নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মূল্যস্ফীতিসহ পাঁচ ধরনের চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৩ | ০১:০৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ | ০১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
মূল্যস্ফীতিসহ পাঁচ ধরনের চাপে বাংলাদেশের অর্থনীতি

মূল্যস্ফীতিসহ পাঁচ ধরনের চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এগুলো হলো প্রবাসী আয় কমে আসা, রপ্তানি আয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণ না হওয়া, রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং রাজস্ব আদায় কম হওয়া। এসব চাপ সামলাতে এখন থেকে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামীতে গর্তে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া আশঙ্কা আছে। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এবং সেন্টার ফর ডোমেস্টিক রিসোর্স মোবিলাইজেশনের (সিডিআরএম) যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আসন্ন বাজেটকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী বাজেটে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী ছাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও সিডিআরএ-এর পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক।

সংবাদ সম্মেলনে এমএ রাজ্জাক বলেন, দেশের কর জিডিপির হার অনেক কম। এক্ষেত্রে গত কয়েক মাসের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি বিবেচনায় পিআরআই-সিডিআরএম মনে করে এ অর্থবছর রাজস্ব আদায় ঘাটতি হতে পারে প্রায় ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে আইএমএফ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে সেখান থেকেও ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কম আদায় হতে পারে। এ রাজস্ব ঘাটতি উন্নয়নে পথে বাধা সৃষ্টি করবে। এ অবস্থায় এনবিআরকে মধ্যমেয়াদে সংস্কার নীতি বাস্তবায়ন করা দরকার। এছাড়া ভ্যাট আদায়ে ডিভাইস ব্যবহারসহ কর ছাড় দেওয়া হার কমাতে হবে। আগামী বাজেটে করজাল বাড়াতে হবে। আরও বলা হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সুদ পরিশোধের চাপ বাড়বে। যেমন বাজেট ঘাটতি পূরণে যে ঋণ নেওয়া হবে (দেশি ও বিদেশি) তা পরিশোধ করতে লাগবে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে বেতন ভাতা ও ভতুর্কিতেই যাবে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। এভাবে সুদসহ মোট ৩ লাখ কোটি টাকা চলে যাবে। এর মধ্যে এনবিআর রাজস্ব আদায় করবে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা দিয়ে অন্যসব কাজ করতে হবে। এ কারণে আগামীতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমছে। যেমন সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অংশে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জিডিপির তুলনায় বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমছে। তিনি আরও বলেন, বাজেট বৃদ্ধির হারও কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে বাড়বে ১২ শতাংশ। তাই আগামী বাজেটকে সংযত বাজেট বলা যায়। এটা বাস্তবতা বিবেচনায় ভালো হচ্ছে।

রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। সর্বশেষ হিসাব পর্যন্ত রিজার্ভ আছে ৩০ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এখন সেটি আইএমএফ-এর পরামর্শে সমন্বয় করা হলে ৭ বিলিয়ন ডলার কমে দাঁড়াতে পারে ২৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। এভাবে কমতে থাকলে আগামীতে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হতে পারে। এমনিতেই এখন আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আসা কমেছে। বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য এটি আমলাতান্ত্রিক সমাধান হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য ভালো নয়। রেমিট্যান্স বিষয়ে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে ৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স কম আসতে পারে। এর মূল কারণই হলো হুন্ডির মাধ্যমে টাকা দেশে আসা। কেননা চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে প্রায় ৯ লাখ মানুষ দেশের বাইরে গেছে। আগামী দুই মাসে যদি ২ লাখ লোক যায় তাহলে ১১ লাখ লোক হবে। এটি গত ২ বছরের চেয়ে বেশি হলেও রেমিট্যান্স কম আসছে হুন্ডির কারণেই। রপ্তানি আয় এ অর্থবছর সামান্য বাড়লেও তা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে কম হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। গত ১০ মাসে গত মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল। এটি আরও বাড়তে পারে। অর্থনৈতিক এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী অর্থবছর বাজেটে যেসব কার্যক্রম করা যেতে পারে সেগুলো হলো, রাজস্ব আদায়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব উদ্যোগ আছে সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। করজাল বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সম্পদশালী মানুষের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে কর আদায় করা যেতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গণহারে করছাড় দেওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। ভ্যাট সংস্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে ২০১২ সালের ভ্যাট আইনের সংস্কারকে কার্যকর করা যেতে পারে। সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ কমানো যেতে পারে। রাজস্ব আদায় এবং আদায় করা অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে গুণগতমান বাড়াতে হবে। সুপারিশে আরও বলা হয়, করজাল বাড়ানো গেলে আয়কর থেকে বাড়তে পারে ৯৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১২ সালের ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং স্বল্পমেয়াদে ভ্যাট সংস্কার করা গেলে রাজস্ব বাড়তে পারে ২৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যেসব করছাড় বাদ দিলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক হবে না সেগুলো বাদ দিলে আয় হতে পারে এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

ড. জাইদী ছাত্তার বলেন, কর বাড়ানো দরকার। কিন্তু ট্রেড টাস্ক যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কোনো মাসে কমতে পারে আবার বাড়তেও পারে। এটি নিয়ে একেবারেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। আমদানি নিয়ন্ত্রণ আমলাতান্ত্রিক হতে পারে। এটা সবসময়ের জন্য ঠিক নয়। রিজার্ভ কমতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এনবিআরের সংস্কার ছাড়া কিছুই হবে না। গত ২০ বছরে কোনো সংস্কার হয়নি। তাই বর্তমান প্রশাসন দিয়ে আইএমএফ-এর শর্ত মানা সম্ভব হবে না। এডিপির পুরোটাই ঋণনির্ভর। এখান থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজেটে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার ভুল স্বীকার করে সরে এলে খুব ভালো হবে। সরকারের বর্তমান উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং রিজার্ভ কমা বন্ধ হয়নি। তাই এখন শক্তিশালী একটি অর্থনৈতিক টিম গঠন করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। সূত্র : যুগান্তর

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন