নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে ১০ দেশে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া হয়

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩ | ০১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ | ০১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশসহ বিশ্বের যে ১০ দেশে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া হয়

গত ৫০ বছর ধরে সারা বিশ্বে মাংস খাওয়ার পরিমাণ খুব দ্রুত বেড়েছে। ১৯৬০-এর দশকে যত মাংস উৎপাদন করা হতো, বর্তমানে তার তুলনায় পাঁচগুণ বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। সারা বিশ্বে যখন মাংস খাওয়ার পরিমাণ এভাবে বাড়ছে, তখন মাংস খাওয়ায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এমনকি আফ্রিকার অনেক দারিদ্র্যপিড়ীত দেশ ও পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশিরা মাংস ভক্ষণে।

নানান পদের মাংস বিশ্বের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর খাদ্যতালিকার অপরিহার্য অংশ। এরপরেও কিছু দেশে মাংসের উৎপাদন ও খাদ্য হিসেবে গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কম। সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় বিশ্বাস, আর্থিক সংগতিসহ নানা বিষয় এতে ভূমিকা রাখছে।

গত ৫০ বছর ধরে সারা বিশ্বে মাংস খাওয়ার পরিমাণ খুব দ্রুত বেড়েছে। ১৯৬০-এর দশকে যত মাংস উৎপাদন করা হতো, বর্তমানে তার তুলনায় পাঁচগুণ বেশি উৎপাদিত হচ্ছে। ১৯৬০-এর দশকে ৭ কোটি টন মাংস উৎপাদিত হতো, ২০১৭ সালে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টনে।

সারা বিশ্বে যখন মাংস খাওয়ার পরিমাণ এভাবে বাড়ছে, তখন মাংস খাওয়ায় পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এমনকি আফ্রিকার অনেক দারিদ্র্যপিড়ীত দেশ ও পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশিরা মাংস ভক্ষণে।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যানুসারে, মাথাপিছু হারে মাংস খাওয়ার পরিমাণ কম, এমন দেশগুলোর তালিকায় এশিয়া থেকে আছে তিনটি দেশ। সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া এশীয় দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যথাক্রমে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান। আফ্রিকা মহাদেশের পাঁচ দেশ ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, তাঞ্জানিয়া, মোজাম্বিক ও ঘানাও রয়েছে এ তালিকায়। আর একমাত্র ক্যারিবীয় দেশ হিসেবে রয়েছে হাইতি। চলুন দেখে নেওয়া যাক সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকা।

১. ভারত: মাথাপিছু মাংস ভক্ষণ ৩ কেজি

জনসংখ্যায় সাম্প্রতিক সময়ে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারত। অথচ ১৪০ কোটির বেশি এই জনসংখ্যার দেশে মাথাপিছু মাংস খাওয়ার পরিমাণ বলতে গেলে ন্যূনতম বা বছরে মাত্র ৩ কেজি। গড় হিসাবে এর চেয়ে কম মাংস খাওয়া বিশ্বের আর কোনো দেশেই হয় না।

ধর্মীয় বিধিনিষেধ (বিশেষ করে গরুর ওপর) ও নিরামিষভোজীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়াসহ একাধিক কারণে ভারতে রান্নার মেনুতে মাংসের স্থান কম। দেশটিতে বছরে মাথাপিছু মুরগির মাংস খাওয়ার পরিমাণ ১.৮ কেজি। মাংসের মধ্যে মুরগিই ভারতে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়।

২. বাংলাদেশ: মাথাপিছু ৩.৪ কেজি

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল তালিকায় বাংলাদেশ আছে সপ্তম অবস্থানে। জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। বাংলাদেশিরা বছরে মাথাপিছু মাত্র ৩.৪ কেজি মাংস খেয়ে থাকে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই মাংস সবচেয়ে কম খাওয়া হয়। আর সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

দারিদ্র্য ও মাংস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞাসহ (বিশেষ করে ভারত থেকে) বেশ কিছু কারণে এখানে মাংস নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরুর মাংস বেশি জনপ্রিয় হলেও চড়া দামের কারণে এদেশে বছরে মাথাপিছু গরুর মাংস খাওয়ার পরিমাণ মাত্র ০.৯ কেজি। এ মাংসের অধিকাংশই খাওয়া হয় ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদের সময়।

বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি খায় পোল্ট্রি মুরগির মাংস। বছরে মাথাপিছু ১.৩৬ কেজি পোল্ট্রি মুরগির মাংস খায় এদেশের মানুষ। দাম নাগালের মধ্যে এদেশে অধিকাংশ মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস হলো মাছ।

৩. ইথিওপিয়া: মাথাপিছু ৪.৫৪ কেজি

আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ পশুসম্পদ থাকা সত্ত্বেও ইথিওপিয়ায় মাংস খাওয়ার হার খুবই কম। দেশটিতে মাথাপিছু মাত্র ৪.৫৪ কেজি মাংস খাওয়া হয়। উচ্চ দারিদ্র্যের হার ও নিম্ন ক্রয়ক্ষমতার কারণে দেশটির মানুষ মাংসের মতো মানসম্পন্ন খাবার কিনে খেতে পারে খুবই কম। ইথিওপিয়ায় গড়ে মাথাপিছু ২.৫৮ কেজি গরু ও বাছুরের মাংস খাওয়া হয়, আর মাথাপিছু মুরগি খাওয়ার পরিমাণ ০.৪৫ কেজির বেশি।

৪. নাইজেরিয়া: মাথাপিছু ৫.৯ কেজি

২২৫ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যা নিয়ে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়া। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির বিপরীতে স্থানীয় দুর্নীতি কারণে দেশটিতে এখনও দারিদ্র্য এখনও ব্যাপক পরিমাণে রয়েছে। নাইজেরিয়ায় বর্তমানে বছরে মাথাপিছু গড়ে মাত্র ৫.৯ কেজি মাংস খাওয়া হয়। এর মধ্যে গরু বাছুরের মাংস খাওয়ার পরিমাণ প্রায় ১.৮ কেজি, শূকরের মাংস ১.৩৬ কেজি এবং মুরগি খাওয়া হয় ১ কেজির কিছু কম।

৫. তাঞ্জানিয়া: মাথাপিছু ৭ কেজি

প্রায় ৬৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে আফ্রিকার পঞ্চম জনবহুল দেশ তাঞ্জানিয়া। এই দেশটি বিশ্বে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। তাঞ্জানিয়ানরা গড়ে মাথাপিছু মাত্র ৭ কেজি মাংস খায়, যা এই উদীয়মান মধ্যশক্তির আপেক্ষিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। কম খাওয়া হলেও দেশটিতে ৯৫ শতাংশ মাংসই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। তাঞ্জানিয়ায় মাথাপিছু গরু ও বাছুরের মাংস খাওয়া হয় প্রায় ৪ কেজি, আর হাঁস-মুরগি খাওয়া হয় মাথাপিছু ১.৮ কেজির মতো।

৬. মোজাম্বিক: মাথাপিছু ৭.২৬ কেজি

প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষিতে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ রয়ে গেছে। সে কারণে দেশটির মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কম। মোজাম্বিকের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক গড় মাংস খাওয়ার পরিমাণ মাত্র ৭.২৬ কেজি। মোজাম্বিকিয়ানরা যে মাংস খায়, তার বেশিরভাগই আমদানি করা হয়। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় শূকরের মাংস—মাথাপিছু প্রায় ৪.০৮ কেজি। আর হাঁস-মুরগি খাওয়া হয় মাথাপিছু প্রায় ১.১৮ কেজি।

৭. ঘানা: মাথাপিছু ৯.০৭ কেজি

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় মাথাপিছু মাংস খাওয়ায় পরিমাণ মাত্র ৯.০৭ কেজি। দেশটি সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় ৭ম স্থানে রয়েছে। দারিদ্র্যপীড়িত দেশটিতে গবাদিপশুর সংখ্যা খুব কম। ঘানায় খাওয়া মাংসের বেশিরভাগই বুরকিনা ফাসো বা ইউরোপ থেকে আমদানি করা হয়। আমদানি করা মাংসের দাম বেশি হওয়ায় ঘানার অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ এ খাবার খেতে পারে না। ঘানায় সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় হাঁস-মুরগির মাংস—৫ মাথাপিছু .৯৪ কেজি।

৮. ইন্দোনেশিয়া: মাথাপিছু ১২ কেজি

আরেকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া আছে সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় ৮ম স্থানে। ২৭৫ মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল দেশ। ইন্দোনেশিয়ায় মাথাপিছু মাংস ভক্ষণের পরিমাণ মাত্র ১২ কেজি। এদেশে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় হাঁস-মুরগির মাংস—মাথাপিছু ৭.২৬ কেজি। আর গরু, বাছুর ও শূকরের মাংস খাওয়া হয় মাথাপিছু ২.২৭ কেজি। দারিদ্র্যের কারণে গরু, হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য মাংস খুব বেশি খেতে পারে না ইন্দোনেশিয়ানরা।

৯. পাকিস্তান: মাথাপিছু ১২.৭ কেজি

দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান। পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হলেও পাকিস্তানের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ খাদ্য তালিকায় আমিষ থেকে বঞ্চিত। পাকিস্তানিরা মাথাপিছু গড়ে ১২.৭ কেজি মাংস খায়। এর মধ্যে গরুর মাংসের পরিমাণ মাথাপিছু প্রায় ৬.৩৫ কেজি।

১০. হাইতি: মাথাপিছু ১৩.৬ কেজি

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতি কয়েক দশক ধরে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, খাদ্য সংকট, সহিংসতা ও ব্যাপক দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছে। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই দেশটি সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া পশুসম্পদের সংখ্যা ও কৃষিকাজ কম হওয়ায় দেশটিতে মাংসের জন্য পশু লালন-পালন করা সহজ কাজ নয়।

১১.৪ মিলিয়ন মানুষের দেশ হাইতিতে মাথাপিছু প্রায় ১৩.৫ কেজি মাংস খাওয়া হয়। হাইতিয়ানরা যে পরিমাণ মাংস খায়, তার মধ্যে গরুর ও বাছুরের মাংসের পরিমাণ মাথাপিছু প্রায় ৩.৬ কেজি এবং হাঁস-মুরগির মাংস মাথাপিছু ৫.৯ কেজি। সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় যখন এশিয়া ও আফ্রিকার দেশের সংখ্যা বেশি, তেমনি সবচেয়ে বেশি মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় আধিপত্য করছে ধনী দেশগুলো। শীর্ষ মাংস খাওয়া দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন ইত্যাদি। – ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস ডটকম

শেয়ার করুন