বিশ্বজুড়েই চলছে অর্থনৈতিক শ্লথগতি, বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলোতে চলছে কর্মী ছাঁটাই। খুব শিগগিরই যে এ পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না—সে পূর্বাভাসই যেন দিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি চলতি বছর তিন শতাংশেরও কম হবে।আগামী পাঁচ বছর এই প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশের আশপাশেই থাকবে। যা ১৯৯০ সালের পর সবচেয়ে কম। খবর ইকোনোমিক টাইমস।
আগামী সপ্তাহে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ বৈঠকের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক বক্তৃতায় আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব কথা বলেন। জর্জিয়েভা জানান, গত বছরও ৩ দশমিক ৪ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল বিশ্ব অর্থনীতির। যেখানে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির হার ২০২১ সালে ছিল ৬.১ শতাংশ । বিশ্ব অর্থনীতির এই শ্লথগতির নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। একদিকে করোনা মহামারী যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। রয়েছে তেলের দাম বৃদ্ধি ও আমেরিকার মন্দাও।
আইএমএফ প্রধান আরো জানিয়েছেন, ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম এত কম আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। তার মধ্যে এশিয়া-আফ্রিকার দেশগুলোই পড়ে। আইএমএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মতে, ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মোট বৃদ্ধির অর্ধেকই হতে চলেছে ভারত ও চীনের সৌজন্যে। দুঃসময়ের মধ্যে এই দুই দেশ বিশ্ব অর্থনীতিকে গতি দিতে পারে বলে আশা তার। তবে ৯০ শতাংশ উন্নত অর্থনীতির দেশ এ বছর নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি হার দেখবে।
জর্জিয়েভা বলেন, করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলানো সম্ভব হলেও, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রবৃদ্ধির হার দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির ঝুঁকি যে বেড়ে গেছে, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতায় এ আর্থিক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, ঘুরে দাঁড়ানো শ্রমবাজার, ভোক্তা চাহিদা যথেষ্ট থাকা এবং চীনের উত্থান সত্ত্বেও আমরা ধারণা করছি এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের কম থাকবে।
তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য ঋণ শোধ করা এবং দুর্বল রফতানির কারণে মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি কমে আসবে। জর্জিয়েভা বলেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর উচ্চ ধারের খরচ এবং তাদের রফতানির চাহিদা হ্রাসের ফলে দ্বিগুণ ধাক্কার সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর প্রায় ১৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই ঋণসংকটে রয়েছে এবং আরো ৪৫ শতাংশ এর কাছাকাছি রয়েছে। তিনি এ অবস্থায় তাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য ধনী আইএমএফ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর পরামর্শ দেন জর্জিয়েভা। ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকির পাশাপাশি রিয়েল এস্টেটের মতো খাতের দুর্বলতা পর্যবেক্ষণ করারও পরামর্শ দেন আইএমএফ প্রধান।
বেলী / পরিচয়