নিউইয়র্ক     সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মরক্কোয় ভূমিকম্প

ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:০৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০১:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকারীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পার্বত্য গ্রামগুলোতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। দুর্গম হওয়ায় অনেক এলাকায় পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। অনেক স্থানে ভবনের ধ্বংসস্তূপে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। রেডক্রস বলছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠনে কয়েক বছর সময় লাগবে। মৃতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যাচ্ছে না।

গত শুক্রবার রাতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অ্যাটলাস পর্বতমালার ভূপৃষ্ঠের ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। শক্তিশালী ওই ভূমিকম্প সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী রাবাতসহ কাসাব্লাঙ্কা, এসাউইরাতেও অনুভূত হয়েছে।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১২ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে উৎপত্তিস্থলের কাছে তারাউডেন্ট প্রদেশের আলহাউস এলাকায়।

মারাক্কেশের বাসিন্দা ঘানৌ নাজেম বলেন, ‘আমি আধো ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ দরজা ও জানালার কাচ ভাঙতে শুরু করে। ভয়ে বাসার বাইরে চলে যাই। মনে হচ্ছিল, হয়তো মারাই যাব।’

ভূমিকম্প কেন্দ্রের কাছে থাকা পার্বত্য গ্রাম তাফেঘাঘট কার্যত মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। সেখানে কোনো ভবনই দাঁড়িয়ে নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা কাদামাটি দিয়ে নির্মিত ঘরে থাকেন। গ্রামটিতে মরক্কোর সেনা সদস্যরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। উদ্ধার হওয়া অধিকাংশই মৃত। ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা ৭২ বছরের ওমর বেনহান্না এএফপিকে বলেন, ‘আমার তিন নাতি-নাতনি ও তাদের মা মারা গেছে। তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে।’

মরক্কোর ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি। এক বিশেষজ্ঞ বলেন, গত ১২০ বছরের মধ্যে এটি ছিল দেশটিতে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিল ম্যাকগাইয়ার বলেন, মরক্কোয় ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প সচরাচর হয় না। এ কারণে ভবনগুলো খুব শক্তিশালীভাবে নির্মিত নয়। তাই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বেশি।

মরক্কো বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা কর্নেল হিচাম চৌকরি দুর্গত অঞ্চল থেকে বলেন, ভূমিকম্পের শক্তি এক ‘বিরল জরুরি পরিস্থিতি’র জন্ম দিয়েছে।

শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত কয়েকবার পরাঘাত হয়েছে। আলজাজিরা জানায়, সর্বশেষ পরাঘাতটি ছিল ৪ দশমিক ৫ মাত্রার। গতকাল রোববার ভোরে এটি আঘাত হানে মারাক্কেশে।

ভূমিকম্পে মরক্কোর পার্বত্য অঞ্চলে থাকা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ‘তিনমে’ মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মধ্যযুগে মাটি ও পাথর দিয়ে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

দুর্গতদের উদ্ধার তৎপরতায় বিভিন্ন দেশ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে স্পেন কুকুরসহ ৫৬ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে। তুরস্ক, ফ্রান্স ও ইসরায়েল প্রয়োজনে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।

এত মৃত্যুর জেরে মরক্কোজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বহু মানুষ এখনও রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে অবস্থান করছেন। মারাক্কেশের এক বাসিন্দা খাদিজা সাতৌ বলেন, এত শোক অবিশ্বাস্য! সূত্র : সমকাল

শেয়ার করুন