নিউইয়র্ক     সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্ট মার্টিন দিয়ে দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৩ | ০২:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৩ | ০২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সেন্ট মার্টিন দিয়ে দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‌সেন্ট মার্টিন দিয়ে দিলে ক্ষমতায় থাকতে অসুবিধা নেই, কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’ এ দ্বীপ বন্ধক রেখে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা কি দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। এ দেশের কোনো সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় আসতে পারতাম। আর এখন যদি বলি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কারো কাছে লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’

গত ২১ জুন বুধবার গণভবনে সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে দুই সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শেখ হাসিনা।

দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেয়া হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। আর আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে—এ ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি।’

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের যেহেতু ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র, তাই ইংল্যান্ডসহ ওইসব জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব আসে। তারা এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এ সম্পর্কে খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল—পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নাই।’

তিনি বলেন, ‘একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এ পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারা রাখেনি। সেটাকে আবার তারাই ফেরত চাচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতের রায় আছে, সে মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবেন, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতের জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতকেই আসতে হবে। এটা সবাই জানে। জানার পরও কেন সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কি? তার মানে এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। দেশ যে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা।’

এটা দেশবাসী কীভাবে নেবে সে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান। নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড়—সেগুলো চান। এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ যে বিএনপিসহ কিছু দল মাঠে নেমেছে তাদের অসুবিধা কোথায়? সমস্যাটা কী? মানুষ দুই বেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। এত মুদ্রাস্ফীতির পরও মানুষের খাবারের অভাব হচ্ছে না। হ্যাঁ একটু চাপে আছে মানুষ, সে কষ্টটা আমি বুঝি। তাই আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। মানুষের দুঃখ-কষ্টটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যতটা সহজ করা দরকার সেটা করে যাচ্ছি। আগে তো মানুষ খেতে পারত না।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগে যেখানে স্যান্ডেল জোড়া বগলদাবা করে মাটি দিয়ে হেঁটে যেতে হতো, এখন সেখানে হয় ভ্যানে যাচ্ছে, না হয় স্যান্ডেল পরে। মানুষের তো একজোড়া স্যান্ডেল ছিল না। এখন তো পাচ্ছে। কার জন্য পাচ্ছে? আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই সম্ভব। সাড়ে ১৪ বছর আমরা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন, অপপ্রচার মোকাবেলা করেই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সেটাই মানুষ চাইবে? নাকি আবার সেই সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরি, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে। সেটা জনগণের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি—তারা করুক, কী করবে।’

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় প্রার্থী হওয়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ থাকবে এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। কাকে প্রার্থী করা হবে, কাকে হবে না এ ব্যাপারে আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। একটা অবাধ নিরপেক্ষ স্বচ্ছ নির্বাচন হবে, এটা আমাদেরও দাবি। অনেকেই তো প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমি বেছে নেব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা নির্বাচন যখন হয় তখন আমরা প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা, প্রার্থীর সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা এসব বিবেচনা করি। সেখানে যদি আমরা নারীদের পাই, তাদের দেই। তখন একটা বিষয় এসে যায়, কে জয়ী হয়ে আসতে পারবে। আমাদের তো ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র। এখানে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সরকার গঠন করে। হিসাবটা ওখানে চলে যায়। আমাদের মেয়েরা যদি বেশি কাজ করে, কোনো এলাকায় যদি দেখি তারা ভালো, তখন তাদের প্রার্থী করি।’

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ শরণার্থী এসেছে, তার পরও তাদের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এরা যাতে ফেরত যায় তার চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুরোধ করছি। আমরা কিন্তু ঝগড়া বা যুদ্ধ করিনি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়, এ নীতিতে বিশ্বাস করি। তা মেনে চলব।’

বাজার সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সুযোগসন্ধানী কিছু লোক তো থাকেই। সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ থাকার পর যখন দাম বাড়ে, কিছু লোক মজুতদারি করে। ইচ্ছে করে মজুতদারি করে দাম বাড়ায়। যারা এভাবে মজুতদারি করে কালোবাজারি করার চেষ্টা করে। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নিচ্ছিও। আপনারাও (গণমাধ্যম) খুঁজে বের করে দেন। কোথায় কে মজুত করল। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ব্রিকসে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিকসে আমরা যোগ দেব এ কারণে যে, ব্রিকস যখন প্রথম থেকে প্রস্তুতি নেয় আমরা এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি। আমরা এখন চেয়েছি এটার মেম্বার হতে। আমরা চাচ্ছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর নির্ভরতা যেন না হয়। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গেও আমাদের বিনিময়ের সুযোগটা থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি। আমাদের দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেসব বিষয় বিবেচনা করে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যতটুকু সম্ভব আমরা এর সঙ্গে আছি।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা দেখব বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি। এরই মধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি। সে পদক্ষেপটাও আমরা এরই মধ্যে নিয়েছি। শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা নয়। নিজের অর্থে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিনিময়টা যেন করতে পারি। কেনা-বেচা যা লাগে করতে পারি। সেদিকে আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেয়ার আছে। যখন ভালোভাবে এটা কার্যকর হবে তখন দেখতে পারবেন।’

বিশ্বে অনেক মুদ্রার প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে তো অনেক ‍মুদ্রাই চলে। ডলারও যেমন চলছে, ইউরোপিয়ান দেশগুলো ইউরো দিয়ে চালায়। এ রকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে। যেখানে আমাদের সুবিধা হবে সেখানে সম্পৃক্ত হব। আমাদের জন্য যেটা কল্যাণকর হবে সেটা করব। একটার ওপর নির্ভরশীল থাকার যুগ আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। এটাই হলো বাস্তবতা। তবে সেটা এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। যদি হয় আমরাও আমাদেরটা বিবেচনা করব। তখন যেটা যেভাবে দরকার সেভাবে করব।’

শেয়ার করুন