নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে সুবাতাস

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০১:২৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ | ০১:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে সুবাতাস

ডলার সংকটে বেসামাল হয়ে উঠছে অর্থনীতি। করোনাকালেও বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশীয় দেশকে নিজেদের রিজার্ভ থেকে ঋণ দিয়েছে তাদের অর্থনৈতিক সংকট ঘোচাতে। করোনাভাইরাস ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে তার বিরূপ প্রভাবে ছায়াক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ বলেছে চলতি বছর বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশও সম্ভাব্য যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আশার কথা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইতিবাচক পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। দেশে গত বছর থেকে শুরু হওয়া ডলার সংকট এক পর্যায়ে প্রকট আকার ধারণ করলেও সুখবর হলো Ñ এ পরিস্থিতির মধ্যে চলতি বছরের শুরুতেই প্রবাসী আয় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জানুয়ারির ২০ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১০৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স প্রবাহ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুর দিকে কমলেও গত বছরের অক্টোবর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে, যা জানুয়ারি মাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গত ডিসেম্বর মাসে দেশে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার এবং অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

জানা গেছে, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছর ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রবাসীদের উদ্দেশে জানানো হয়, বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করুন, প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর জন্য এভাবে আহ্বান জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রবাসীদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, আপনাদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।

আরও জানায়, অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বিএফআইইউ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যেÑ বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান। রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজীকরণের পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ণ অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া। ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার। আগস্টে এসেছে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ওই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি ১ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ এবং ডিসেম্বরে ১৬৩ কোটি ৬ লাখ, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৪৪ লাখ, মার্চে ১৮৫ কোটি ৯৭ লাখ, এপ্রিলে ২০১ কোটি ৮ লাখ, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ এবং জুন মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৪ কোটি মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার। সারা বিশ্বের অর্থনীতি কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দ্রুতই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে—এই আশা অমূলক নয়। চলতি বছর দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলো সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খেলেও বাংলাদেশ রয়েছে অনেকটাই ভালো অবস্থানে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানি খাতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। গত নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৫০৯ কোটি ডলার। এটি গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ২৬.০১ শতাংশ বেশি। আগের মাসে তথা অক্টোবরে যা ছিল ৪৩৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার আরেক গুরুত্বপূর্ণ উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহও বেড়েছে। যেমন দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়, গত বছর নভেম্বর মাসে ১৫৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত বছরের নভেম্বরে ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। আগের মাসে অর্থাৎ অক্টোবরে এসেছিল ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন নিম্নমুখীর দিকে যাচ্ছিল ঠিক তখনই গুরুত্বপূর্ণ দুই খাত রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বেশ আশাবাদী করে তুলেছে। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট কনসালটিং ফার্ম বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক সমীক্ষামতে, আগামী এক-দুই দশকে এক ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে বাংলাদেশ। সরকার রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দিয়ে আসছে। এতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। অর্থনীতির জন্য এই বার্তা সুখকর। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।পরিচালক, এফবিসিসিআই ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন

শেয়ার করুন