গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত শুক্রবার (২২ মার্চ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া ও চীন। এসময় ওয়াশিংটনের দ্বিমুখী নীতি ইসরায়েলের ওপর কোনো চাপ তৈরি করছে না বলে অভিযোগ করেছে মস্কো। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ বাকি ১১টি সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।
রাশিয়া ও চীন প্রস্তাবটির ভোটাভুটিতে নিজেদের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এছাড়া আলজেরিয়া এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে এবং গায়ানা ভোটদানে বিরত ছিল।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ওয়াশিংটনকে উপহাস করে বলেন, গাজায় এতদিন ইসরাইলকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করেনি। অথচ তারা এমন সময় যুদ্ধবিরতির কথা বলছে যখন ‘গাজা কার্যত পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’।তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের একটি টিপিক্যাল ভণ্ডামি দেখছি।’
নেবেনজিয়া বলেছেন, প্রস্তাবটি ‘অত্যন্ত রাজনীতিকরণ’ করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে কার্যত গাজার রাফা শহরে অভিযান চালিয়ে যেতে ইসরায়েলকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে পুরো গাজা এবং এর সমস্ত জনগণকে ফের বিপর্যয়, ধ্বংসযজ্ঞ বা বাস্তুচূত্যির মুখে পড়তে হবে।’
অন্যদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়ায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই রেজুলেশন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান তিনি।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন ‘এই পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাশিয়া ও চীন তার ভেটো প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, তারা গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চায়। এর মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং সব ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে গাজায় জীবন বাঁচানো বিপুল ত্রাণ পৌঁছানো হবে।
তিনি রাশিয়া ও চীনকে ‘খামখেয়ালি’ এবং ‘তুচ্ছ’ কারণে প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি উত্থাপন করেছে, তারা শুধু এজন্য এর বিরোধিতা করেছে।
এছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর হামাসের হামলার নিন্দা না করায়ও তিনি এই দুই দেশের সমালোচনা করেছেন।
তিনি পরিষদকে বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, এসব জ্বালাময়ী বাগাড়ম্বর ছাড়া রাশিয়া ও চীন দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা বা মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টায় অর্থবহ অবদান রাখতে কূটনৈতিকভাবে কিছুই করছে না।’
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সঙ্গে গত ৭ অক্টোবর আটক জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসকেও চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত বুধবার সৌদি সংবাদমাধ্যম আল হাদাথকে বলেন, আমি মনে করি এই প্রস্তাব একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই ইসরায়েলের পাশে আছি। তাদের আত্মরক্ষার প্রতি আমাদের সম্মান আছে। গাজায় যে সব বেসামরিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এবং চরম দুর্দশায় আছেন তাদের প্রতিও আমাদের নজর দিতে হবে। তাদের সুরক্ষার বিষয়টা আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে। তারা যেন মানবিক সহায়তা পেতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।