বন্ধ করেছে। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বিজ্ঞাপন দিতে পারছে না। এদের মধ্যে অনেকে আবার দেশের বাইরে থেকে ডলার পেমেন্ট করছে। এর মাধ্যমে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিদেশে পড়ার সুযোগ পেয়েও যেতে না পারা শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অফার লেটার পাওয়ার পর অ্যাকাউন্ট খুলতে বিভিন্ন ব্যাংকে ঘুরে অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যর্থ হয়েছেন আরিফুল হক। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ঘুরেছি কিন্তু কোনভাবেই অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে যাদের উর্ধ্বতন কেউ পরিচিত আছে তাদেরটা ঠিকই হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে ব্যর্থ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন থাকে বিদেশে পড়তে যাবো। সুযোগ পাওয়ার পরও যখন কেবল ডলার সঙ্কটের কারণে অ্যাকাউন্ট খুলতে না পেরে সেই স্বপ্ন ধ্যুলিস্যাৎ হয়ে যায় এর চেয়ে হতাশার আর কি আছে?

ডলার সঙ্কট মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ডলার সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেট ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। গত মঙ্গলবার ডলারপ্রতি ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায় দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ৫৬ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। যে কারণে কমছে রিজার্ভ। বর্তমানে রিজার্ভ আছে ৩০ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। গতকাল আকু বিল ১ দশমিক ১ বিলিয়ন পরিশোধের পর যা ২৯ দশমিক ৭ বিলিয়নে নেমেছে। আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর সুদসহ আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। সূত্র মতে, বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। তবে আইএমএফ’র হিসাবে ব্যবহারযোগ্য যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো সম্ভব নয়। কারণ তাদের হিসাব মতে, বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে রফতানি উন্নয়ন উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়নসহ অন্যান্য মিলিয়ে হিসাব থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে। এতে দেশে বিদেশি মুদ্রার সঙ্কট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এদিকে একধাপেই ডলারের দাম ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১০৬ টাকায় তুলবে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডলারের একক রেট বাস্তবায়নেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অপরদিকে ডলারের সঙ্কট কাটাতে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সেও ডলারের দাম ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর রফতানি বিল পরিশোধে ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৬ টাকা করা হয়েছে।

সূত্র মতে, এমনিতেই আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি থাকায় নাভিশ্বাস নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পরিবারে। গত বছরের জুলাইতে দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে ডলারের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও অন্যান্য সমস্যায় সঙ্কট আরও চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই আর্থিক খাতের অস্থিরতা অন্য খাতেও ছড়াতে শুরু করেছে। এদিকে বাংলাদেশকে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চলমান অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় সহায়তায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আইএমএফ’র ঋণের কিস্তি পেয়েও স্থিতিশীল হয়নি রিজার্ভ। কিন্তু ঋণ পাওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণে ডলার বিক্রি করে চলছে। এতে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে সাত বছর পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসছে। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ছিল ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ’র ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পরও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। অথচ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছে, মুদ্রা বাজারে নিয়মিত ডলার না ছেড়ে বিশেষ পরিস্থিতিতে ছাড়তে। আর আইএমএফ’র শর্ত মানলে ডলারের দাম ১৩০ টাকায় পেঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তখন এলসি করার সুযোগ দিলেও কোন লাভ হবে না।

সূত্র মতে, ডলারের সঙ্কট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধের কারণে কমেছে আমদানি এলসিও। চলতি বছরের মার্চে আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় আমদানি খরচ কমেছে ৩৯ শতাংশ। একই সঙ্গে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণও কমে এসেছে ৪৫ শতাংশের বেশি। কাঁচামাল আমদানিনির্ভর এসব খাতে আমদানি এলসি খুলতে না পারায় পণ্য উৎপাদন ও রফতানির ওপর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ডলার সঙ্কটের কারণে সরকার অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার একটা চেষ্টা করেছে। সেজন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানারকম কড়াকড়ি এসেছে, সেটলমেন্টও কমেছে। ফলে আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় এ খাত থেকে শুল্ক আয়ও কমেছে। এ অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক রয়েছে এবং শেষেও এটা নেতিবাচকই থাকবে বলে মনে হচ্ছে। সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন