নিউইয়র্ক     রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিকল্প কি নেই

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩ | ১১:০৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ | ১১:০৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিকল্প কি নেই

বিশ্বব্যাপীই বাঁচার সংগ্রামটা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তো রীতিমতো বিপজ্জনক। এর কারণ হলো পুঁজিবাদ তার অন্তিম দশায় পৌঁছে গিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টায় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় নৃশংস ও সর্বপ্রকার মানবিক বিবেচনা-বিবর্জিত হয়ে পড়েছে। পুঁজিবাদীদের আছে টাকা। টাকা তো আসলে তাদের হস্তমুষ্ঠিতেই থাকে। টাকা দিয়ে তারা নিজেদের পক্ষে মানুষকে টেনে নেয়, টাকার জোরে প্রতিবাদ-প্রতিরোধকামীদের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান নিরন্তর চালাতে থাকে, মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে। করোনাভাইরাসের মহামারি তৎপরতার সময়ে আমেরিকায় বহু মানুষ মারা গেছে। ব্যর্থতা সরকারের। সে দেশের সরকার তখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ট্রাম্প ও তার লোকেরা প্রচার করলেন ভাইরাসটি চীনারা সৃষ্টি করেছে; কভিড-১৯-এর জন্য চীনারাই দায়ী। প্রচারের জোরে গড়পড়তা আমেরিকানরা বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, মানুষ মরেছে তার জন্য সব দোষ চীনেরই; আমেরিকান সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই। ফলে দেখা গেল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পথেঘাটে, দোকানপাটে, যানবাহনে চীন দেশীয়রা তো বটেই, তাদের মতো দেখতে জাপানি ও কোরীয়রাও পাত্র হয়ে পড়ল ঘৃণার এবং ক্ষেত্র বিশেষে দৈহিক লাঞ্ছনার। নয়-এগারোর কথিত সময়েও একইভাবে মুসলমানবিদ্বেষকে তুঙ্গে তোলা হয়েছিল। সরকার নিরাপত্তা দিতে পারেনি। প্রচার করা হলো—সব দোষ মুসলমানদের। যাদের গাত্রে ও নামে মুসলমানত্বের চিহ্ন মাত্র আছে তারা পাত্র হলো বিদ্বেষের। দাড়ি-পাগড়ি থাকায় শিখরা পর্যন্ত বিব্রত হয়েছেন, যদিও মুসলমানদের সঙ্গে তাদের পার্থক্যই শুধু নয়, ঐতিহাসিক বিরোধও সত্য। নির্বাচনে হেরে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বার্তা প্রচার করলেন যে, জিতেছেন আসলে তিনিই; কিন্তু তার বিজয় ‘চুরি’ করে নেওয়া হয়েছে। টুইটার জানত যে, কথাটা সর্বৈব মিথ্যা, তাদের অন্যান্য বার্তাতেও সত্য খবরটি প্রচারিত হচ্ছিল; কিন্তু ক্ষমতার এমনই জোর যে, টুইটার ট্রাম্পের মিথ্যা কথাটা চালু হতে বাধা দিল না। পরিণতিতে ট্রাম্পপন্থিরা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় আইন ভবন আক্রমণ করে সেটিকে দখল করে নেওয়ার অভিযানে মত্ত হলো। ট্রাম্প সমর্থকরা জানে যে, ব্যক্তি হিসেবে ট্রাম্প অত্যন্ত অসৎ। সকাল-সন্ধ্যা তিনি মিথ্যা কথা বলেন, তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আমেরিকায় সবচেয়ে গর্হিত বলে চিহ্নিত যে অপরাধ—কর ফাঁকি দেওয়া, সে কাজে তার পরিপক্ব দুহাতকে তিনি নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করেছেন এবং ধরাও পড়েছেন; তার সমর্থকরা তবুও তাকে ত্যাগ করবে না। কারণ তারা জানে তাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেটির পরিপুষ্টির জন্য ট্রাম্পের মতো লোকই দরকার। ট্রাম্পের এই অনুসারীরা শ্বেত-বর্ণবাদী; তারা মনে করে আমেরিকা শ্বেতাঙ্গদেরই দেশ, সে দেশে অন্যরা সবাই বহিরাগত; আর ওই বহিরাগতদের ঘাড় ধরে বের করে দিতে হলে ট্রাম্পের মতো নেতাই চাই। তাই ট্রাম্প থাকুন বা না-ই থাকুন, ট্রাম্পইজম ঠিকই থাকবে। এক কথায় বলতে গেলে ট্রাম্পইজম হচ্ছে পুঁজিবাদের মার্কিনী সংস্করণ।

ট্রাম্পইজম শুধু যে উত্তর আমেরিকাতেই সীমাবদ্ধ, তা মোটেই নয়; অন্যত্রও তার বিলক্ষণ বিস্তার আছে। যেমন ব্রাজিলে। ব্রাজিলের দক্ষিণপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট করোনাভাইরাসকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন—এমন ভাব করেছিলেন। করোনা কিন্তু উড়ে যাওয়ার পাত্র নয়। অবজ্ঞার সুযোগ পেয়ে ব্রাজিলে সে হত্যাকাণ্ডের মচ্ছব ঘটিয়েছে। নির্বাচনে ওই দক্ষিণপন্থির জেতার কথা ছিল না; কিন্তু তার প্রচারযন্ত্রগুলো এতই দক্ষ ও সবল ছিল যে, তিনি হারলেন বটে; তবে অল্প ভোটে। এবং ট্রাম্পের মতোই নির্বাচনে হারলেও পরাজয় মানলেন না। বোঝা গেল এ ক্ষেত্রেও তিনি বিলকুল ট্রাম্পপন্থি। সন্দেহ দেখা দিয়েছিল যে, পরাজিত প্রেসিডেন্ট নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভার কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মত হবেন কি না। হস্তান্তর না করলে সুবিধা হবে না দেখে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছেন, তবে ট্রাম্প-পন্থা থেকে বিচ্যুত হননি। ট্রাম্প যেমন করেছিলেন অনেকটা সেভাবেই ব্রাজিলের পরাজিত প্রেসিডেন্টও তার অনুগতদের পাঠিয়েছিলেন সংসদ ভবন দখল করে নিতে, পারলে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচনের ফল উল্টে দিতে। পারেননি। তবে ট্রাম্পইজম যে মরে গেছে তা নয়। ট্রাম্প না থাকতে পারেন; কিন্তু তার অবলম্বিত নীতি ও আদর্শ বেঁচে থাকবে ঠিকই, যতদিন না পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিদায় হচ্ছে এই পৃথিবীর বুক থেকে।

পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধ বাধাতে ওস্তাদ। যুদ্ধে মানুষ মারা যায়, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য প্রবল হয়; কিন্তু পুঁজিওয়ালাদের অসুবিধা হবে কি, তাদের পক্ষে উৎফুল্ল হওয়ার কারণ ঘটে। ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়া ও আমেরিকার যে যুদ্ধ চলছে, তাতে ইউক্রেনবাসীর যে দুঃখ-কষ্ট তার সীমা-পরিসীমা নেই; কিন্তু যুদ্ধ থামছে না, কারণ রাশিয়া চাচ্ছে তার কথিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখবে এবং সেই ফাঁকে ক্রিমিয়ার একটা অংশ নিজের দখলে নিয়ে নেবে। আর আমেরিকা চাচ্ছে রাশিয়াকে শুধু যে কোণঠাসা করবে তা-ই নয়, নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রসারিত করবে। ইউক্রেন তো বটেই, ইউরোপজুড়ে তাদের ব্যবসা চলবে, বিশেষভাবে চলবে অস্ত্র ব্যবসা। পুরোনো অস্ত্রগুলো বিক্রি হয়ে যাবে, নতুন অস্ত্রের উদ্ভাবন ও বিক্রয় দুটিই বৃদ্ধি পাবে। শুধু অস্ত্র ব্যবসায়ী কেন, তেল-গ্যাস ব্যবসায়ীদের কি কিছু কম ব্যবসা হয়েছে? ব্রিটেনের শেল কোম্পানি গত বছর তেল ও গ্যাসের ব্যবসা করে যতটা মুনাফা করেছে, কোম্পানি তার ১৫০ বছরের ইতিহাসে অমন মুনাফা চোখে দেখেনি। গত বছরে তাদের মুনাফা আগের বছরের মুনাফার তুলনায় দ্বিগুণ দাঁড়িয়েছে, যে মুনাফার কারণে শীতে জবুথবু হয়ে কেঁপেছে ইউরোপ। জ্বালানির দাম বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। আবার ওই সময়ে খোদ ব্রিটেনে যে অভূতপূর্ব মন্দা দেখা দিয়েছিল, তাতে হাজার হাজার মানুষ কাজ হারিয়েছে। হাসপাতালের নিরুপায় নার্সরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে গেছে, অ্যাম্বুলেন্সের চালকরাও যোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে। ব্রিটেনের বহু প্রশংসিত চিকিৎসাব্যবস্থা এখন ভেঙে পড়ার দশায়।

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। জনগণ তাদের পক্ষে নয়, বিরুদ্ধে। নির্বাচনে তারা ভোট দিয়েছিল অং সান সু চির পক্ষে। তিনি এখন জেলে। শুধু জেলে নন, তার বিরুদ্ধে এমন সব কৌতুককর অভিযোগে একের পর এক মামলা আনা হচ্ছে, যাতে ধরেই নেওয়া যায় যে, সামরিক জান্তা যতদিন ক্ষমতায় আছে ততদিন তিনি জেলেই বসবাস করবেন। আর জান্তা যে সহসা প্রস্থান করবে, এমনটাও মনে হচ্ছে না। কারণ, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ যতই জান্তাবিরোধী হোক না কেন—চীন, রাশিয়া, ভারতের পুঁজিবাদী স্বার্থ জান্তা শাসনে বেশ সুবিধাতেই আছে।

পুঁজিবাদের দাপটে বিশ্বের নানা দেশে রক্ষণশীলরা ক্ষমতায় বসে গেছে। এবং মানুষের ওপর অত্যাচার বৃদ্ধি করেই চলেছে। ইসরায়েলের নেতানিয়াহু সরকার যে দুর্নীতিতে পারঙ্গম, সেটা সেখানকার মানুষ খুব ভালোভাবেই জানে, কিছু কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে বিক্ষোভ জানায় না তাও নয়; কিন্তু সরকার তো মহাআনন্দে প্রতিদিন অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর অস্ত্র দাগছে। হত্যা করছে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব চুপ করে বসে আছে। ন্যায়-অন্যায়ের লড়াইতে চুপ করে থাকা মানেই তো অন্যায়কে সমর্থন দেওয়া। আরব বিশ্বও আত্মীয়দের মরণাদশা দেখে কাতর হবে কী—কেউ কেউ তো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে অর্থাৎ ইসরায়েলকে সমর্থনই দিচ্ছে। আরব বসন্ত একদা যে নতুন হাওয়া আনবে মনে হয়েছিল সে-হাওয়া হারিয়ে গেছে তপ্ত মরুভূমিতে। ওদিকে ইরাক ছারখার, ইরান বিপন্ন।

চরম দক্ষিণপন্থি তালেবানরা আবার আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে। আর তাদের তুলনাতেও যারা কট্টরপন্থি ও হন্তারক সেই ইসলামিক স্টেট তালেবান শাসনেও সন্তুষ্ট নয়, তারা আরও ‘উন্নত’ ও মূর্ত ইসলামী শাসন চায় এবং সেটা কায়েম করার লক্ষ্যে মানুষ হত্যার আয়োজন করে থাকে। তালেবানদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে, সেটা থাকা খুবই স্বাভাবিক, তবে তুলনামূলকভাবে যারা গরম, কর্তৃত্বের দড়ি যে তাদের হাতেই সেটা টের পাওয়া যায় নারী শিক্ষার প্রতি সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি দেখলে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের জন্য শিক্ষা এরই মধ্যে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে, এমনকি মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও পারবে না—এমন কানুন জারি করা হয়েছে। মেয়েরা বসে থাকেনি, তারা প্রতিবাদ করেছে, তাদের সঙ্গে ছেলেরাও যোগ দিয়েছে ভীতি উপেক্ষা করে। মানববন্ধন হয়েছে, তার ফেস্টুনে লেখা হয়েছে ‘ইকরা’, যার অর্থ পড়ো এবং স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে আল্লাহতায়ালা রাসুলের কাছে যে বাণী পাঠিয়েছিলেন তাতে প্রথম কথাটাই ছিল ওই ‘পড়ো’; কিন্তু এসব যুক্তিতে কানপাতার পাত্র নয় কট্টরপন্থি তালেবানরা। তাদের মতে, ইসলাম সম্পর্কে তারা যা বলবে সেটাই ঠিক। ইসলামের নবী যে জ্ঞানের সন্ধানে প্রয়োজনে চীনে যাও (চীন তখন দূরবর্তী ও অতিদুর্গম স্থান) বলে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, তাও তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশে অক্ষম বৈকি। ইসলাম ধর্ম তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থানে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল সেই ঐতিহাসিক সত্যে এরা অবিশ্বাসী। তালেবানরা একসময়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল পাকিস্তানি শাসকদের; ওই রাষ্ট্রের বর্তমান শাসকরা টের পাচ্ছে কোন ভয়ংকর শক্তিকে তারা প্রশ্রয় দিয়েছিল। তবে পাকিস্তানের শাসকরাও তো পুঁজিবাদী; যেমন আরও পুঁজিবাদী হচ্ছে তাদের এককালীন মিত্র এবং আপাতত শত্রু আমেরিকানরা।

বসন্তের হাওয়া নয়, বিপ্লবের ঝড়ই বয়ে গিয়েছিল ইরানের ওপর দিয়ে। তাতে বাদশাহতন্ত্রের পতন ঘটেছে। ইরানের তেলসম্পদের ওপর জাতীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাহি শাসনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে সমাজতন্ত্রীরা ছিল, যেমন ছিল ধর্মীয় মৌলবাদীরাও; কিন্তু সমাজতন্ত্রীরা ছিল বিভক্ত; মৌলবাদীদের ভেতর এক ধরনের ঐক্য কায়েম ছিল। রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে গেল ওই ধর্মীয় মৌলবাদীরা, সমাজতন্ত্রীরা বিতাড়িত হলো, অনেকে প্রাণও হারাল। রাষ্ট্রীয় বিপ্লব ছিনতাই হয়ে গেল, ফলে প্রয়োজনীয় ও প্রত্যাশিত প্রগতিমুখী সমাজবিপ্লবটি আর ঘটল না। মৌলবাদীরা বিশেষভাবে হস্তক্ষেপ করল মেয়েদের স্বাধীনতার ওপর। সাংস্কৃতিকভাবে ইরান যে প্রাচীন তা নয়, অনেক উন্নত এবং ছিল সম্পদশালীও। ইরানিরা আরবদের কাছ থেকে ধর্ম নিয়েছে; কিন্তু ভাষা নেয়নি। ফারসি শুধু ইরানেরই নয়, ছিল আরও কয়েকটি দেশের রাজকীয় ভাষা। অগ্রসর সেই সমাজে মেয়েদের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার যে চেষ্টা মৌলবাদীরা শুরু করল, সেটা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সেখানে নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে বিশেষ বাহিনী কাজ করছে, তারা মেয়েদের জামাকাপড়ের ‘শালীনতা’ ঠিকঠাক আছে কি না সেটা বিশেষভাবে লক্ষ্য করে থাকে। একটি কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে বিপণিকেন্দ্রে গিয়েছিল; তার মাথার কাপড় ঠিক ছিল না, এ অপরাধে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়, আটকে রাখে এবং আটক অবস্থাতে তার মৃত্যু ঘটে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথমে তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ পায় এবং পরে বিক্ষোভ শুরু হয়। মেয়েরা প্রতিবাদ করে। প্রগতিপন্থি পুরুষরাও যোগ দেয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিন্তু অনড়। তারা ‘নৈতিকতা’ রক্ষা করবেই, কোনো প্রকার ছাড় দেবে না। ফলে গুলিবর্ষণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। কয়েকদিন আগ পর্যন্ত প্রাপ্ত সংবাদে প্রকাশ দমনচেষ্টায় ৫০০ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬৯ জন শিশুও রয়েছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণের দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

ধর্মীয় মৌলবাদী ও পুঁজিবাদীদের ভেতর বিস্তর ব্যবধান। একদল প্রাচীনপন্থি, অন্যদল আধুনিক; কিন্তু তাদের মধ্যে চমৎকার মিল রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আস্থার ব্যাপারে। এই আস্থা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রকাশিত হয়, প্রকাশ দেখা যায় মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতেও; উভয় দলই মেয়েদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলেই ধরে নেয়। তাই দেখা যায় মৌলবাদীদের শাসনে নারীর অধিকার সীমিত করে ফেলা হয়, পারলে তাদের অস্তিত্বকেই ঢেকে রাখার চেষ্টা চলে আবরণ দিয়ে; অন্যদিকে পুঁজিবাদী আধুনিকরা মেয়েদের পোশাক দেয় ছোটখাটো করে; কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না নারী-ধর্ষণ। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দৈনিক কালবেলা-র সৌজন্যে

শেয়ার করুন